সুপ্রভাত ডেস্ক »
সীতাকু-ের বেসরকারি বিএম কনটেইনার ডিপোতে বিস্ফোরণের ঘটনায় মামলা করে দায় সেরেছে পুলিশ। মামলার ১২ দিনেও কোনও আসামিকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। এমনকি গ্রেফতারে অভিযানও পরিচালনা করেনি। এদিকে মালিকপক্ষকে বাদ দিয়ে ডিপোর কর্মীদের মামলায় আসামি করা নিয়েও উঠেছে প্রশ্ন। পুলিশের এমন আচরণে চলছে নানা সমালোচনা।
অন্যদিকে মামলার আসামিরা বলছেন, আমরা মালিকের নির্দেশ মেনেই প্রতিষ্ঠানে কাজ করি। মালিকের নির্দেশনার বাইরে গিয়ে কিছু করার ক্ষমতাতো আমাদের নেই। খবর বাংলাট্রিবিউনের।
এ বিষয়ে সীতাকু- থানার ওসি আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘আমাদের প্রাথমিক তদন্তে মনে হয়েছে কিছু কর্মকর্তা এ ডিপোর অব্যবস্থাপনার জন্য দায়ী। যে কারণে অগ্নিকা- ঘটেছে। এ কারণে তাদের এ মামলায় আসামি করা হয়েছে। পুলিশের তদন্ত চলছে, কাজ শেষ হলেই জানা যাবে কার অপরাধ কতটুকু।’
এদিকে ১৩ জুন চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে চট্টগ্রাম শ্রমিক-কর্মচারি ঐক্যপরিষদ (স্কপ) সমন্বয়ক তপন দত্ত অভিযোগ করেন, ‘রাসায়নিক দ্রব্য থাকার বিষয়টি ফায়ার সার্ভিসের কাছে গোপন করার কারণে ৪৮টি তাজা প্রাণ ঝরে গেছে। তথ্য গোপন করে মালিক পক্ষ ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ করেছে।’
৪ জুন রাতে আগুনে বিস্ফোরণে ৪৮ জন নিহত হন। আহত হন কয়েক শতাধিক। এ ঘটনায় ৭ জুন রাতে সীতাকু- থানার এসআই আশরাফ সিদ্দিকী বাদি হয়ে বিএম ডিপোর আট কর্মকর্তার নাম উল্লেখ করে মামলা দায়ের করেন।
মামলায় বিএম কনটেইনার ডিপোর মহাব্যবস্থাপক নাজমুল আক্তার খান, উপমহাব্যবস্থাপক (অপারেশন) নুরুল আক্তার খান, ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) খালেদুর রহমান, সহকারী প্রশাসনিক কর্মকর্তা আব্বাস উল্লাহ, জ্যেষ্ঠ নির্বাহী (প্রশাসন) নাছির উদ্দিন, সহকারী ব্যবস্থাপক আবদুল আজিজ, ডিপোর শেড ইনচার্জ সাইফুল ইসলাম ও সহকারী ডিপো ইনচার্জ নজরুল ইসলামকে আসামি করা হয়।
এদিকে বিএম কনটেইনার ডিপোতে অগ্নিকা-ে হাত হারানো নুরুল আক্তার এবং শরীরের ১২ শতাংশ পুড়ে যাওয়া খালেদুর রহমানকেও মামলার আসামি করায় হতবাক হয়েছেন স্বজনরা।
নুরুল আক্তারের ভাগনে নজরুল ইসলাম বাবু বলেন, ‘আমার মামাতো ডিপোর মালিক না। তাকে কেন আসামি করা হলো? মামা ডিপোর একজন কর্মচারী। ডিপোর সম্পদ বাঁচাতে গিয়ে এখন তিনি গুরুতর আহত। অথচ তাকে আসামি করেছে পুলিশ, এটি মানা যায় না।’
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) চট্টগ্রামের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আখতার কবীর চৌধুরী বলেন, ‘সীতাকু-ের বিএম ডিপোর বিস্ফোরণের ঘটনা দায়িত্ব অবহেলার মৃত্যু নয়, এটি হত্যাকা-। মামলায় মালিকপক্ষকে আসামি না করে দায়মুক্তি দেওয়া হয়েছে। আগুন যখন লেগেছে তখন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মালিককে নিশ্চয়ই জানিয়েছেন। মালিকপক্ষ ফায়ার সার্ভিস ও বিভিন্ন সংস্থাকে ডিপোতে রাসায়নিক থাকার বিষয়টি কি জানিয়েছিলেন? ডিপোতে যে রাসায়নিক ছিল এগুলো সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনা করার মতো প্রশিক্ষিত জনবল কি রেখেছিলেন তারা? তাহলে কেন মালিকপক্ষ আসামি হবে না,’ প্রশ্ন তোলেন তিনি।
সীতাকু- সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আশরাফুল করিম বলেন, ‘৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। মামলা তদন্ত চলছে। তদন্তে যদি মালিকসহ যাদের সম্পৃক্ততা উঠে আসবে তাদেরই আসামি করা হবে।’
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও সীতাকু- থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সুমন বণিক বলেন, মামলার তদন্ত চলছে। কীভাবে বিএম ডিপোতে অগ্নিকা-ের পর বিস্ফোরণ ঘটেছে, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সেখান থেকে বেশ কিছু কেমিক্যালের নমুনা সংগ্রহ করে তা পরীক্ষার জন্য ঢাকায় সিআইডি ল্যাবে পাঠানো হয়েছে। মামলার তদন্তভার পেয়ে এ পর্যন্ত একাধিকবার বিএম ডিপোতে পরিদর্শন করেছি। ডিপোর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বক্তব্য নেওয়া হচ্ছে। তদন্তে যাদের দায়ী বলে মনে হবে, তাদের বিরুদ্ধেই অভিযোগপত্র দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।