আম্পান এখন স্থল নিম্নচাপে রূপ নিয়ে দেশের উত্তরাঞ্চলে অবস্থান করছে। দেশের সমুদ্র বন্ধরগুলোকে মহাবিপদ সংকেত নামিয়ে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় আম্পান বাংলাদেশ উপকূলের কাছাকাছি চলে আসার পর বুধবার সকালে মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ১০ নম্বর এবং চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরে ৯ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখাতে বলেছিল বাংলাদেশের আবহাওয়া অফিস।
উপকূলীয় জেলার দ্বীপ ও চরের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ১০-১৫ ফুট বেশি উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে বলেও সতর্ক করে দেওয়া হয়েছিল।
সুপার সাইক্লোন আম্পান কিছুটা শক্তি হারিয়ে অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় রূপে বুধবার দুপুরের পর ভারতের পশ্চিমবঙ্গ উপকূলে আঘাত হানে। কলকাতার ওপর দিয়ে ঝড় বয়ে যাওয়ার সময় এর বাতাসের তীব্রতা ছিল ঘণ্টায় ১৩৩ কিলোমিটারের মত। ঘূর্ণিঝড়টি কলকাতা, দীঘাসহ আশেপাশে ব্যপক ক্ষতি করেছে বলে জানা গেছে।
ঘূর্ণিঝড় আম্পানের দুর্যোগে মধ্যে দেশের সাত জেলায় অন্তত ১২ জনের মৃত্যুর খবর দিয়েছেন স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিরা। গাছপালা ও ঘরবাড়ি উপড়ে যাওয়ার খবরও এসেছে। বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছে উপকূলের ১০ লাখ মানুষ।
জোয়ারের সময় ৪-৫ ফুট উচ্চতায় পানি ওঠায় কয়েক জায়গায় বাঁধ ভেঙেছে জানিয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর জানিয়েছে “ সরাসরি আমাদের দিকে এলে ক্ষতি বেশি হতো। তারপরও যে ক্ষতি হয়েছে ধীরে ধীরে তার বিস্তারিত চিত্র পাওয়া যাবে।”
আম্পান বুধবার রাতে বাংলাদেশ উপকূলে প্রবেশ করে। সন্ধ্যা ৭ টায় সাতক্ষীরায় বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১৫১ কিলোমিটার।
যশোর-ঝিনাইদহ পেরিয়ে এটি এখন দেশের উত্তরাঞ্চেলে স্থল নিম্নচাপ হিসেবে অবস্থান করছে। দিনভর এর প্রভাবে বৃষ্টি থাকবে। আরও বৃষ্টি ঝরিয়ে উত্তর-উত্তর পূর্ব দিকে অগ্রসর হতে হতে তা অস্তিত্ব হারাবে। তবে উপকূলীয় এলাকায় এখনও ঘণ্টায় ৪০-৫০ কিলোমিটার বেগে ঝড়ো হাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। সেই সঙ্গে অমাবস্যার প্রভাব ও বায়ুচাপের তারতম্যের কারণে কোথাও কোথাও স্বাভাবিকের চেয়ে ৪ থেকে ৬ ফুট বেশি উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, আম্পানের প্রভাবে সকাল ৬টা ২৪ ঘণ্টায় চুয়াডাঙ্গায় দেশের সর্বোচ্চ ২০৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। ঈশ্বরদীতে রেকর্ড করা হয়েছে ১৬০ মিলিমিটার, ঢাকায় ৭৪ মিলিমিটার।
শুক্রবার সকাল ৯ টা পর্যন্ত রাজশাহী, রংপুর, ময়মনসিংহ, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগের অনেক স্থানে ভারি (৪৪-৮৮ মিলিমিটার) থেকে অতি ভারি বর্ষণ (৮৯ মিলিমিটারের বেশি) বৃষ্টি হতে পারে বলে আভাস দিয়েছে অধিদপ্তর।
সুপার ঘূর্ণিঝড় আম্পান এমন সময়ে হানা দিল যখন গোটা বিশ্বের সঙ্গে বাংলাদেশও মহামারি কভিড-১৯ নিয়ে বিপদগ্রস্ত। এর সঙ্গে বর্তমানে চলছে রমজান মাস।
জাতিসংঘ সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, কভিডোত্তর বিশ্ব ভয়াবহ খাদ্যসংকটের মুখোমুখি হবে এবং তাতে কয়েক কোটি মানুষ মৃত্যুঝুঁকিতে পড়বে। এ অবস্থায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ফসল উৎপাদন বাড়াতে বারবার তাগিদ দিচ্ছেন যখন তখনই এই ঘূর্ণিঝড় বিপদের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। বোরো উৎপাদন আশাব্যঞ্জক হলেও অনেক স্থানে ঘরে ফসল তোলা সম্বব হয়নি। তাছাড়া সাইক্লোন বহু স্থানে সবজিক্ষেতেরও ক্ষতিসাধন করেছে।
সরকারি পর্যায়ে আগে থেকে সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নেওয়ায় এবার জানমালের ক্ষতি কম হয়েছে। তারপরও যতটুকু ক্ষতি হয়েছে তা পুষিয়ে নেওয়ার জন্য সবধরনের ব্যবস্থা নিতে হবে। অনেক স্থানে মানুষ বাড়িঘর হারিয়েছে। বেড়িবাঁধ ভেঙে যাওয়ায় ফসল ডুবে গেছে। সরকারের পক্ষ থেকে কৃষকদের সাহায্যে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। কারো অবহেলা বা সিদ্ধান্তহীনতার কারণে কৃষকদের যেন ক্ষতি বৃদ্ধি না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।