৩৯ বছর কোমায় থেকে নীরবেই চলে গেলেন ফ্রান্সের ফুটবলার

সুপ্রভাত ক্রীড়া ডেস্ক »

একটি-দুটি বছর নয়, ৩৯টি বছর চেতনাহীনভাবে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়েছেন জ্যাঁ-পিয়ের আদাম। বেহেনাদেত অবিশ্বাস্য ভালোবাসায় আগলে রেখেছিলেন স্বামীকে। ক্লান্তিহীনভাবে লড়ে গেছেন তিনিও। কিন্তু এত লড়াই, প্রচেষ্টা, প্রার্থনা- শেষ পর্যন্ত সবই বিফলে গেল। কোমার মধ্যে থেকেই এই ফুটবলার চলে গেলেন চিরঘুমের দেশে।
দীর্ঘ ৩৯ বছর কোমায় থেকে ৭৩ বছর বয়সে সোমবার মারা গেছেন ফ্রান্সের সাবেক এই ফুটবলার। হাঁটুর চোট নিয়ে প্রায় চার দশক আগে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন তিনি। অস্ত্রোপচারের সময় অ্যানেসথেসিয়া (চেতনানাশক) দেওয়ার ক্ষেত্রে ত্রুটির কারণে আর জ্ঞান ফেরেনি তার।
সেনেগালে জন্ম নেওয়া আদাম ১৯৭২ থেকে ১৯৭৬ পর্যন্ত ফ্রান্সের হয়ে খেলেছেন ২২ ম্যাচ। ফরাসি ক্লাব নিমের হয়ে ম্যাচ খেলেছেন তিনি ১৪০টির বেশি। খেলেছেন পিএসজির জার্সিতেও। দুটি ক্লাবই তার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছে।
নিম জানিয়েছে, আগামী ১৯ সেপ্টেম্বর মোনাকোর বিপক্ষে ম্যাচের আগে আদামের প্রতি আন্তরিক শ্রদ্ধা এবং তার পরিবার ও ঘণিষ্ঠজনদের প্রতি সমবেদনা জানাবে তারা।
অনুশীলন ক্যাম্পে হাঁটুতে পাওয়া চোট নিয়ে ১৯৮২ সালের মার্চে লিঁওর একটি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন আদাম। সেখানে তখন চলছিল কর্মীদের ধর্মঘট। তারপরও তার অস্ত্রোপচার শুরু হয়।
সেখানে আদামসহ আরও আট জন রোগীর দায়িত্বে ছিলেন কেবল একজন অ্যানেসথেটিস্ট। আদামকে পর্যবেক্ষণের দায়িত্বে ছিলেন আরেক শিক্ষানবিশ স্বাস্থ্যকর্মী।
অ্যানেসথেটিস্ট ও শিক্ষানবিশ স্বাস্থ্যকর্মীর অসংখ্য ভুলের মাশুল দিতে হয় আদামকে। তার কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট ও মস্তিষ্ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পরে ওই শিক্ষানবিশ স্বাস্থ্যকর্মী বলেছিলেন, “আমাকে দেওয়া কাজটি আমি ঠিকঠাক করতে পারিনি।”
গত শতকের নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি শাস্তি হয় ওই অ্যানেসথেটিস্ট ও শিক্ষানবিশ স্বাস্থ্যকর্মীর। এক মাসের স্থগিত নিষেধাজ্ঞা ও ৭৫০ ইউরো জরিমানা হয় তাদের।
অস্ত্রোপচারের ১৫ মাস পর আদামকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়। তখন থেকে নিমে নিজ বাড়িতে তার দেখাশোনা করছিলেন স্ত্রী বেহনাদেত।
আদামের প্রতি বেহনাদেতের ভালোবাসা অসাধারণ এক দৃষ্টান্ত। তাকে অসাধারণ একজন নারী বললেও যেন কম বলা হয়। বছরের পর বছর পেরিয়ে গেছে, তারপরও এমন অসাড় পড়ে থাকা স্বামীর লাইফ সাপোর্ট একবারও বন্ধ করার কথা ভাবেননি তিনি। অনুক্ষণ আদামের লড়াইয়ে পাশে ছিলেন বেহনাদেত।
চার দশক ধরে প্রায় প্রতিদিনই আদামের যত্ন নিতেন। স্বামীর পোশাক পরিবর্তন, খাবার প্রস্তুত করাসহ তাকে উপহার দিতেও ভুলে যাননি। এমনকি প্রায়ই তার সঙ্গে কথাও বলতেন।
স্বাভাবিকভাবেই কোনো জবাব পেতেন না। দারুণ প্রতিভাবান এক ফুটবলার ছিলেন আদাম। তার ফুটবল দক্ষতার প্রশংসা করেছিলেন জার্মানির কিংবদন্তি ফুটবলার ফ্রাঞ্জ বেকেনবাওয়ার।
বিবিসি স্পোর্টের আফ্রিকা প্রতিনিধি পিয়ের্স এডওয়ার্ডস স্মৃতিচারণ করে জানান, ২০১৬ সালে তিনি ফ্রান্সে আদামের বাড়িতে গিয়েছিলেন। তখন আদামের স্ত্রী তাকে জানিয়েছিলেন, যে দুর্ঘটনা একদিনের জন্যও তিনি ভুলতে পারেননি তার জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কখনোই ক্ষমা চায়নি।