ভূঁইয়া নজরুল »
শেষ হয়েও হইলো না শেষ। ১০তলা ভবনের কারণে পাঁচ বছর আটকে থাকা বাকলিয়া এক্সপ্রেস প্রকল্পটির জট এখনও খুলছে না। গত বছরের জুনে ১০তলা ভবনকে অক্ষত রেখে দুই ১০তলা ভবনের মাঝখান দিয়ে বিকল্প রুটে রোডটি নির্মাণের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হলেও এখনও মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পাওয়া যায়নি। ফলে রোডের উভয় দিকে নির্মাণ শেষ হলেও মাত্র ১০০ মিটার দৈর্ঘ্যরে কারণে ১৬০০ মিটার দীর্ঘ রোডের সুফল পাওয়া যাচ্ছে না।
নতুন এলাইনমেন্ট নির্ধারণ করে গত জুনে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হলেও এখনও চূড়ান্ত অনুমোদন পাওয়া যায়নি উল্লেখ করে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস বলেন, ‘গঠিত তদন্ত কমিটির রিপোর্টের আলোকে এলাইনমেন্ট পরিবর্তন করে রোডটি নির্মিত হলে ১০তলা ভবনের ক্ষতিপূরণ বাবদ ১৫ কোটি বেঁচে যাবে। তাই দুই ১০তলা ভবনের মাঝ দিয়ে এলাইনমেন্ট নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু পরিবর্তিত এই এলাইনমেন্ট মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদিত হতে হবে। এজন্য গত জুনে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়।’
কিন্তু এখনও তা অনুমোদন পাওয়া যায়নি কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, গণপূর্ত মন্ত্রণালয় অনুমোদন দিয়ে তা পরিকল্পনা কমিশনে পাঠায়। পরিকল্পনা কমিশন অনুমোদন দিলে পরিকল্পনা মন্ত্রী অনুমোদন দিবে। আর তবেই দুই তলা ১০তলা ভবনের মাঝ দিয়ে রোডটি নির্মাণ কাজ শুরু করা যাবে।
এদিকে গত বুধবার বাকলিয়া এক্সেস রোড এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সিরাজউদৌল্লা রোডের ফায়ার সার্ভিস প্রান্ত থেকে চাক্তাই খাল পর্যন্ত নির্মাণ কাজ শেষ। অপরদিকে বহদ্দারহট শাহ আমানত সেতু সংযোগ সড়ক প্রান্ত থেকে বাকলিয়া বগার বিলের আলোচিত ১০তলা ভবন পর্যন্ত নির্মাণ কাজ শেষ। মধ্যবর্তী অংশে মাটি ভরাটের কাজ চলমান থাকলেও মৌসুমী আবাসিক এলাকা সংলগ্ন দুই ১০তলা ভবন এলাকায় রোডের নির্মাণ কাজ বন্ধ রয়েছে। স্কেভেটর দিয়ে রাস্তায় মাটি ভরাটের কাজ করতে থাকা চালক সাইফুল ইসলাম বলেন, দুই ১০তলা ভবনের মধ্যবর্তী খালি অংশে কাজ করতে দেয়া হচ্ছে না। জায়গা নিয়ে এখনো বিরোধ শেষ হয়নি। তাই এই প্রান্তে (সিরাজউদৌল্লা রোড) কাজ করছি। মধ্যবর্তী অংশের দৈর্ঘ্য সর্বোচ্চ ১০০ মিটার হতে পারে। এই ১০০ মিটারের জন্য পুরো রোডটি অকার্যকর হয়ে আছে।
উল্লেখ্য, বাকলিয়া মৌসুমী মোড় বলে খ্যাত বাবে মতিন সিটিতে সেনাবাহিনীর কর্নেল (অব.) ইকবাল সিডিএ’র ইমারত নির্মাণ বিধিমালা-২০০৮ অনুযায়ী ভূমি ব্যবহার ছাড়পত্র ও ২০১৩ সালে ইমারত নির্মাণ কমিটির অনুমোদন নিয়ে ১০তলা ভবন নির্মাণ করেন। কিন্তু সিডিএ রাস্তার এলাইনমেন্টের জায়গায় এই ভবনের অনুমতি দিয়েছিল। কিন্তু ভবন ভেঙে রাস্তা নির্মাণ করতে প্রায় ১৫ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়া লাগতো। রাস্তা নির্মাণে সরকার এই টাকা কেন দেবে? এজন্য মন্ত্রণালয়ের আদেশে চার বছর আগে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে সিডিএ। সেই কমিটির রিপোর্টের ভিত্তিতে চুয়েটের বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত কমিটি রোডের এলাইনমেন্ট পরিবর্তন করে দুই ১০তলা ভবনের মধ্যবর্তী অংশ দিয়ে রোড নির্মাণের প্রস্তাবনা দেয়। আর নতুন এলাইনমেন্ট নির্ধারণ করতে গিয়ে যে জায়গার প্রয়োজন হবে তা অধিগ্রহণ করা হবে। তবে নতুন জায়গাটি খালি থাকায় অধিগ্রহণ খরচ মূল্য তুলনামূলকভাবে কম হবে। এই রোডটি বাস্তবায়ন হলে সহজে সিরাজউদৌল্লা রোড থেকে শাহ আমানত সেতুতে পৌঁছানো যাবে। ২০১৬ সালের আগস্টে ২০৫ কোটি ৪৬ লাখ ৬৭ হাজার টাকায় একনেকে অনুমোদন পেলেও এখনও সড়কের নির্মাণ কাজ শেষ করা যায়নি।