মানতে হবে ২০ শর্ত
পছন্দের জায়গা পেল দুদল
সুপ্রভাত ডেস্ক
এক দফার আন্দোলনে থাকা বিএনপি এবং ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে ২০ শর্তে তাদের পছন্দের জায়গায় সমাবেশ করার অনুমতি দিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ।
শনিবার বেলা ২টায় নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে দলটির মহাসমাবেশ শুরু হবে, যেখান থেকে তাদের আন্দোলনের ‘মহাযাত্রা’ শুরু হওয়ার কথা।
এর পাল্টায় শন্তি ও উন্নয়ন সমাবেশের ডাক দিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। বেলা আড়াইটায় বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেইটে তাদের সমাবেশের সময় দেওয়া হলেও নেতাকর্মীদের বেলা ১১টা থেকেই জমায়েত হতে বলা হয়েছে। খবর বিডিনিউজ।
ঢাকা মহানগর পুলিশের যুগ্ন কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার শুক্রবার রাত ৮টার দিকে বলেন, ২০টি শর্তে বিএনপি ও আওয়ামী লীগকে সমাবেশের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
বিএনপির পাশাপাশি সমমনা দল ও জোটগুলোও যুগপৎ আন্দোলনের অংশ হিসেবে শনিবার ভিন্ন ভিন্ন স্থানে কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। যুগপৎ আন্দোলনে না থাকলেও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে মতিঝিলের শাপলা চত্বরে সমাবেশ করার ঘোষণা দিয়ে রেখেছে জামায়াতে ইসলামী।
বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, একই ধরনের শর্তে ২১টি দল শনিবার সমাবেশ করার অনুমতি পেয়েছে। তবে নিবন্ধনহীন জামায়াতে ইসলামীকে সমাবেশের অনুমতি দেওয়া হয়নি।
তিনি বলেন, জামায়াত মাঠে নামলেই তাদের কঠোর হস্তে দমন করা হবে।
এর আগে অতিরিক্ত কমিশনার খন্দকার মহিদ উদ্দিন বলেন, ‘জামায়াত যদি মাঠে নামে, প্রচলিত আইনে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে গত ১২ জুলাই থেকে রাজপথে ধারাবাহিক কর্মসূচি পালন করে আসছে বিএনপি ও সমমনারা। ২৮ অক্টোবর ঢাকার মহাসমাবেশে তাদের ‘মহাযাত্রা’ শুরু হবে বলে বিএনপি নেতারা ঘোষণা দিয়েছিলেন।
এই মহাসমাবেশের জন্য নয়া পল্টনের অনুমতি চেয়ে আবেদন করে বিএনপি। পরে আওয়ামী লীগ বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে শান্তি সমাবেশের ঘোষণা দেয়। পাল্টাপাল্টি ঘোষণায় জনমনে তৈরি হয় উদ্বেগ।
এ অবস্থায় ঢাকা মহানগর পুলিশ বিকল্প দুটি জায়গার নাম চেয়েছিল দল দুটির কাছ থেকে। তবে বিএনপি বৃহস্পতিবার জানিয়ে দেয়, নয়া পল্টন ছাড়া অন্য কোথাও সমাবেশ ‘সম্ভব নয়’। আর আওয়ামী লীগ বলে, বিএনপি নয়া পল্টনে থাকলে তারাও অবস্থান থেকে সরবে না।
পুরো এক দিন পর সার্বিক পরিস্থিতি যাচাই-বাছাই করে দুই দলকে তাদের চাহিদা অনুযায়ী সমাবেশ করার অনুমতি দিল ঢাকা মহানগর পুলিশ।
২০ শর্ত
অনুমতির যে চিঠি বিএনপি ও আওয়ামী লীগকে দেওয়া হয়েছে, দুই জায়গাতেই একই ধরনের ২০টি শর্ত রয়েছে। শর্তগুলো হচ্ছে-
১. এই অনুমতিপত্র স্থান ব্যবহারের অনুমতি নয়, স্থান ব্যবহারের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট থেকে অনুমোদন নিতে হবে।
২. স্থান ব্যবহারের অনুমতিপত্রে উল্লেখিত শর্তাবলী যথাযথভাবে পালন করতে হবে।
৩. অনুমোদিত স্থানের মধ্যেই সমাবেশ এর যাবতীয় কার্যক্রম সীমাবদ্ধ রাখতে হবে।
৪. বেলা ১২টার আগে কোনক্রমেই জনসমাগম করা যাবে না।
৫. নিরাপত্তার জন্য নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় পর্যাপ্ত সংখ্যক স্বেচ্ছাসেবক (দৃশ্যমান আইডি কার্ডসহ) নিয়োগ করতে হবে।
৬. নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় সমাবেশে আগতদের হ্যান্ড হেল্ড মেটাল ডিটেক্টরের মাধ্যমে (ভদ্রোচিতভাবে) চেকিং এর ব্যবস্থা করতে হবে।
৭. অনুমোদিত স্থানের বাইরে কোথাও লোক সমবেত হতে পারবে না।
৮. আজান, নামাজ ও অন্যান্য ধর্মীয় সংবেদনশীল সময়ে মাইক/শব্দযন্ত্র ব্যবহার করা যাবে না।
৯. ধর্মীয় অনুভূতির উপর আঘাত আসতে পারে এমন কোনো বিষয়ে ব্যঙ্গচিত্র প্রদর্শন, বক্তব্য প্রদান বা প্রচার করা যাবে না।
১০. অনুমোদিত সময়ের মধ্যে (বেলা ২টা থেকে ৫টা) সমাবেশের সার্বিক কার্যক্রম অবশ্যই শেষ করতে হবে।
১১. সমাবেশ সমাপ্তির পর যাওয়ার সময় রাস্তায় কোথাও কোনো সংক্ষিপ্ত সমাবেশ বা অবস্থান করা যাবে না।
১২. আদালতে সাজাপ্রাপ্ত কোনো ব্যক্তি সমাবেশে বক্তব্য দিতে পারবে না বা তার কোনো বক্তব্য সমাবেশে প্রচার করা যাবে না।
১৩. রাস্তার বাম লেন ন্যূনতম ব্যবহার করে সমাবেশ করতে হবে এবং অন্য লেনসমূহ কোনক্রমেই ব্যবহার করা যাবে না।
১৪. আইন-শৃঙ্খলা পরিপন্থী ও জননিরাপত্তা বিঘ্নিত হয় এমন কার্যকলাপ করা যাবে না।
১৫. রাষ্ট্রবিরোধী কোনো কার্যকলাপ ও বক্তব্য প্রদান করা যাবে না।
১৬. উসকানিমূলক কোনো বক্তব্য প্রদান বা প্রচারপত্র বিলি করা যাবে না।
১৭. সমাবেশে ব্যানারের আড়ালে কোন ধরনের লাঠি-সোঁটা বা রড সদৃশ কোনো বস্তু ব্যবহার করা যাবে না।
১৮. আইন-শৃঙ্খলার অবনতি ও কোন বিরূপ পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে আয়োজনকারী কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবেন।
১৯. উল্লিখিত শর্তাবলী যথাযথভাবে পালন না করলে তাৎক্ষণিকভাবে এই অনুমতির আদেশ বাতিল বলে গণ্য হবে।
২০. জনস্বার্থে কর্তৃপক্ষ কোনো কারণ দর্শানো ছাড়াই এ অনুমতি আদেশ বাতিল করার ক্ষমতা সংরক্ষণ করে।