সুপ্রভাত ডেস্ক »
অনেকদিন পর সাকিব আল হাসান ব্যাট-বলে জ্বলে উঠলেন একসঙ্গে, একই ভাবে। আগে ব্যাটিং করে ৭১ বলে ৭৫ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস খেলেছেন। পরে ৩৫ রানে ৪ উইকেট নিয়েছেন বাংলাদেশের বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। সাকিবের দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের দিনে তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের তৃতীয়টিতে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৫০ রানে জিতেছে বাংলাদেশ।
আগে ব্যাটিং করে ২৪৬ রান তুলেছিল বাংলাদেশ। পরে ইংল্যান্ড ৪৩.১ ওভারে গুটিয়ে যায় ১৯৬ রানে। অবশ্য আগেই সিরিজ হেরে বসে আছে স্বাগতিকরা। তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচ জিতেছিল ইংল্যান্ড। বাংলাদেশ আজ শেষ ওয়ানডে জেতায় সিরিজ শেষ হলো ২-১ ব্যবধানে।
সোমবার চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে বাংলাদেশের ২৪৬ রানের জবাব দিতে নেমে ইংল্যান্ডের শুরুটা কিন্তু মন্দ হয়নি। প্রথম উইকেট জুটিতে ৫৪ রান তুলে ফেলেন দুই ইংলিশ ওপেনার জেসন রয় ও ফিল সল্ট। তারপরই সাকিব আর ইবাতদের ‘কামব্যাক’।
দলীয় ৫৪ রানের মাথায় সাকিবকে অফ সাইডে কাট করতে গিয়ে কাভারে মাহমুদউল্লাহ হাতে ক্যাচ দেন সল্ট। ফেরার আগে ২৫ বলে ৭ চারে ৩৫ রান করেন ইংলিশ ওপেনার। পরের ওভারে ডেভিড মালানও ক্যাচ দেন মাহমুদউল্লাহর হাতে। ইবাদতের গতির ফাঁদ বুঝতে না পেরে ব্যাটে ঠিকভাবে বল নিতে পারেননি প্রথম ওয়ানডের সেঞ্চুরিয়ান। ফিরেছেন রানের খাতা খোলার আগেই।
পরের ওভারে অর্থাৎ ১১তম ওভারে অসাধারণ এক কুইকারে জেসন রয়ের স্ট্যাম্প ভাঙেন সাকিব আল হাসান। বিনা উইকেটে ৫৪ রান তোলা ইংল্যান্ড মুহূর্তেই তিন উইকেটে ৫৫ হয়ে যায়।
হঠাৎ তিন উইকেট হারানো ইংল্যান্ড এরপর লোয়ার অর্ডার ব্যাটার স্যাম কারানকে পাঠায় পাঁচ নম্বরে। কারানকে পাঁচে পাঠিয়ে দ্রুত রান তোলার দায়িত্ব হয়তো দিয়েছিল সফরকারীরা। ইংলিশ পেসার অনেকক্ষণ ক্রিজে ছিলেন বটে, তবে প্রত্যাশা মাফিক রান তুলতে পারেননি। ২৪তম ওভারে মিরাজের একটু নিচু হওয়া বলটি টেনে খেলতে গিয়ে লং অফে লিটনের হাতে ক্যাচ দিয়েছেন কারান। ফেরার আগে ৪৯ বলে করেন ২৩ রান।
খানিক বাদে দারুণ খেলতে থাকা ডেভিড ভিন্সকে ফেরান সাকিব। দলীয় ১২৭ রানের মাথা সাকিবের লেগ মিডলে পড়া বলটি টার্ন করে বেড়িয়ে যাওয়ার মুখে রক্ষণাত্মকভাবে খেলেছিলেন ভিন্স। কিন্তু ৪৪ বলে ৩৮ রান করা ভিন্সের ব্যাটের কানায় স্পর্শ করে বল চলে যায় মুশফিকুর রহিমের গ্লাভসে। তারপর নিয়মিত বিরতিতেই উইকেট হারিয়েছে ইংল্যান্ড।
ভিন্স ফেরার ৬ বল পর মঈন আলিকে ফেরান ইবাদত হোসেন। ইবাদত হোসেনের ফুললেংথের বল ফ্লিক করতে গিয়েছিলেন মঈন আলি। ইবাদতের গতির তারতম্য ধরতে না পেরে মিস করেছেন ইংলিশ অলরাউন্ডার। বল মঈনের প্যাডে লেগে আঘাত করে স্ট্যাম্পে।
তারপর ইংল্যান্ডের সব আশা ছিল অধিনায়ক জস বাটলারকে ঘিরে। একপ্রান্ত আগলে রেখে ইংলিশ অধিনায়ক খেলছিলেনও বেশ ভালো। কিন্তু তাইজুল ইসলামকে রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে কাটা পরেছেন দলীয় ১৫৮ রানের মাথায়। রিভিউ নেওয়ার পর তৃতীয় আম্পায়ারের সিদ্ধান্তের আগেই ড্রেসিংরুমের দিকে হাঁটা শুরু করেন জস বাটলার। রিভিউটা যেন নেওয়ার দরকার বলেই নিয়েছিলেন! এলবিডব্লিউ হয়েছেন ২৪ বলে ২৬ রান করে। বাটলার ফেরাতে বাংলাদেশের জয়ের রাস্তা সহজ হয়ে যায়।
এরপর বাকিদের নিয়ে ক্রিস ওকস কেবল হারের ব্যবধানটাই কমাতে পেরেছেন। ৪৩.১ ওভারে ১৯৬ রানে গুটিয়ে গেছে ইংল্যান্ড ওকস শেষ ব্যাটার হিসেবে আউট হয়েছেন ৪৬ বল খেলে ৩৪ রান করে।
বাংলাদেশের হয়ে সাকিব আল হাসান ১০ ওভার বোলিং করে ৩৫ রানে নিয়েছেন চার উইকেট। এতে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে ওয়ানডেতে চারশ উইকেটের মাইলফলক স্পর্শ করলেন সাকিব। ইবাদত হোসেন ৯ ওভারে ৩৮ রানে নিয়েছেন দুই উইকেট। তাইজুল ১০ ওভারে ৫৮ রানে নিয়েছেন দুটি উইকেট। মোস্তাফিজুর রহমান ও মেহেদি হাসান মিরাজ নিয়েছেন একটি করে উইকেট।
এর আগে বাংলাদেশের ইনিংস এগিয়েছে সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম ও নাজমুল হোসেন শান্তর ব্যাটে। ব্যাটিং সহায়ক চট্টগ্রামের উইকেটে আগে ব্যাটিং করে বড় স্কোর গড়ার চিন্তা ছিল বাংলাদেশের। কিন্তু সেই পরিকল্পনায় ধাক্কা আসে শুরুতেই। প্রথম ওয়ানডেতে ৭ রান করা লিটন দাস দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ফিরেছিলেন প্রথম বলেই। আজও ডাক মেরেছেন লিটন। ইনিংসের প্রথম ওভারেই স্যাম কারানের বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন লিটন।
অপরপ্রান্তে তামিম অবশ্য বেশ ভালোই খেলছিলেন। কিন্তু তৃতীয় ওভারে সেই কারানের বলেই লেগের দিকে খেলতে গিয়ে টাইমিং করতে পারলেন না। ব্যাটের কানায় লেগে বল চলে যায় পয়েন্টে দাঁড়ানো জেমস ভিন্সের হাতে। ৬ বলে ১১ রান করে ফেরেন তামিম।
১৭ রানে দুই ওপেনারকে হারানো বাংলাদেশকে তারপর টেনেছেন নাজমুল হোসেন শান্ত ও মুশফিকুর রহিম। ধস ঠেকাতে শুরুতে রানের চিন্তা বাদ দিয়ে উইকেটে পড়ে থাকতে চেয়েছেন মুশফিক। অনেকদিন যাবত অফ ফর্মে থাকা মুশফিক তারপর বাড়িয়েছেন রানের গতি। তৃতীয় উইকেটে মুশফিক-শান্তর জুটি ছিল ৯৮ রানের। কিন্তু নিজের ভুলে শান্ত রান আউট হয়ে ফিরলে আবারও বিপদে পরে বাংলাদেশ।
মুশফিকুর রহিমর সিঙ্গেল কলে দৌড় দিয়ে আবার থেমে যান খানিক আগে ফিফটি পূর্ণ করা শাস্ত। পরে আবারও দৌড়ে ক্রিজে পৌঁছুতে পারেননি সময় মতো। ৭১ বলে ৫ চারে ৫৩ রান করে রান আউট হওয়া শান্তকে মাঠ ছাড়ার সময় নিজের সঙ্গে গজরাতে দেখা যায়। বাংলাদেশও যেন গতিটা হারিয়ে ফেলে।
দারুণ খেলতে থাকা মুশফিকুর রহিমকে দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতে সরাসরি বোল্ড করেন আদিল রশিদ। খানিক বাদে আদিলের আরেকটা দুর্দান্ত ডেলিভারিতে ফেরেন মাহমুদউল্লাহও। বাকি সময়ে আফিফ হোসেন ধ্রুব ও মেহেদি হাসান মিরাজরাও দাঁড়াতে পারেননি। একপ্রান্ত আগলে রেখে সাকিবই কেবল ইংলিশদের বিপক্ষে প্রতিরোধ গড়তে পারলেন। বাংলাদেশ আড়াইশর কাছাকাছি গেলও সেই কারণেই।
৪৯তম ওভারে জোফরা আর্চারকে সীমানা ছাড়া করতে গিয়ে জেসন রয়ের অবিশ্বাস্য এক ক্যাচ হয়েছেন সাকিব। তার আগে ৭১ কল খেলে ৭টি চারে সাহায্যে ৭৫ রান করেন তিনি। মুশফিকুর রহিম ৭০ রান করতে খেলেছেন ৯৩ বল, চার মেরেছেন ৬টি। এছাড়া ১৫ রান করেছেন আফিফ হোসেন ধ্রুব। ৪৮.৫ ওভারে ২৪৬ রান তুলে গুটিয়ে যায় বাংলাদেশ।
ইংল্যান্ডের হয়ে ৩৫ রানে তিন উইকেট নিয়েছেন জোফরা আর্চার। আদিল রশিদ ২১ রানে ও স্যাম কারান ৫১ রানে দুটি করে উইকেট নেন।