চবি চারুকলা ইনস্টিটিউট
পরীক্ষায় অংশ নেয়ার অনুমতি পাননি ৪ শিক্ষার্থী
শিক্ষার্থীদের দাবি, আন্দোলনে
থাকায় তাদের হয়রানি করা হচ্ছে
নিজস্ব প্রতিবেদক
দীর্ঘ ৬ মাসব্যাপী আন্দোলনের পর ক্লাসে ফিরলেও বিগত ক্লাসসমূহে উপস্থিতির হার কম থাকায় পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার অনুমতি পাননি চারুকলা ইনস্টিটিউটের ৪ জন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী। গতকাল ১৩ আগস্ট সকালে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও ইনস্টিটিউটের মূল ফটকে তালা দেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।
গতকাল ১৩ আগস্ট সকাল ৯ টায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় চারুকলা ইনস্টিটিউিটের মূল ফটকে তালা দেন ২০২২ সালের ২ নভেম্বর থেকে চলতি বছরের ২ মে পর্যন্ত মূল ক্যাম্পাসে ফেরার দাবিতে আন্দোলন করা শিক্ষার্থীরা। এ দিন ড্রয়িং অ্যান্ড পেইন্টিং বিভাগের ২য় বর্ষের ওয়েস্টার্ন আর্ট কোর্সের লিখিত পরীক্ষা থাকলেও অবরুদ্ধ ক্যাম্পাসে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়নি। পরে দুপুরের দিকে প্রক্টরিয়াল বডি ইনস্টিটিউটে উপস্থিত হয়ে তালা খুললেও পরীক্ষাটি স্থগিত ঘোষণা করা হয়। শিক্ষার্থীদের দাবি, আন্দোলনে থাকার কারণে পরীক্ষায় অংশগ্রহণসহ নানাভাবে তাদের হয়রানি করা হচ্ছে। আন্দোলনের অংশ হিসেবে তারা ক্লাস বর্জন করলে পুরোদমে ক্লাস শুরুর সাথে সাথে ক্লাসে অংশ নেয়। কিন্তু বিগত ক্লাসগুলোতে উপস্থিতির হার কম দেখিয়ে পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার অনুমতি দেয়নি ইনস্টিটিউট। শিক্ষার্থীরা জানায়, পরীক্ষায় অংশগ্রহণের অনুমতি চেয়ে ইনস্টিটিউট পরিচালক বরাবর শিক্ষার্থীরা আবেদনপত্র জমা দিলে একাডেমিক মিটিংয়ের পর সিদ্ধান্ত জানানো হবে বলে আশ্বস্ত করা হয়। ফরম ফিলাপের নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তারা ইনস্টিটিউট পরিচালকের সাথে কথা বলার চেষ্টা করলে তিনি প্রতিবার ব্যস্ততা দেখান। ফরম ফিলাপের নির্দিষ্ট সময় অতিবাহিত হয়ে গেলেও কোনো একাডেমিক সভা অনুষ্ঠিত হয়নি বলে শিক্ষার্থীরা জানতে পারেন। ইনস্টিটিউট ছাড়া প্রক্টরসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য অভিভাবকদের সাথে তারা এ ব্যাপারে কথা বললে তারা ইতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করেন। এরপর পরীক্ষা শুরুর আগের সর্বশেষ কর্মদিবস ১০ আগস্ট তাদের জানানো হয় পরীক্ষায় অংশগ্রহণের চূড়ান্ত অনুমতি তারা পাননি অর্থাৎ তাদের ছাড়াই ১৩ আগস্ট পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছিলো।
শিক্ষার্থীদের দাবি, অনন্যোপায় হয়ে তারা ইনস্টিটিউটের মূল ফটকে তালা দেন। এ সময় তারা পরীক্ষায় অংশগ্রহণসহ আরো দুটো দাবি তুলে ধরেন যেগুলো হলো: বন্ধ ক্যান্টিন সুবিধা চালু করা এবং কথিত শিক্ষক ক্লাবটিকে ছাত্রাবাস ঘোষণা করা। পরে চবি প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা পুলিশসহ সেখানে উপস্থিত হয়ে তালা খোলেন এবং পরীক্ষাটি স্থগিতের ঘোষণা আসে।
এ ব্যাপারে চবি চারুকলা ইনস্টিটিউটের ড্রয়িং অ্যান্ড পেইন্টিং বিভাগের ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী নূর ইকবাল সানি বলেন,‘আমাদের ক্লাসের মোট ৬ শিক্ষার্থীকে পরীক্ষার অনুমতি দেওয়া হয়নি। তার মধ্যে আমরা ৪জন যারা ‘মূল ক্যাম্পাসে ফেরার’ আন্দোলনে সক্রিয় ছিলাম। আমাদের আগেও প্রথম বর্ষের কয়েকজনের উপস্থিতির হার ছিলো ৩০-৪০% তারা পরীক্ষায় অংশ নিতে পেরেছে। কিন্তু আমাদের নানাভাবে হয়রানি করা হচ্ছে। ইনস্টিটিউট পরিচালক কোনোভাবেই সরাসরি আমাদের সাথে কথা বলেননি। আবেদনপত্র জমা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে আমরা দিয়েছি। বলা হয়েছে একাডেমিক মিটিং করে এ ব্যাপারে আমাদেরকে সিদ্ধান্ত জানানো হবো। কিন্তু ফরম ফিলাপের টাইম চলে গেলেও কোনো সিদ্ধান্ত জানানো হয়নি। আমরা ইনস্টিটিউট পরিচালক ছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের শরণাপন্ন হই। তারা আমাদের পরীক্ষায় অংশগ্রহণের ব্যাপারে ইতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করেন। যেহেতু আমাদের আন্দোলনের প্রেক্ষিতেই ইনস্টিটিউটে সংস্কার কাজ হয়েছে। অথচ পরীক্ষার শুরুর দুয়েক দিন আগে বৃহস্পতিবার জানানো হয়, আমরা পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারবোনা। আর কোনো উপায় না দেখে আমরা ইনস্টিটিউটের মূল ফটকে তালা দেই। পরে প্রক্টরিয়াল বডি উপস্থিত হয়ে তালা খুলেন, তবে পরীক্ষাটি স্থগিত হয়। আগামীকাল (১৪ আগস্ট) একাডেমিক মিটিং করে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে আমাদের জানানো হয়। ’
এ ব্যাপারে চবি চারুকলা ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক সুফিয়া বেগমের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
চবি প্রক্টর নূরল আজিম সিকদার বলেন, ‘ক্লাসে উপস্থিতির হার কম থাকায় তাদের পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার অনুমতি দেওয়া হয়নি। তাই তারা ক্ষুব্ধ হয়ে ইনস্টিটিউটের মূল ফটকে তালা দেয়। ঐ পরীক্ষাটি স্থগিত করা হয়েছে। আগামীকাল (আজ) একাডেমিক মিটিংয়ে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হবে।’