দেশে প্রথমবারের মতো চট্টগ্রাম নগরে যাত্রা শুরু করেছে স্মার্ট স্কুল বাস। যেখানে প্রেজেন্সলেস, পেপারলেস ও ক্যাশলেস প্রযুক্তিসহ নানা ডিভাইস সংযুক্ত রয়েছে। এখন থেকে যানবাহনের ভোগান্তি এড়িয়ে মাত্র ৫ টাকায় শিক্ষার্থীরা স্কুলে পৌঁছাতে পারবে। শুধু তাই নয়, শিক্ষার্থী বাসে ওঠার সাথে সাথে উপস্থিতির সে বার্তা পাবেন তার অভিভাবক। সোমবার দুপুরে এম এ আজিজ স্টেডিয়ামের জিমনেসিয়াম মাঠ থেকে আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করে বাসটি। এ সময় চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামানসহ ৫০ শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।
এ সময় জেলা প্রশাসক বলেন, নগরীর ১০টি স্কুল বাসে জিপিএস ট্র্যাকার, জিআইএস প্রযুক্তি, ডিজিটাল হাজিরা ডিভাইস ও আইপি ক্যামেরা স্থাপন করে এসব বাসকে ‘স্মার্ট’ করা হয়েছে। উল্লেখ্য যে, গত অক্টোবর মাসে স্মার্ট জেলা উদ্ভাবন চ্যালেঞ্জ-২০২৩ এর আওতায় প্রথম পুরস্কার পায় এই প্রকল্প।
প্রাথমিকভাবে শুধু একটি বাসের উদ্বোধন করা হয়েছে। জানুয়ারি মাস থেকে আরও এমন ১০টি স্কুল বাস সড়কে চলবে।
বাংলাদেশে বড় বড় নগরে শিক্ষার্থীদের জন্য বিড়ম্বনার অন্যতম কারণ হলো যানবাহন। হাতে গোণা কয়েকটি ছাড়া আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর নিজস্ব পরিবহন ব্যবস্থা নেই। ফলে লক্ষ লক্ষ শিক্ষার্থীদের নির্ভর করতে হয় গণপরিবহনের ওপর। আর বাংলাদেশে সুষ্ঠু গণপরিবহন ব্যবস্থা গড়ে না ওঠায় চরম ভোগান্তি পোহাতে হয় শিক্ষার্থীদের। এভাবে চলাচল করতে গিয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় কত শিক্ষার্থী প্রাণ হারিয়েছে অথবা চিরতরে পঙ্গুত্বকে বরণ করেছে তার ইয়ত্তা নেই। এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের একটি অংশ যারা উচ্চমধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তান তারা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আসা-যাওয়া করে নিজস্ব গাড়িতে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে একজন শিক্ষার্থীর জন্য একটি গাড়ি সড়কে নামে।
ঢাকা, চট্টগ্রামের মতো নগরের অভিজাত স্কুলগুলোর অধিকাংশ শিক্ষার্থীই নিজস্ব গাড়িতে আসা-যাওয়া করে। এ সংখ্যা কম নয়। স্কুল শুরু ও ছুটির সময় এ ধরনের হাজার হাজার গাড়ির কারণে নগরে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা ভেঙে পড়ে। নগর-পরিকল্পনাবিদ থেকে শুরু করে দেশের সরকার প্রধান পর্যন্ত এই সংকট উত্তরণের উপায় হিসেবে প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে নিজস্ব পরিবহন ব্যবস্থা চালুর কথা বলেছেন। দুঃখজনক হলেও সত্য এ বিষয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো কোনো উৎসাহ দেখায়নি।
চট্টগ্রামে চালু হওয়া স্মার্ট বাস একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করল নিসন্দেহে। এই প্রকল্প সফল হলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেদের উদ্যোগে এ ধরনের ব্যবস্থা নিতে পারে। কিছু কিছু স্কুলের আর্থিক সঙ্গতি না থাকলে সরকার তাদের সহজ শর্তে ঋণের ব্যবস্থা করে দিতে পারে। তাতে শিক্ষার্থীরা তো উপকৃত হবেই সে সঙ্গে নগরবাসীও ট্রাফিক জ্যামের বিড়ম্বনা থেকে রেহাই পেতো। স্মার্ট বাসের মতো একটি ইনোভেটিভ আইডিয়ার জন্য চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসককে সাধুবাদ জানাতে হয়।