শারদীয় দুর্গোৎসবের
রুমন ভট্টাচার্য
হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গোৎসব গতকাল বুধবার বোধনের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়েছে। সাধারণত আশ্বিনের শুক্লপক্ষের ষষ্ঠ দিন অর্থাৎ ষষ্ঠী থেকে দশম দিন অর্থাৎ দশমী অবধি পাঁচদিনব্যাপী শারদীয় দুর্গোৎসব অনুষ্ঠিত হয়। আজ শারদীয় দুর্গোৎসবের মহাষষ্ঠী। দুর্গাপূজা মূলত পাঁচদিনের অনুষ্ঠান হলেও শুভ মহালয়া থেকেই প্রকৃত উৎসবের সূচনা হয়। কোজাগরী লক্ষ্মীপূজায় হয় সমাপ্তি। গত ১৭ সেপ্টেম্বর মহালয়া অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেই থেকেই শুরু হয়েছে দুর্গাপূজার সময় ও ক্ষণ গণনা। মলমাসের কারণে এবার মহালয়ার ৩৫ দিনপর অনুষ্ঠিত হচ্ছে পূজা।
পঞ্জিকামতে, আজ ষষ্ঠী তিথি সকাল ৯টা ৫৭ মিনিটের মধ্যে দুর্গাদেবীর ষষ্ঠ্যাদি কল্পারম্ভ এবং ষষ্ঠী বিহিত পূজা প্রশস্তা। সন্ধ্যায় দেবীর আমন্ত্রণ ও অধিবাস।
বোধন অর্থ দেবীকে জাগ্রত করে আহ্বান করা। বোধনে খুলে যায় দেবী দুর্গার আয়ত চোখের পলক। অসুর বধে চক্র, গদা, তীর-ধনুক, খড়গ-কৃপাণ-ত্রিশুল হাতে দেবী হেসে উঠেন। ধূপের ধোঁয়ায় গতকাল সন্ধ্যায় কাঁসর ও ঢাক-ঢোলের বাজনা আর পুরোহিতদের ভক্তিকণ্ঠে ধ্বনিত হয়-‘যা দেবী সর্বভূতেষু মাতৃরূপেন সংস্থিতা, নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নম নম:’…’।
এবার কৈলাস ছেড়ে দেবী দুর্গা পিতৃগৃহে আসবেন দোলায় চড়ে (পালকি) এবং আগামী সোমবার বিজয়া দশমীতে ফিরবেন গজে (হাতি)। তাঁর সঙ্গে আসবেন লক্ষ্মী, সরস্বতী, কার্তিক ও গণেশ।
দেবীর দোলায় আগমনের ফল-দোলায়াং মড়কং ভবেৎ। অর্থাৎ দেবী দুর্গা দোলায় আগমনের কারণে দেখা দেবে মড়ক এবং গজে গমনের ফল-গজে চ জলদা দেবী শস্যপূর্ণ বসুন্ধরা। অর্থাৎ গজে গমনে শস্য ফলন ভালো হয়।
দেবীর আগমন ও গমনের ব্যাপারে শাস্ত্রে বলা হয়েছে-‘রবৌ চন্দ্রে গজারূঢ়া, ঘোটকে শনি ভৌময়োঃ, গুরৌ শুক্রে চ দোলায়াং নৌকায়াং বুধবাসরে।‘ সপ্তমীর দিনে যদি রোববার এবং সোমবার হয়, তাহলে দুর্গার আগমন ও গমন হবে গজে। ফল-‘গজে চ জলদা দেবী শস্যপূর্ণা বসুন্ধরা’। ঠিক এই রকমই শনিবার ও মঙ্গলবারে দুর্গার আগমন ও গমন হলে, ঘোটকের প্রভাব থাকবে। যদি বুধবারে দেবী দুর্গার আগমন ও গমন হয়, তাহলে তিনি আসবেন এবং যাবেন নৌকায়। ফল-‘শস্যবৃদ্ধিস্তুথাজলম’। আবার দুর্গার আগমন ও গমন যদি বৃহস্পতি ও শুক্রবারে হয় তাহলে তিনি দোলায় আসবেন এবং যাবেন। ফল-‘দোলায়াং মরকং ভবেৎ’।
এদিকে, চট্টগ্রাম মহানগর পূজা উদ্যাপন পরিষদের উদ্যোগে ঐতিহ্যবাহী জেএম সেন হলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে পাঁচদিনব্যাপী বিভিন্ন মাঙ্গলিক কর্মসূচির মধ্যদিয়ে শারদীয় দুর্গাপূজা আজ ২২ অক্টোবর বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হবে।
কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে আজ মহাষষ্ঠীতে চিত্রাংকন প্রতিযোগিতা, প্রতিমা মঞ্চের আবরণ উন্মোচন ও সন্ধ্যারতি, মায়ের আমন্ত্রন ও অধিবাস। আগামীকাল মহাসপ্তমীতে সপ্তমী বিহিত পূজা, পুষ্পাঞ্জলি, জাগরণ পুঁথিপাঠ, বস্ত্র বিতরণ, সন্ধ্যারতি। পরদিন মহাঅষ্টমীতে অষ্টমী বিহিত পূজা, সন্ধি পূজা, পুষ্পাঞ্জলি, অনাথালয়ে খাবার বিতরণ, জাগরণ পুঁথি পাঠ, সন্ধ্যারতি।
রোববার মহানবমীতে নবমী বিহিত পূজা, যজ্ঞানুষ্ঠান, পুষ্পাঞ্জলি, বৈশ্বিক মহামারী করোনা থেকে মুক্তিলাভে সমবেত প্রার্থনা সভা, জাগরণ পুঁথিপাঠ, পুরস্কার বিতরণ, সন্ধ্যারতি। সোমবার বিজয়া দশমীতে দশমী বিহিত পূজা ও দর্পণ বিসর্জন, পুষ্পাঞ্জলি, ঘট গৃহে প্রবেশ, পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে নিরঞ্জন অনুষ্ঠান ও শ্রীশ্রী চ-ীপাঠ।
উক্ত মাঙ্গলিক কর্মসূচির প্রতিটি পর্বে জাতি-ধর্ম-নির্বিশেষে সকলের উপস্থিতি কামনা করেছেন পরিষদের সভাপতি অ্যাডভোকেট চন্দন তালুকদার ও সাধারণ সম্পাদক শ্রীপ্রকাশ দাশ অসিত।