নিজস্ব প্রতিবেদক
শেখ মুজিবুর রহমানের অসমাপ্ত আত্মজীবনী: ইতিহাসের নতুন আখ্যান ও কতিপয় প্রসঙ্গ’ শীর্ষক আলোচনা সভার আয়োজন করে দ্বি-মাসিক পত্রিকা ইতিহাসের খসড়া। ইতিহাস-ঐতিহ্য-সংস্কৃতি ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক এ পত্রিকার পক্ষ থেকে এ সভায় সভাপতিত্ব করেন ইতিহাসের খসড়া সুহৃদ সম্মিলনীর আহ্বায়ক অধ্যাপক মুজিব রাহমান।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সমাজবিজ্ঞানী ও প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. অনুপম সেন। আলোচক হিসেবে ছিলেন একুশে পদকপ্রাপ্ত কবি ও সাংবাদিক অধ্যাপক আবুল মোমেন, অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক মইনুল ইসলাম।
শুক্রবার বিকেল ৪টায় নগরীর জামালখান প্রেস ক্লাবের ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল খালেক মিলনায়তনে প্রভাষক অনিন্দিতা দেবনাথের সঞ্চালনায় এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
প্রাবন্ধিক ড. ইলু ইলিয়াস প্রবন্ধ পাঠ ও আলোচনায় বলেন, ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী কোনো স্মৃতিকথা নয়। যদিও অনেকে বইটিকে স্মৃতিকথা ভেবে ভুল করেছেন। যার ফলে এটির পাঠগ্রহণে নানা দ্বিধাদ্বন্দ্বের অবকাশ সৃষ্টি হয়। সেই সুযোগে এই মহামূল্যবান ইতিহাস-দলিল হারিয়ে যেতে পারে বিস্মৃতির কৃষ্ণগহ্বরে। যেমন গ্রন্থটি প্রকাশের পর থেকেই নানা অপকৌশল প্রয়োগ হতে দেখা যায়।’
এ বইয়ের বাস্তবতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এমনও প্রশ্ন উঠে, বইটি আদৌ শেখ মুজিবুর রহমান লিখেছেন কিনা? আসলে অনেকে শেখ মুজিবুর রহমান যে আত্মজীবনী লিখবেন সেটা তারা ভাবতে পারেননি এবং লিখলেও যে তা অক্ষত অবস্থায় পাওয়া যাবে, একসময় তা প্রকাশিতও হবে, তা ছিলো তাদের ধারণাতীত, স্বপ্নেরও অগোচর।’
আলোচনায় অধ্যাপক ড. মইনুল ইসলাম বলেন, ‘১৯৪৭-১৯৫৫ সালের সময়টিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভূমিকাকে খাটো করার একটা প্রয়াস রয়েছে। ১৯৪৭ সালে বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানকে মেনে নিয়েছিলেন, কিন্তু তাঁর ভুল ভাঙতে দেরি হয়নি। কিন্তু এর মধ্যবর্তী সময়ে তাঁর ভূমিকাকে অনেকে বিশ্লেষণ করেন। ১৯৫২ সালে বঙ্গবন্ধু জেলে ছিলেন। তবে তাঁর কোনো ভূমিকা ছিলো না বললে ইতিহাস বিকৃত হবে। তাঁর সাথে ছাত্র নেতারা দেখা করে ভাষা আন্দোলনের বিষয়ে আলোচনা করেছেন।’
স্বাধীনতা পূর্বের সকল আন্দোলনে বঙ্গবন্ধুর সক্রিয়তা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু যুক্তবাংলা আন্দোলনের সাথেও যুক্ত ছিলেন। প্রতিষ্ঠার পর থেকে ছাত্রলীগের কোনো এক্টিভিটি বঙ্গবন্ধুর অগোচরে হয়েছিলো সেকথা কেউ বলতে পারবে না। স্বাধীনতা পূর্বের সকল আন্দোলনে বঙ্গবন্ধু ছিলেন সক্রিয়।
বঙ্গবন্ধু সবার নেতা উল্লেখ করে কবি ও সাংবাদিক আবুল মোমেন বলেন, সবাইকে ছাপিয়ে কি করে একজন বঙ্গবন্ধু জাতির জনক হয়ে উঠলেন এটা লক্ষ্য করার বিষয়। অনেক নেতা কোথাও না কোথাও আপোষ করেছেন। সুবিধাবাদের একটা জায়গা তাদের ছিলো। কিন্তু মানুষ দেখলো বঙ্গবন্ধুর মানুষটা তাদের হয়েই থাকবে। তিনি তাঁর লক্ষ্যে আপোষ করবেন না। তিনি সবার নেতা।’
প্রধান অতিথির বক্তব্যে সমাজবিজ্ঞানী ড. অনুপম সেন বলেন, ‘জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর আত্মজীবনীতে কোনো ঘটনাই বাদ দেননি। বাঙালির প্রতিনিধিত্ব করেছেন যারা তারা কিভাবে পাকিস্তানিদের কাছে আত্মসমর্পণ করেছেন সেসব তিনি অকাতরে লিখেছেন। ছোট ছোট বাক্যে। অসাধারণ তাঁর বক্তব্য। আত্মজীবনীটা পড়ে মনে হয়েছে, বাঙালির ২টি নব জাগরণ, ডিরোজিওর ইয়ং বেঙ্গলের উত্থান এবং ১৯৫০ থেকে যে নবজারণ সেটি। যেগুলো সম্পর্কে বঙ্গবন্ধু নিজে তাঁর আত্মজীবনীতে লিখেছেন ধারাবাহিকভাবে।’
সভার সভাপতি অধ্যাপক মুজিবুর রাহমান বলেন, ‘এতক্ষণ ইতিহাসে আমরা নিমগ্ন ছিলাম। সিংহের কেশরে একবিন্দু শিশির যেমন, তাঁর ভূমিকাকে খাটো করার চেষ্টাও তেমন। তাই এই চেষ্টা ছিলো আছে, থাকবে। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর ভূমিকা তাই বলে খাটো হয়ে যাবে না। তিনি স্বমহিমায় সমুজ্জ্বল থাকবেন।’