চট্টগ্রামসহ সারা দেশে মৃদু থেকে মাঝারি, কোথাও কোথাও তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায় সারা দেশে আবার তিনদিনের হিট অ্যালার্ট জারি করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। দেশের তাপমাত্রা গত বেশ কয়েকদিন ধরে ৪০ ডিগ্রির কাছাকাছিতে আছে। তীব্র গরমে স্বভাবতই অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে জনজীবন। অতিরিক্ত গরম, শুধু অস্বস্তি নয়, এটি স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণও হয়ে উঠতে পারে। বিশেষত নবজাতক, শিশু, গর্ভবতী ও বয়স্ক মানুষদের ক্ষেত্রে এটি ভয়াবহ স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে। সবচেয়ে বড় স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হয় পানিশূন্যতা থেকে। এ ছাড়া অত্যধিক গরমে হিট স্ট্রোক হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে, এরমধ্যে কয়েকটি মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে। তাই এ সময়ে সতর্ক থাকতে হবে। আমাদের দেশে প্রচুর মানুষকে কাজ করতে হয় খোলা স্থানে, যেখানে কড়া রোদ পড়ে সরাসরি। এমন স্থানে দীর্ঘক্ষষণ কাজ করা ঝুঁকিপূর্ণ। ক্ষেতে-খামারে যারা কাজ করেন কিংবা শহরে রিকশা চালানোর মতো কাজ যারা করেন তাদের অধিক সতর্ক থাকা দরকার। সরাসরি রোদে কাজ না করা, কাজের সময় মাথায় ছাতা বা তেমন কিছু রাখা এবং প্রচুর পানি পান করতে হবে। এ সময় শিশু ও বয়স্কদের প্রতি অধিক যত্নবান হতে হবে।
বিশেষজ্ঞরা মানুষকে, বিশেষ করে অসুস্থ ও বয়স্ক ব্যক্তিদের ঘরের বাইরে বের হওয়া থেকে বিরত থাকতে পরামর্শ দিচ্ছেন। কিন্তু জীবিকার তাগিদে মানুষকে বাইরে বের হতেই হচ্ছে। আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, চলতি মাসে দুই থেকে চারটি মৃদু ও মাঝারি তাপপ্রবাহ এবং এক থেকে দুটি তীব্র থেকে তীব্রতর তাপপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। কাজেই এ মাসে সবারই উচিত চলাফেরায় বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা।
গরমে অতিরিক্ত ঘামের কারণে শরীরে পানিশূন্যতা তৈরি হয়। বেড়ে যায় তাপমাত্রা। এ পরিস্থিতিতে হিটস্ট্রোক হওয়ার আশঙ্কা থাকে, বিশেষ করে যারা শারীরিকভাবে অসুস্থ, যাদের হৃদরোগ ও উচ্চ রক্তচাপ আছে, তাদের। এছাড়া ঊষ্ণ আবহাওয়ার কারণে সর্দিজ্বর এবং ডায়রিয়াসহ পানিবাহিত নানা রোগে আক্রান্ত হয় মানুষ। ইতোমধ্যেই বিভিন্ন হাসপাতালে এ ধরনের রোগীর চাপ বেড়েছে। জানা গেছে, প্রচণ্ড দাপদাহে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীরা হাসপাতালে ভিড় করছে। শিশু হাসপাতালেও ভিড় বাড়ছে।
কোনো দুর্যোগ-দুর্বিপাকে অসুস্থ হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে শিশু, বেশি বয়স্ক ব্যক্তি এবং দরিদ্র তথা অপুষ্ট জনগোষ্ঠীর। বলার অপেক্ষা রাখে না, এই তীব্র গরমে শ্রমজীবী মানুষের কষ্ট সবচেয়ে বেশি। তারা রোদে পুড়ে, ঘাম ঝরিয়ে শ্রমের বিনিময়ে যে টাকা রোজগার করে, তাই দিয়েই তাদের পরিবার-পরিজনের জীবিকা নির্বাহ করতে হয়। আর এ সময় তাদের অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়ে। তাই নিজেদের বিষয়ে সতর্ক থাকার পাশাপাশি প্রত্যেক সামর্থ্যবানের উচিত এই তীব্র গরমে শ্রমজীবী মানুষকে সহানুভূতির দৃষ্টিতে দেখা, তাদের প্রতি সহানুভূতির হাত বাড়িয়ে দেওয়া।
এ গরমে শুধু মানুষের কষ্ট বাড়ছে তা নয়। পশুপাখিরাও কষ্ট পাচ্ছে। অনেকে গৃহপালিত পশুপাখিদের প্রতি খেয়াল রাখেন বটে কিন্তু এর বাইরে পথেপ্রান্তরে এবং আমাদের চারপাশে যে পশুপাখি আছে তাদের কথাও ভাবতে হবে আমাদের। তাদের জন্য খাবার বিশেষ করে পানির ব্যবস্থা করা গেলে বড় ভালো হয়। কারণ আমরা প্রাকৃতিক জলাধার ও জলের উৎসগুলো প্রতিনিয়ত ধ্বংস করেছি। এর ফলে প্রাণিদের জীবন ধারণই কঠিন করে ফেলেছি। এ অবস্থায় বাড়ির ছাদে, উন্মুক্ত স্থানে পানির ব্যবস্থা করলে ওদের জীবনটাও রক্ষা পায়। মানুষ হিসেবে এটা আমাদের দায়িত্বও বটে।
এ মুহূর্তের সংবাদ