বিবিকা দেব :
হালকা সবুজ কচিপাতাদের ভিড়ে বসন্তরাজের আগমন। প্রকৃতির যত রকম ফুল আছে, সবাই যেন নিজেদের নিয়ে ব্যস্ত। রূপ ও সৌন্দর্যের বাহার দিয়ে মনভোলাবে বসন্তরাজকে। সূর্যটা এসব রঙবাহারি দেখতে ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়ে রাতের কোলে। রাতের ওইদিক থেকে বেশ সুখীভাব। সুযোগ বুঝে শুধু ফুলের গন্ধ নেবে। মাতাল গন্ধে বিভোর। তেমনি রাতের আঁধারে টাকার গন্ধে মাতাল মাঝি শাহজাহান।
নোয়াখালীর অন্তর্ভুক্ত হাতিয়া থানার কলাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। চতুর্দিকে পানির ঢেউ। নদী তীরবর্তী গ্রাম। ভরপূর্ণিমার জোয়ারের পানি উঠোনজুড়ে থই থই করে। বর্ষার কথা না হয় থাক। নদীর পানি তখন ফুলে-ফেঁপে একাকার। যথাযথ ব্যবস্থা স্টিমারের মাধ্যমে। কিছু ধানীজমি ছিল বাপদাদার রেখে যাওয়া। তিন ভাইয়ের ভাগে ভাগ হওয়াতে সেটুকু আর অবশিষ্ট রইল না। শুধু একটা করে জমি। আর পুকুরের কিছু অংশ। ইদানিং কেউ আর মাছের পোনা ফেলে না। মাছবিহীন পুকুরটা পচাপাতা নিয়ে ডোবাতে পরিণত হয়েছে। নিজের সঞ্চয়ে জমানো কিছু টাকা আর বাদ বাকি ঋণ করে একটা স্টিমার তৈরি করেছে। নদীর ভরা বুকে ভাসিয়ে মানুষ পারাপারে পরিবারের আর্থিক অবস্থা সচ্ছল করেছে।
অনেকে নামের সাথে ‘মাঝি’ যোগ করে। তখন থেকে শাহজাহান মাঝি নামে পরিচিত। আশেপাশে কয়েকটি গ্রামের মানুষ এই নামে বেশ ভালোভাবে চেনে তাকে। লম্বা একাহারা শরীরের গঠন। চ্যাপ্টা মুখ। চোখ দুটো মুখের আকার থেকে ছোট। অনেকেই হাসি-তামাশা করে হাতির চোখ বলে। এইসব উড়োকথা মাঝির কানে আসে না। তা কিন্তু নয়। ওসব কথা সে গায়ে মাখে না। মাখে কেবল টাকার গন্ধ। তার জন্য প্রচুর পরিশ্রম করতে রাজি আছে।
এর মধ্যে লাল টুকটুকে শাড়ি পরে বিলকিস আসে শাহজাহান মাঝির জীবনে। বিলকিস কিন্তু দ্বিতীয়পক্ষের স্ত্রী। প্রথম স্ত্রীর নাম আলেয়া। বাচ্চা জন্ম দিতে গিয়ে অকালে প্রাণত্যাগ করে। ছেলে না মেয়ে হয়েছে, তাও শাহজাহান মাঝির মা একবার চোখের দেখা দেখেনি। নানার বাড়ি স্থান পায় অবুঝ শিশু। খোঁজখবর তেমন নিতেন না। দিন-মাস পার হতে থাকে। এর মধ্যে বিলকিসের আগমন। তাকে এসব ঘটনা জানানো হয়নি।
হঠাৎ একদিন মেয়েটা মারা যায় যতেœর অভাবে। শাহজাহান মাঝির মধ্যে মেয়ের মৃত্যুর ছাপ পড়েনি। পাড়া-প্রতিবেশীর কানাঘুষাতে বিলকিসের কাছে এ খবর পৌঁছে। সাহস সঞ্চয় করে বিলকিস আর কিছুই জিজ্ঞেস করতে পারে না। কিছু আনন্দে, কিছুটা আতংকে বিলকিসের জীবন অতিবাহিত হচ্ছে। সকাল থেকে সারাদিন সংসারিক কাজে ব্যস্ত। অনেক রাত করে শাহজাহান মাঝি বাড়ি ফিরে। সারাদিনে কত আয় হলো তা নিয়ে হিসেব কষতে বসে। বিলকিস যেই ভাত খাওয়ার জন্য ডাকে, অমনি দাঁত খিঁচিয়ে ওঠে। ধমক খেয়ে বিলকিস চুপসে যায়। চোখের কোণে জলের ধারা টলটল করে। প্রতিবাদী হয়ে নাকটা ফুলে ওঠে। মলিন শাড়ির আঁচলটা টেনে চোখ মুছে। আড়াল থেকে দেখে শাহজাহান মাঝির মুখটা কেরোসিনের বাতির আলোয় গনগনে আগুন হয়ে জ¦লছে।
অনেক দিন হলো এ বাড়িতে বউ হয়ে এলো। মেয়ে হয়েছে বলে শাশুড়ি রোজ পাঁচকথা শুনিয়ে দেয়। বাপের বাড়ি নিয়ে খোঁটা দেয়। গায়ে হাত তোলে। দীর্ঘশ^াস আর কষ্টগুলো ছাইচাপা দিয়ে রাখে। নিয়তির যাঁতাকলে পিষে যাচ্ছে মেহেদি রাঙানো কারুকাজ। নিশুতি রাতে একঝাঁক জোনাকি যেমন একটু একটু আলো দিয়ে রাতটাকে আপন করে নেয়, সেই ভাবে বিলকিসও সংসারের রাগ-অভিমান ও অবহেলা সহ্যর নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসে।
লেখাপড়া শেখার অদম্য আগ্রহ্য ছিল। বাড়িতে তিনবেলা খাবার জোগাড় করতে হিমশিম। অনেকগুলো ভাইবোন। সেখানে মেয়েদের পড়ালেখা শেখাবে কি করে। কেউ কারো দায়িত্ব নিতে চায় না। মলিন শাড়ির আঁচলের মতো স্বপ্নগুলো ছিঁড়তে থাকে চোখের সামনে। ছোট্ট তুলতুলে পরিটা বড় হতে থাকে। চুপচাপ বসে থাকে। মায়ের সব কাজে কৌতূহল। দাদির সাথে মাঝেমধ্যে পানের সখ্যতা গড়ে তোলে।
শাহজাহান মাঝি আজকে বড় কাঁঠালসমেত বাড়ি ফিরে। হাঁকডাক শুরু করে। যেন ডুবন্ত রসে মিষ্টির হাঁড়ি মাথায় করে এনেছে। বিলকিস যে সহধর্মিণী সেটা শাহজাহান মাঝির চেতনায়নেই। রাত্রে খাওয়ার পর সামান্য খুনসুটি নিয়ে মনোমালিন্য হয়। বিলকিসের ভাগ্যে কাঁঠাল জুটল না। কাঁঠালের মৌ মৌ গন্ধে সারা বাড়ি মাতাল। বিলকিসের জিভটা কাঁঠালের রসে ভিজে যাচ্ছে। চোখে দর্শন হল দাঁতে কিছুই কাটল না সেই রাতে। বন্যা হচ্ছে দুচোখে, আটকাতে পারছে না কিছুতেই। ছোট ছোট দুটো চোখে এত জল কোথা থেকে আসে। মনে হচ্ছে সমস্ত বাড়িঘর, সংসার সব তছনছ করে ছাড়বে। রাতের খাবার পেটে পড়েনি। কখন যে দুই চোখে ঘুম নেমে আসে টের পায়নি। ভোরে আবার সেই একই কাজ নিয়মিতভাবে করতে হবে। শাশুড়ি ডাক দিচ্ছে অজুর পানির জন্য।
টাকার নেশায় মানুষটা বুঁদ হয়ে থাকে। বড় বড় কন্ট্রাক্টর থেকে মোটাদাগের টাকা নিয়ে ইটভাটার কারখানা তৈরি করে। বাপদাদার বিঘে কয়েক জমির ওপর কারখানা ও কালোধোঁয়ার চিমনিটার স্থায়ী অবস্থান। খেটে খাওয়া মানুষ জুটে গেল। প্রতিদিন পোড়ামাটির তৈরি লাল টকটকে ইট মিনিট্রাক এবং ট্রলারে করে বিভিন্ন জায়গায় চালান দেয়। বছর ফিরতে কাঁচাপয়সার গন্ধে বিভোর। পিছন ফিরে জীবনের দিকে আর তাকাতে হয়নি। টাকা আর কেবল টাকা। অভাব ঘুচল কিন্তু মাঝির স্বভাব ঘুচল না।
সেই উগ্র মেজাজে, কথার ধরন, কথায় কথায় অপমান করা দিন দিন বাড়তে থাকে। বছরের পর বছর শেষ হতে থাকে সময়ের সাথে। মেয়ের সংখ্যা তিন। শাশুড়ি নাতির মুখ না দেখেই পৃথিবী ছেড়ে বিদায় নিলেন। অনেকটা রাগ ছিল মনে বিলকিসের প্রতি। ছেলের জন্ম দিল না বলে। তাতে বিলকিস কিছুই মনে করতো না। সর্বদা মায়ের মতো দেখতো। সেবা-যতেœর দিকে নজর দিত।
বিকেলটা ছিল স্বচ্ছতায় ভরপুর। সবে সন্ধ্যাটা একটু একটু করে গাঢ় হতে থাকে। ফুটন্ত চায়ের লিকারের মতো ঠিক তখনি বাঁকা চাঁদের মাথাটা আকাশ ফুঁড়ে উঁকি দিচ্ছে। গ্রামশুদ্ধ সবাই আনন্দে ভাসে। আবার প্রতিবারের মতো রোজা উপস্থিত। সংযম ও ত্যাগের মাস মাহে রমজান। তাতে যে একটু স্বস্তির নিশ^াস নেবে তারও উপায় নেই। টাকার লোভে অন্ধ হয়ে মানুষটা সেই আগের মতো। মাঝে মাঝে ভেবে কুল পায় না।
আসলে মানুষটার সাথে বিলকিসের সম্পর্ক কী? সম্পর্ক কাকে বলে? অনেক দিনের সংসার জীবনে হতে পারেনি ভালো স্বামী কিংবা আদর্শ বাবা। বিলকিসকে জড়বস্তুর মতো পায়ে মাড়াতে দ্বিধা করে না। সম্পর্ক পাতানো আতœীয়স্বজন বাড়তে থাকে। পাঁচটাকা খরচের প্রয়োজনে পাঁচ টাকার হাজার অপব্যবহারও বাড়তেই থাকে।
আড়ালে আত্মীয়স্বজন টাকা চাইতে থাকে। টাকা না দিয়ে কোনো উপায় নেই। চোখের লজ্জা বিবেকের কাছে নজরবন্দি। এভাবে জলের মতো টাকার স্রোত চলতে থাকে। কয়েক বছরের ব্যবধানে ঋণের পরিমান মাথা ছুঁই-ছুঁই। পাওনাদার দুয়ারে এসে পাঁচ কথা শুনিয়ে দেয়। ইটভাটার শ্রমিকের পরিশ্রমের বেতন বকেয়া। মালিকপক্ষ থেকে অগ্রিম টাকা নিয়ে খরচ বেড়েই গেল। শাহজাহান মাঝির টাকার স্রোত অচিরেই বিলীন হতে থাকে। আত্ম অহংকারে মানুষটার ভরাডুবি হল পূর্ণ জোয়ারে। বালির পাহাড় হয়ে ধসে পড়ে শাহজাহান মাঝির অঙ্গপ্রত্যঙ্গ হাড়মজ্জায়।
একদিন রাতের আঁধারে কোন পিছুটানের কথা না ভেবে চট্টগ্রাম শহরে পালিয়ে আসে। ঋণের দায়ে আসতে বাধ্য হল। মেয়েদের কথা, বিলকিসের কথা এক নিমেষেই আবর্জনার মতো ছুঁড়ে ফেলে দেয়। পূর্ব পরিচিত এক চাচাতো ভাইয়ের বাড়িতে আশ্রয় নেয়। এতোদিন অন্যকে দিয়ে কাজ করিয়েছে। নিরুপায় শাহজাহান মাঝি। নিজেকে কাজ করে টাকা উপার্জন করতে হচ্ছে।
অপরিচিত জায়গায় চাইলে তো সহজে কেউ কাজ দেবে না। পরিচিত লোকের প্রয়োজন আছে। চাচাতো ভাইয়ের মাধ্যমে কাজে যোগান আসে। রাস্তার মাটি কাটা দিয়ে কাজ শুরু হয়। সারাদিনের পরিশ্রমের টাকা হাতে নিয়ে হতাশ শাহজাহান মাঝি। নিজের পেট চালাবে নাকি বাড়িতে আরো চারজনের মুখের খাবার তুলে দেবে। স্থির করে আপাতত নিজের চিন্তা করি। কথায় বলে নিজে বাঁচলে বাপের নাম। অন্যদিকে বিলকিসের করুণ অবস্থা। আর পাঁচটা চাহিদার থেকে পেটে ভাতের চাহিদা অনেক বড়। সকাল-বিকাল টাকার জন্য মানুষ আসতে থাকে। গ্রামে লজ্জায় মুখ দেখানো দায় হয়েছে। বসতভিটে ছাড়া বাকি কয়েক বিঘে ধানীজমি সবই দখল হয়ে গেছে। যতদিন টাকা পরিশোধ না করবে, ততদিন জমি পাওনাদারের কাছে জিম্মি থাকবে।
বড় মেয়েটার স্কুলের পরীক্ষার ফি বাকি। মেজোটা স্কুলে পড়ে না। ছোট মেয়েটা হামাগুড়ি থেকে সবে একপা-দুপা হাঁটতে শিখেছে। কিভাবে বেঁচে থাকবে। সেই চিন্তাটা রাতদিন মাথার ভেতরে ঘুরপাক খেতে থাকে। বছরের ছয় মাস অভাব-অনটনে কাটতে থাকে। বাপের বাড়ি হতে কত সাহায্য করবে। নিজের বিবেকের কাছে বারবার পরাজিত সৈনিক বিলকিস। অবশেষে পথখরচের টাকা জোগাড় করে।
সংসারের মায়াত্যাগ করে। একটা মেয়ে কোলে, দুটো হাতে নিয়ে চট্টগ্রাম শহরের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। বিধাতা হয়তো সুখ দেয় নাই। এজন্যই মানুষটার কাছে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক, বাচ্চাদের সাথে বাবার সম্পর্ক সবই মূল্যহীন। না হলে কীভাবে সবকিছু ছেড়ে দিয়ে নিজেকে নিয়ে পালালো শাহজাহান মাঝি। অস্থায়ী ভরসা। উৎকন্ঠা নিয়ে চট্টগ্রাম শহরে বিলকিসের অভিযাত্রা শুরু হয়। এতোদিন নদীর কোলে বসবাস ছিল। চট্টগ্রাম শহরে বিভিন্ন রকমের গাড়ি দেখে মেয়েরা কৌতূহলে এদিক-ওদিক তাকাচ্ছে। পেটে ক্ষুধার পুকুর। মলিন দেহ, অবসন্ন মন নিয়ে অবশেষে খুঁজে পেল সেই চাচাতো ভাইয়ের ঠিকানা। মেয়েরা তাদের বাবা পেয়ে যেন স্বর্গ পেয়েছে। বিলকিসের মুখে কোনো কথা নেই। শুধু আগুনঝরা চোখে শাহজাহান মাঝিকে এক পলক দেখে নিল। মানুষ নাকি অন্য কোনো প্রাণী।
এতদিনের জমে থাকা রাগ-অভিমান, অভিযোগ সবই একত্রে চোখের জলে বাঁধভাঙা স্রোত। বছর মাস গড়াতে থাকে সময়ের বিবর্তনে। বিলকিসের অন্য এক জীবন যাত্রা শুরু। ইটভাঙার কাজ করে। অতিরিক্ত পরিশ্রমে অভুক্ত শরীর মাটির মতো ঝুরঝুর করে ঝরে পড়ে। তারপর বিয়ে বাড়ির মসলা পিষে এবং বাসন মাজার কাজ। তবু মানুষটার সংসারে অবহেলিত। মাজারের পানি পড়া, তাবিজ কবজ কিছুই বাদ পড়েনি। একটা ছেলে জন্মানোর আশায়। রাতদিন এত খাটুনি করতে হবে, কোনো দিন কল্পনায়ও আসে নাই। সময় গড়িয়ে যাচ্ছে নিজস্ব গতিতে।
দুই বছর অতিক্রিম হলো। বড় মেয়েটাকে এক নেভি অফিসার সঙ্গে নিয়ে গেলেন। পড়ালেখা, খাবার, ভালো পোশাক সব দায়িত্ব নেভি অফিসারের। মেজ মেয়েটা অন্য বড়লোকের বাড়িতে কাজ করতো। ছোটমেয়েটা সাথে ছিল। প্রতিবছর ঈদে বাড়ি আসে। নিজেদের পেট চালাতে অক্ষম। মেয়েদের ভরণপোষণ কীভাবে করবে। তাই নিতান্ত বাধ্য হয়ে অন্যের বাড়িতে কাজের লোকের যোগান দেয়।
বিলকিস আবার পোয়াতি। কত মানত মাজারে, শুধু একটা ছেলের আশায়। বংশের বাতি জ¦ালাবে শাহজাহান মাঝির শেষ বক্তব্য। ছেলে না হলে শাহজাহান মাঝি অন্যত্র সংসার করবে। অবশেষে বিলকিসের কাক্সিক্ষত সেই পুত্রসন্তানের জন্ম হলো।
শূন্য চোখের কোলটা জলে ভরে উঠল। সময়ের খাতায় জীবনের অংকটা তুলে রাখে এলোমেলো ভাবে। মাথায় কালো চুলের ফাঁকে সাদা চুলের সাথে বয়সটা দ্রুত বেড়ে গেল। বড় ও মেজ মেয়েদের বিয়ে হল। বড়টা নিজে পছন্দ করে, মেজটাও। ভেবেছিলাম নিজে কষ্ট করেছি, মেয়েরা সুখী হবে। তবু নিয়তির চাকায় পিষ্ট জীবন। বিলকিসের মতই কেউ সুখি হতে পারে না। যতদিন থাকবে সংগ্রাম করে বাঁচতে হবে। আগের মতো আর পরিশ্রম করতে পারে না। পায়ের হাড়ের ক্ষয়রোগ হয়েছে। ভালো করে দুপায়ে হাঁটতে পারে না। শাহজাহান মাঝির কোনো পরিবর্তন নেই। এখনো বাপ তুলে গালিগালাজ করে। গায়ে হাত তোলা নতুন কিছু নয়। এটার কোনো পরিবর্তন হচ্ছে না। বহাল রেখেছে গায়ে হাত তুলে মারধর করা। এত কষ্টের মধ্যেও বেঁচে আছে বিলকিস। মৃত্যুও বিলকিসকে পাশ কাটিয়ে অন্যপাশে দাঁড়িয়ে খিলখিলিয়ে হাসে যেন। বেঁচে থাকার কোনো দাম নেই। শ^াস-প্রশ^াসটা যেন আগুনের চিমনি।
বিয়ের পর থেকে এক চিলতে সুখ অনুভব করার সময় হয়নি। সব সময়ের জন্য ভয়-আতংক, অকথ্য ভাষায় গালি শুনেছে। শাহজাহান মাঝি নিজের প্রয়োজনটা আগে বুঝে নেয়।
দিনের আলোর মুখোমুখি সন্ধ্যাটা। ঘরে আলো দিতে হবে। সুইচটা দিতেই বিদ্যুৎটা চলে গেছে। এখনো ঘরে কেরোসিনের বাতি জ¦ালানো প্রচলন আছে। জীবনের মতো একপাশে অন্ধকার আর একপাশে নিবু নিবু আলো। ঢেউয়ের মতো পুরনো স্মৃতিগুলো আছড়ে পড়ে মনের আঙিনা জুড়ে। বাতির তেল ক্রমে নিঃশেষ হয়ে সলতেটা জ¦লতে থাকে। ক্রমশ আলো ক্ষীণ হতে থাকে। একটা সময় নিবে যাবে। বিলকিসের জীবনের সুখের মতো।