সুপ্রভাত ডেস্ক »
জ্বালানি তেল ও তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানির জন্য তিনটি প্রস্তাবের বিপরীতে একাধিক আন্তর্জাতিক সংস্থার কাছ থেকে ২৪৯ কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। আগামী ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে জ্বালানি তেল আমদানিতে এই অর্থ ব্যয় করা হবে বলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত ‘অনমনীয় ঋণ বিষয়ক স্থায়ী কমিটি’র সভায় এই ঋণ প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়। অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী সভায় সভাপতিত্ব করেন। সভায় বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, অর্থ সচিবসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সভা সূত্রে জানা যায়, তিন ঋণ প্রস্তাবের মধ্যে আগামী ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের জন্য জ্বালানি তেল ও এলএনজি আমদানিতে সৌদি আরবের জেদ্দা ভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ট্রেড ফাইন্যান্স কর্পোরেশন (আইটিএফসি; ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক-আইডিবি’র অঙ্গ প্রতিষ্ঠান) থেকে ২১০ কোটি ডলার ঋণ নেওয়া হবে। ছয় মাস মেয়াদী এ ঋণের সুদের হার ডলারের সিকিউরড ওভারনাইট ফাইন্যান্সিং রেট (এসওএফআর)-এর সঙ্গে ১ দশমিক ৮ শতাংশ এবং প্রশাসনিক ফি বাবদ দশমিক ২ শতাংশ যোগ হবে। খবর রাইজিংবিডি।
জানা গেছে, বর্তমানে এসওএফআর ৫.৩ শতাংশে বিরাজ করছে। এটি এক বছর আগের তুলনায় ১ শতাংশ বেশি এবং গত ২০২২ সালের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। বৈঠক সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে বিশ্বব্যাপী ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সুদ হার অব্যাহতভাবে বাড়ছে। তা সত্ত্বেও দর কষাকষির প্রেক্ষিতে ইতিপূর্বে প্রদত্ত ঋণের সমপরিমাণ সুদ হারে ঋণ দিতে সম্মত হয়েছে আইটিএফসি। তবুও বিশ্বব্যাংক ও এডিবি’র দেওয়া ঋণের সুদের হারের তুলনায় এটি বেশি। ্রজানা গেছে, আইটিএফসি’র ঋণ সহায়তায় ১৯৯৭ সাল থেকে জ্বালানি তেল কিনছে বিপিসি। এ ধারাবাহিকতায় চলতি ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের জন্য জ্বালানি তেল আমদানিতে আইটিএফসি থেকে ১৪০ কোটি ডলার ঋণ নিয়েছে বিপিসি। সুদের হার নতুন প্রস্তাবের অনুরূপ। গৃহীত এ ঋণ থেকে গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৮২ কোটি ডলার ডলার ব্যয় হয়েছে। অবশিষ্ট ৫৮ কোটি ডলার আগামী মে ও জুনে জ্বালানি তেল আমদানিতে ব্যয় হবে। ফলে আগামী জুলাইয়ে জ্বালানি তেল আমদানিতে কোন অর্থ অবশিষ্ট থাকছে না। প্রাথমিক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি) এবং বাংলাদেশ তেল-গ্যাস ও খনিজ সম্পদ কর্পোরেশন (পেট্রোবাংলা) সমহারে এ ঋণ ব্যবহার করবে।
সভায় এলএনজি আমদানির জন্য ১০ কোটি ডলারের পৃথক আরেকটি ঋণ প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়। আইটিএফসি’র সিন্ডিকেটেড মুরাবাহা অপারেশনের আওতায় এ ঋণে সহযোগী অর্থায়নকারী হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংক ৫ কোটি ডলার ঋণ দেবে। সুদের হার প্রথমটির অনুরূপ।
এছাড়া, সভায় দেশের পল্লী ও শহরাঞ্চলে নিম্ন ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত জনগোষ্ঠীর গৃহায়ন প্রকল্প (দ্বিতীয় ধাপ) বাস্তবায়নে ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (আইডিবি) থেকে ২৮ কোটি ৯৫ লাখ ২০ হাজার ডলারের পৃথক একটি ঋণ প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়। বাংলাদেশ হাউজ বিল্ডিং ফাইন্যান্স কর্পোরেশন প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। এর আগে চলতি অর্থবছর বাজেটের সময় অর্থ বিভাগ থেকে বলা হয়েছিল, দেশি ও বিদেশি ঋণের উচ্চসুদের হার সরকারের ঋণ গ্রহণের ব্যয় বাড়িয়ে দিচ্ছে। যা সরকারের অর্থ ব্যবস্থায় একটি চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছে অর্থ মন্ত্রণালয়। আরও বলা হয়েছিল, সরকারের অর্থ ব্যবস্থায় আরেকটি চ্যালেঞ্জ হলো অভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিক উভয় বাজারে উচ্চসুদের হার, যা সরকারের ঋণ গ্রহণের ব্যয় বাড়িয়ে দিচ্ছে। অবকাঠামো, সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থা এবং সরকারের অন্যান্য উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের ক্রমবর্ধমান চাহিদার কারণে এই পরিস্থিতি মধ্য মেয়াদে আরও চ্যালেঞ্জিং হবে।
অর্থ বিভাগের করা সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি বিবৃতিতে এই আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছিল। অর্থ বিভাগের এক প্রক্ষেপণে বলা হয়েছে, ছয় বছরের ব্যবধানে বাজেট বাস্তবায়নে নেওয়া ঋণের সুদ ব্যয় প্রায় দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেতে যাচ্ছে। এর মধ্যে, বিদেশি ঋণের সুদ বাড়বে সবচেয়ে বেশি। এই ব্যয় বৃদ্ধির হার ৪ গুণেরও বেশি। অন্যদিকে, দেশের অভ্যন্তরীণ খাত থেকে নেওয়া সুদ ব্যয় বাড়বে প্রায় দ্বিগুণ।