সুপ্রভাত ডেস্ক »
নেদারল্যান্ডস-দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচের পর অ্যাডিলেড ওভালের প্রেসবক্স আর ধারাভাষ্য কক্ষ মিলিয়ে মিশ্র অনুভূতির স্রোত। ডেল স্টেইনের মন ভার, ডাইনিংয়ে শন পোলক চোখ গোল করে বললেন, “ইটজ অলওয়েজ আসৃ।” বাজিদ খান আর আতহার আলি খান দারুণ রোমাঞ্চিত। সেই রোমাঞ্চের ঢেউ মাঠেও। নেদারল্যান্ডসের জয়ে তখন জিতে গেছে আসলে বাংলাদেশ ও পাকিস্তান। গ্যালারিতে দুই দলের সমর্থকদের জয়োল্লাসের পর এলো আসল লড়াইটা জয়ের পালা। সেখানেই বাংলাদেশকে ছিটকে দিয়ে এক দিনে দুই ‘জয়’ নিয়ে সেমি-ফাইনালে উঠে গেল পাকিস্তান। খবর বিডিনিউজের।
আম্পায়ারের একটি বাজে সিদ্ধান্ত আর নিজেদের বাজে ব্যাটিং, দুইয়ে মিলে পরাজয়কে ডেকে আনে বাংলাদেশ। এসব ম্যাচে ১২৭ রান নিয়ে কী আর ম্যাচ জেতা যায়! তবু লড়াই কিছুটা হলো। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পাকিস্তান খুব একটা বেগ না পেয়েই ৫ উইকেটে জিতে গেল ১১ বল বাকি রেখে।
বাংলাদেশের পরাজয় ত্বরান্বিত হয় ম্যাচের প্রথম ভাগেই। সেই অংশকে আবার দুটি ভাগে ভাগ করা যায়। সাকিব আল হাসান আউট হওয়ার আগে ও পরে!
উড়ন্ত সূচনা না হলেও সাকিবের বিদায়ের আগ পর্যন্ত বেশ ভালো অবস্থানে ছিল বাংলাদেশ। কিন্তু অধিনায়কের বিতর্কিত আউটের পর দলের ইনিংসও ভেঙে পড়ে হুমমুড়িয়ে। ২ উইকেটে ৭৩ থেকে একের পর এক উইকেট হারিয়ে ধুঁকতে ধুঁকতে দলের রান দাঁড়ায় ৭ উইকেটে ১০৯। ম্যাচে বাংলাদেশের সম্ভাবনার মৃত্যু ওখানেই।
অ্যাডিলেড ওভালের উইকেট এই ম্যাচে ছিল কিছুটা শুষ্ক। উইকেটে স্পিনও ধরে কিছুটা। টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামা বাংলাদেশ ১৫০ রানের পাশেআশে স্কোর করতে ম্যাচ জমে উঠতে পারত নিশ্চিতভাবেই। সেই স্কোর গড়ার ভিতও গড়ে উঠেছিল প্রথম ১০ ওভারে। কিন্তু খেই হারায় পরের ভাগে।
আগের ম্যাচে ঝড় তোলা লিটন দাস এ দিন বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। তৃতীয় ওভারে শাহিন আফ্রিদিকে চোখধাঁধানো এক পুল শটে ছক্কার পর উইকেট বিলিয়ে আসেন ওই ওভারেই।
দ্বিতীয় উইকেটে নাজমুল হোসেন শান্ত ও সৌম্য সরকারের জুটি দলকে টেনে নেয় অনেকটা দূর। যদিও রান রেট খুব ভালো ছিল না। ৫২ রানের জুটি আসে ৪৭ বলে। তবে পরের দিকে ঝড় তোলার মঞ্চ অন্তত গড়ে দিয়েছিল ওই জুটি।
এই জুটি ভাঙা থেকেই দলের পথ হারানোর শুরু। লেগ স্পিনার শাদাব খানকে রিভার্স সুইপ খেলে সৌম্য ফেরেন ১৭ বলে ২০ করে। পরের বলেই সাকিবকে আউট দেওয়ার বিতর্ক সিদ্ধান্ত।
মাঠের আম্পায়ার আউট দেওয়ার পর রিভিউ নেন সাকিব। রিভিউতে আল্ট্রা এজ-এ সাকিবের ব্যাটে বল লাগার প্রমাণ মেলে। কিন্তু টিভি আম্পায়ার মনে করেন, সাকিবের ব্যাট লেগেছে পিচে। তাই সিদ্ধান্ত বহাল রাখেন তিনি। পরে রিপ্লেতে পরিষ্কারভাবেই ফুটে ওঠে, সাকিবের ব্যাট আর পিচের মধ্যে দূরত্ব ছিল যথেষ্টই।
এই দুই আউটের ধাক্কা সামাল দেওয়ার আগেই আরেকটি বড় ধাক্কা খায় দল। এক প্রান্ত আগলে রেখে ফিফটি করা শান্তর কাছে দলের যখন দাবি দ্রুত রান তুলে পুষিয়ে দেওয়া, তখনই আউট হন ৪৮ বলে ৫৪ রান করে।
এরপর মোসাদ্দেক হোসেন, নুরুল হাসান সোহানরাও ব্যর্থ চরমভাবে। এক প্রান্তে থেকে আফিফ হোসেন দেখতে থাকেন সতীর্থদের আসা-যাওয়া। তার ২০ বলে ২৪ রানের ইনিংসে কোনোরকমে ১২৫ ছাড়াতে পারে দল।
এই পুঁজি নিয়েও বাংলাদেশ লড়াইয়ের শুরুটা ভালো করতে পারত, যদি প্রথম ওভারে ক্যাচ হাতছাড়া না করতেন নুরুল হাসান সোহান। তাসকিন আহমেদের বলে মোহাম্মদ রিজওয়ানের সহজ ক্যাচ ছাড়েন সোহান। এরপর বাবর ও রিজওয়ান গড়ে তোলেন ফিফটি জুটি।
যদিও খুব ঝড়ো সূচনা করতে পারেননি দুজন। তবে লক্ষ বড় ছিল না বলেও চাপও ছিল না।
৫৭ রানের জুটি থামে একাদশ ওভারে, বাবর আজম আউট হন ৩৩ বলে ২৫ রান করে। এবারের বিশ্বকাপে প্রথম খেলতে নামা নাসুম আহমেদ চেপে ধরেন পাকিস্তানকে। মুস্তাফিজুর রহমানও বেশ আঁটসাঁট বোলিং করেন।
৩২ বলে ৩২ রান করে রিজওয়ানের বিদায়ের পর পাকিস্তানকে চেপে ধরার আরেকটি সুযোগ পায় বাংলাদেশ। এবার নওয়াজকে রান আউটের সহজ সুযোগ কাজে লাগাতে পারেননি শান্ত।
তিনে নেমে নওয়াজ ভালো করতে না পারলেও মোহাম্মদ হারিসের ১৮ বলে ৩১ রানের ইনিংস পাকিস্তানকে নিয়ে যায় জয়ের কাছে। শেষ দিকে কয়েকটি উইকেট হারালেও তাদের জয় নিয়ে সংশয় জাগেনি।
শেষ পর্যন্ত তাই বাংলাদেশের ‘সেরা’ বিশ্বকাপ সীমাবদ্ধ রইল দুই জয়েই। নিজেদের অননুমেয় চরিত্রের ইতিহাসকে ধারণ করে প্রথম দুই ম্যাচে পরাজিত পাকিস্তান খাদের কিনারা থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে পা রাখল শেষ চারে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলাদেশ: ২০ ওভারে ১২৭/৮ (শান্ত ৫৪, লিটন ১০, সৌম্য ২০, সাকিব ০, আফিফ ২৪*, মোসাদ্দেক ৫, সোহান ০, তাসকিন ১, নাসুম ৭, মুস্তাফিজ ০*; আফ্রিদি ৪-০-২২-৪, নাসিম ৩-০-১৫-০, ওয়াসিম ২-০-১৯-০, রউফ ৪-০-২১-১, শাদাব ৪-০-৩০-২, ইফতিখার ৩-০-১৫-১)।
পাকিস্তান: ১৮.১ ওভারে ১২৮/৫ (রিজওয়ান ৩২, বাবর ২৫, নাওয়াজ ৪, হারিস ৩১, মাসুদ ২৪*, ইফতিখার ১, শাদাব ০*; তাসকিন ৩-০-২৬-০, নাসুম ৪-০-১৪-১, সাকিব ৪-০-৩৫-১, মুস্তাফিজ ৪-০-২১-১, ইবাদত ৩.১-০-২৫-১)
ফল: পাকিস্তান ৫ উইকেটে জয়ী।
ম্যান অব দা ম্যাচ: শাহিন শাহ আফ্রিদি।