ভূঁইয়া নজরুল »
কাপাসগোলা মোড় ও চকবাজার তেলিপট্টি মোড়ের মাঝামাঝি নবাব হোটেলের পাশে কাপাসগোলা ব্রিজ রয়েছে। হিজরা খালের উপর প্রায় পাঁচ বছর আগে নির্মিত ব্রিজের নিচে মাত্র এক ফুট জায়গা খালি আছে। আট থেকে নয় ফুট গভীর খালের পুরোটাই ভরাট।
নবাব হোটেলের মিজানুর রহমান বলেন, ‘প্রায় পাঁচ বছর আগে নির্মিত ব্রিজের নিচের শাটারিং পরিষ্কার করা হয়নি। ধীরে ধীরে ওই শাটারিংয়ে আবর্জনা জমতে জমতে ব্রিজের নিচে খালটি ভরাট হয়ে গেছে। এখন বৃষ্টি হওয়ার ১০ মিনিটের মধ্যে কাতালগঞ্জ আবাসিক এলাকা, পাঁচলাইশ আবাসিক এলাকা, চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল এলাকাসহ আশপাশের এলাকায় পানি জমে যায়।’
শাটারিং থেকে যাওয়ার ঘটনা শুধু কাপাসগোলা ব্রিজ নয়, কয়েক বছর আগে নির্মাণ শেষ হওয়া চকবাজার ধুনিরপুল ব্রিজের শাটার খোলা হয়েছে কয়েকদিন আগে। একইভাবে পাঠানিয়া গোদা ব্রিজের নিচের শাটারিং ( বাঁশ, বল্লি ও অন্যান্য নির্মাণ সামগ্রী) অপসারণ করা হয়েছে কয়েকদিন আগে। সবগুলোই সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ারিং কোরের পক্ষ থেকে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনকে চিঠি দেয়ার পর পরিষ্কার করা হয়েছে। তবে এখনো অনেক খালের ব্রিজের নিচে এধরেনর নির্মাণ সামগ্রী রয়ে গেছে।
গতকাল দুপুরে বহদ্দারহাট ফ্লাইওভারের ( টার্মিনালমুখী র্যাম্পের) নিচে ফরিদের পাড়া দিক থেকে আসা খালের সাথে ডোমখালী খালের সংযোগ ব্রিজের নিচে সাটারিংয়ের বাঁশ ও খুঁটি দেখতে পাওয়া যায়। ব্রিজের পাশের পুষ্পমেলা ফুলের দোকান এবং আশপাশের ব্যবসায়ীরা জানান, ব্রিজের নিচের এসব শাটারিংয়ের কারণে খালটি প্রায় ভরাট হয়ে গেছে। বৃষ্টি হলে ফরিদের পাড়া (পানি উন্নয়ন বোর্ডের অফিসের দিক থেকে) পানি এদিকে আসতে পারে না। এতে ওই পাশ জলমগ্ন হয়ে যায়।
ব্রিজের নিচের শাটারিং থাকা প্রসঙ্গে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার মোহাম্মদ রতন গতকাল দুপুরে শাটারিং দেখিয়ে বলেন, ‘ ব্রিজের দুটি পার্ট। পশ্চিম দিকের অংশটির কাজ আগে শেষ হয়েছে। পূর্ব দিকের অংশটি কিছুদিন আগে ঢালাই হয়েছে। তাই শাটারিং রয়ে গেছে।’
তবে স্থানীয়রা জানান, পুরো ব্রিজের নিচেই শাটারিং রয়েছে। আর একারণে পুরোদমে পানি আসতে পারে না। একই মন্তব্য করেন জলাবদ্ধতা নিরসন মেগাপ্রকল্পের সেনাবাহিনীর প্রকল্প পরিচালক লে. কর্নেল মো. শাহ্ আলী। তিনি বলেন, ‘এভাবে নগরীর অনেক খালের ব্রিজের নিচে শাটারিং ও নির্মাণ সামগ্রী রয়েছে। সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে ব্রিজ নির্মাণের পর এসব শাটারিং সঠিক সময়ে না সরানোয় ধীরে ধীরে ময়লা জমে ভরাট হয়ে গেছে। এতে বৃষ্টি হলেই পানি আটকে যাচ্ছে।’
এবিষয়ে কথা হয় চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলামের সাথে। তিনি বলেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ে সিটি কর্পোরেশন কোনো ব্রিজ নির্মাণ করেনি। তবে এটা সঠিক যে ব্রিজের নিচে সঠিকভাবে পরিষ্কার করা হয় না। আর জলাবদ্ধতা প্রকল্পের আওতায় ব্রিজের নিচের এসব প্রতিবন্ধকতা দূর করার কথা। তারপরও যেখানে আমাদের সুযোগ রয়েছে তা আমরা পরিষ্কার করে দিচ্ছি।’
নগরীতে বৃষ্টি হলেই পানি জমে। তিন ঘণ্টায় মাত্র ১১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হলেও পানি জমছে। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী বর্ষা শুরুর আগ থেকেই বলে আসছিলেন খালের বাঁধ কেটে দিতে এবং খালের মধ্যখান থেকে মাটি অপসারণ করতে। একইসাথে স্লুইস গেটের মুখ খুলে দেওয়ার কথা বলে আসছিলেন তিনি। কিন্তু জলাবদ্ধতা নিরসন মেগাপ্রকল্পের আওতায় এগুলো যথাসময়ে অপসারণ না হওয়ায় জলাবদ্ধতা হচ্ছে। এবিষয়ে সেনাবাহিনীর প্রকল্প পরিচালক লে. কর্নেল মো. শাহ্ আলী বলেন, ‘আমরা খালের সকল বাঁধ অপসারণ করে দিয়েছি। ইতিমধ্যে আমাদের খালের সাথে সিডিএ’র চাক্তাই থেকে কালুরঘাট প্রকল্পের আওতায় নির্মিত স্লুইস গেটের বাইপাস কেটে চওড়া করে দেওয়া হয়েছে। এতে পানি দ্রুত নেমে যাবে।’
তিনি আরো বলেন, এছাড়া নগরীর যেসব পয়েন্টে পানি আটকে যাওয়ার ঘটনা ঘটছে সেগুলো আমরা এবং সিটি কর্পোরেশন সমন্বয়ের মাধ্যমে সমাধান করার চেষ্টা করছি। আশা করছি পানি দ্রুত নেমে যেতে পারবে।
উল্লেখ্য, বর্ষা মৌসুম শুরু না হতেই নগরী জলমগ্ন হয়েছে কয়েক দফায়। জুলাই ও আগস্ট মাস দেশের সবচেয়ে বৃষ্টিবহুল মাস। এমাসে স্বাভাবিক বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। আর তা হলে জুনের মতো জুলাই মাসেও নগরীর বিভিন্ন এলাকা জলমগ্ন হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। নগরীতে জলাবদ্ধতা নিরসনে ৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকার প্রকল্পটির বাস্তবায়ন চলছে। গত জুনে প্রকল্পটির মেয়াদ শেষ হলেও আরো এক বছর বাড়ানো হয়েছে।