সুপ্রভাত ডেস্ক »
দুইবার বিপিএলের ফাইনাল খেললেও শিরোপা জিততে পারেনি বরিশাল। অষ্টম আসরে সুযোগ ছিল সেই আক্ষেপ মেটানোর। কিন্তু পারলেন না সাকিবরা। আগের দুই অধিনায়ক ব্র্যাড হজ-মাহমুদউল্লাহর মতোই হতাশ করেছেন। শেষ ওভারে বরিশালের জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল দশ রান। কিন্তু শহীদুলের শেষ ওভারে তৌহিদ হৃদয়-মুজিব উর রহমানরা প্রয়োজনীয় রানটাও নিতে পারলেন না। তাতে শ্বাসরুদ্ধকর ফাইনালে ১ রানের জয়ে তৃতীয়বার শিরোপা জিতেছে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স।
শুক্রবার মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে আগে ব্যাটিং করে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স ৯ উইকেট হারিয়ে ১৫১ রান সংগ্রহ করেছিল। জবাবে খেলতে নেমে ৮ উইকেটে ১৫০ রানে থামে বরিশালের ইনিংস।
এর আগে ২০১৫ এবং ২০১৮ সালে দুইবার বিপিএলের শিরোপা জিতেছিল কুমিল্লা। তবে এককভাবে তিনবার শিরোপা জিতে ঢাকা ছিল শীর্ষে। তাই ঢাকার মতো তৃতীয় শিরোপা জয়ের কৃতিত্ব অর্জন করেছে কুমিল্লাও।
শেষ ওভারে বরিশালের প্রয়োজন ছিল ১০ রান। শহীদুলের প্রথম চার বলে মুজিব-তৌহিদ মিলে নিতে পারেন ৫। বাকি ২ বলে প্রয়োজন হয় ৫ রানের। টান টান উত্তেজনার এই সময়েই থার্ডম্যানে ক্যাচ তুলে দেন তৌহিদ হৃদয়। কিন্তু কুমিল্লার ফিল্ডার তানভীর ক্যাচটা নিতে পারেননি। যে বলে তৌহিদের আউট হওয়ার কথা, সেই বলে পেয়ে যান গুরুৎপূর্ণ দুই রান! ফলে শেষ বলে প্রয়োজন দাঁড়ায় তিন রানের। কিন্তু হৃদয় দুই রান নিতে গেলে কপাল পোড়ে বরিশালের। রানআউট হন তিনি। আর তাতে ১ রানের দারুণ এক জয়ে বিপিএলের অষ্টম আসর শেষ করেছে কুমিল্লা।
অসাধারণ এই অর্জনে কুমিল্লার অধিনায়ক ইমরুল কায়েস নিজের জার্সি খুলেই আনন্দে মেতেছিলেন। পুরো দল তখন ভিক্টরি ল্যাপ দিয়ে ঢুকেছে ড্রেসিংরুমে।
তবে কুমিল্লার জয়ের পরিস্থিতি এতটা সহজে তৈরি হয়নি। ১৫২ রানের মাঝারি মানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে শুরুতে মুনিম শাহরিয়ার বিদায় নিলেও ঝড় তুলে খেলেছেন সৈকত আলী। তার ৩৪ বলে ৫৮ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংসেই ম্যাচটা সহজ হয়ে যায় বরিশালের কাছে। কিন্তু সহজ পথটা পরে কঠিন করে ফেলেন সাকিব-সোহান-হৃদয়-শান্তরা। পুরো টুর্নামেন্টে নিজের ছায়া হয়ে ছিলেন ব্যাটিং দানব ক্রিস গেইল। কিন্তু ফাইনালের মতো মঞ্চেও ঝলসে উঠতে পারেননি। ৩১ বলে খেলেছেন ৩৩ রানের শ্লথ এক ইনিংস। ম্যাচের আগের দিন অনুশীলন বাদ দিয়ে বিজ্ঞাপনচিত্র নিয়ে ব্যস্ত থাকা সাকিবও রান করতে পারেননি। ৭ বলে ৭ রান করে আউট হয়েছেন। ক্যারিবীয় বিস্ফোরক ব্যাটার ডোয়াইন ব্রাভোও ১ রানের বেশি করতে পারেননি।
তবু ১৭ ওভার পর্যন্ত ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ ছিল সাকিবের বরিশালের কাছে। কিন্তু নারিনের ১৮তম ওভারেই চিত্রনাট্য পাল্টে যায়। মাত্র ২ রান খরচ করে গুরুত্বপূর্ণ উইকেট ব্রাভোকে সাজঘরে পাঠিয়েছেন। ১৯তম ওভারে মোস্তাফিজ ৬ রান দিয়ে তুলে নেন শান্তকেও (১২)। তার পর শেষ ওভারেই দারুণ বোলিং করে কুমিল্লার শিরোপা নিশ্চিত করেছেন শহীদুল।
কুমিল্লার বোলারদের মধ্যে সুনীল নারিন ১৫ রানে দুটি উইকেট নিয়েছেন। এছাড়া তানভীর হায়দার ২৫ রান দিয়ে নেন দুটি উইকেট। মোস্তাফিজ-শহীদুল একটি করে উইকেট নিয়েছেন।
এর আগে আরেকটি নারিন ঝড়ের দেখা মিলেছিল। বিপিএলে ফাইনালে তার বিস্ফোরক ব্যাটিং দেখে অনেকেই ভেবেছিলেন, হয়তো বড় সংগ্রহ পাবে কুমিল্লা। কিন্তু ক্যারিবীয় ব্যাটারকে সাজঘরে ফেরাতেই বদলে গেলো দৃশ্যপট। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে ফরচুন বরিশালের বোলিংয়ে হুড়মুড় করে ভেঙে পড়েছে কুমিল্লার ব্যাটিং। তাতে পাওয়ার প্লেতে ৭৩ রান তোলা কুমিল্লা ছুড়ে দিতে পেরেছে ১৫২ রানের লক্ষ্য।
শুক্রবার টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামা কুমিল্লা দারুণ সূচনা করেছিল। যার পেছনে বড় অবদান সুনীল নারিনের। তবে তার বিদায়ের পর পর ছন্দপতন ঘটে ব্যাটিংয়ের। ক্যারিবীয় এই ব্যাটার যখন আউট হন, দলের রান ছিল দুই উইকেটে ৬৯। নারিনের বিদায়ে ২৬ রানে তুলতেই কুমিল্লা হারায় আরও ৪ উইকেট! আগের ম্যাচে ১৩ বলের হাফসেঞ্চুরিতে রেকর্ড করা নারিন ফাইনালেও খেলেছেন ৫৭ রানের ঝড়ো ইনিংস। সাকিবের বলে স্কয়ার লেগে তিন রান নিয়ে ২১ বলে পূরণ করেছেন অর্ধশত। সব মিলিয়ে ২৩ বলে ৫ চার ও ৫ ছক্কায় টর্নোডো ইনিংস খেলে রানার বলে নাজমুলের ক্যাচে বিদায় নেন তিনি।
নারিনের আউটের আগে অবশ্য সাকিবের আর্ম বলে লাইন মিস করে বোল্ড হন লিটন (৪)। এরপর থিতু হওয়ার আগেই ব্রাভোর দুর্দান্ত থ্রোতে রান আউট হয়েছেন মাহমুদুল হাসান জয় (৮)। ১০ রানের ব্যবধানে মুজিবকে রিটার্ন ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন প্রোটিয়া ব্যাটার ফাফ ডু প্লেসিও (৪)। ফাফকে ফেরালে ম্যাচের পুরো নিয়ন্ত্রণ চলে যায় বরিশালের কাছে। অধিনায়ক ইমরুলের দায়িত্ব ছিল দলকে উদ্ধার করার। কিন্তু সেটি করতে ব্যর্থ হয়েছেন অভিজ্ঞ এই ব্যাটার। ব্রাভোর বাউন্স খেলতে গিয়ে নুরুলকে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন নিয়েছেন ১২ রানে।
ইমরুলের বিদায়ের পর বিশেষজ্ঞ ব্যাটার হিসেবে ছিলেন কেবল আরিফুল। তিনিও কিছু করতে পারেননি। মুজিবের টার্ন নেওয়া বল সোজা ব্যাটে খেলতে গিয়েছিলেন। সেই বল উপড়ে দেয় আরিফুলের স্টাম্প। তাতে ৯৫ রানে ছয় উইকেট হারিয়ে কঠিন বিপর্যয়ে পড়ে যায় কুমিল্লা। সপ্তম উইকেটে মঈন ও রনি মিলে ৫৩ রানের জুটি করে লড়াকু সংগ্রহ এনে দিয়েছেন। শেষ ওভারের প্রথম বলে দুই রান নিতে গিয়ে রানআউট হন মঈন। ইংলিশ তারকা ৩২ বলে ২ চার ও ১ ছক্কায় ৩৮ রানের ইনিংস খেলেছেন। অন্যদিকে রনি খেলেছেন ২৭ বলে ১৯ রানের ইনিংস। মঈনের আউটের পর শেষ ৫ বলে আসে দুই রান, তাও অতিরিক্ত খাত থেকে। বরিশালের বোলারদের মধ্যে শেষ ওভারে ঝলক দেখান শফিকুল। আগের ৩ ওভারে ৩০ রান দেওয়া শফিকুল শেষ ওভারে ১ রান খরচায় দুটি উইকেট নিয়েছেন। অন্যদিকে মুজিব উর রহমান ২৭ রানে নেন দুটি উইকেট। এছাড়া সাকিব, ব্রাভো, রানা একটি করে উইকেট নিয়েছেন।