এখনও বাংল বর্ষাগণনার গ্রীষ্মকাল ফুরোয়নি। তাই ব্যাপক ভ্যাপসা গরম আর কোভিড-১৯ ভারাক্রান্ত জনজীবন চাচ্ছিল একটু সজল বৃষ্টিধারার স্পর্শ। মাঝে-মাঝে কালবৈশাখীর দাপটের ভেতরে যৎকিঞ্চিৎ বৃষ্টি এলেও তা মনভেজাতে পারছিল না তেমন। এমন অবস্থায় ঘূণিঝড় ‘ইয়াস’ এসে দেশের উপকূলীয় এবং নিম্নাঞ্চল উড়িয়ে-ভাসিয়ে দিল সম্প্রতি। আর তারই প্রভাবে নগর ও শহরতলির মানুষ পেলো কিছু থেমে-থেমে বৃষ্টিধারার সাক্ষাৎ। আবার সেই কমজোরি বৃষ্টির উপস্থিতিই চট্টগ্রাম শহরটাকে প্রায় অচেনা বানিয়ে ফেলল কাদায় আর ময়লায়। জায়গায়-জায়গায় জমে রইলো জলের গহ্বরও। এ হলো শহর ও শহরতলির দৃশ্যপট। অন্যদিকে শহর লাগোয়া পাড়া-মহল্লায় দেখা গেল অন্যরকম চিত্র। সেখানে হাঁটু ও কোমরসমান পানি এলো কোথা থেকে? কই তেমন টানা জোরবর্ষণ তো হলো না? প্রকৃতপক্ষে যা ঘটেছে, তা হলো, নগরজুড়ে এখন উন্নয়নের যে জোয়ার চলছে তাতে মূল সড়কগুলোর সংস্কারে তা আগের স্তর থেকে বেশ ওপরে উঠে গেছে। যত জোর বা কম জোরালো বৃষ্টিই হোক না কেন, সড়কের ওপর থেকে জলধারা দ্রুতই নেমে যাচ্ছে ওইসব চারপাশের ঢালু জায়গায়। সেখানকার ময়লা-আবর্জনা জমা নালা-নর্দমা সেই পানি অপসারণে সক্ষম নয়। ফলে লেন-বাইলেনে স্ফীত সেই জলরাশি মানুষের দুর্ভোগ বাড়িয়েছে। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের কাজ অনেক ক্ষেত্রে মোটামুটি শেষ হয়ে এসেছে দেখা যাচ্ছে। তবে এই প্রকল্প পূর্ণ পরিসমাপ্তির আগে কোনো স্বচ্ছন্দ সুফলপ্রাপ্তি আশা করা যাচ্ছে না। কারণ সংস্কারকৃত ও আয়তনে বেড়ে যাওয়া নালাগুলোর জলপ্রবাহের গতি এখনও কোথাও-কোথাও বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে, কাজ চলমান থাকার কারণে।
সামনের আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে কী পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে নগরবাসীকে, এইটে এখনই ভাবাচ্ছে সবাইকে। প্রবলবর্ষণের মরশুমে উল্লিখিত পাড়া-মহল্লার নালা-নর্দমা উপচিয়ে গরিব-নিম্নজীবী মানুষের ঘরদুয়ার ডুবে যাবার প্রবল আশংকা রয়েছে। কোভিডকালে অর্থনৈতিকভাবে বিপর্যস্ত মানুষেরা এ ধাক্কা সামলাতে পারবে কিনা সন্দেহ। তাই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলোকে এ বিষয়ে কার্যকরভাবে উদ্যোগী হতে হবে। পাড়া-মহল্লার লেন-বাইলেনেরও দ্রুততম সময়ে সংস্কার বা উঁচুকরণ সম্পন্ন করতে হবে। নালা-নর্দমার পুঞ্জীভূত আবর্জনা পরিষ্কার করতে হবে। উন্নয়নের ধারণাটি যেন সাম্যমূলক ও সকলস্তরে সুফলদায়ক হয়, তা নিশ্চিত করা দরকার।
আরেকটি বিষয়ও বেশ দৃষ্টিগ্রাহ্য হয়ে উঠেছে সমতালে। তা হলো, সড়কের পাশের নালাগুলোর সম্প্রসারণ ও তার ওপর সলিনের কাজ হয়ে যাবার পরও মানুষের স্বচ্ছন্দ চলাফেরা যেন কিছুতেই নিশ্চিত হচ্ছে না। দেখা যাচ্ছে, কিছুদিন পরপর ওই ব্যয়বহুল ধুনোর প্রলেপ সরিয়ে ফেলা হচ্ছে। নতুন করে সেখানে খোঁড়াখুঁড়ি হচ্ছে। বেশ কিছুদিন সেই খুঁড়ে তোলা মাটি, ইট ও ইটের টুকরো-টাকরা সেখানে পড়েই থাকছে। আবারও প্রলেপ দেয়া হচ্ছে। কিছুদিন পর আবারও খোঁড়া হচ্ছে। ওয়াসার এই প্রকল্পটি যেন শেষই হচ্ছে না। জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পটিও এর সাথে চলমান থাকার কারণে নাগরের অধিকাংশ মানুষকে কী যে বিরামহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে, তা ভেবে দেখার সময় এসেছে মনে হয়।
মতামত সম্পাদকীয়