শুভ্রজিৎ বড়ুয়া »
কর্ণফুলী নদীর তলদেশে জোরেশোরে চলছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের কাজ। এ টানেলের কাজ প্রায় ৯৫ শতাংশ শেষ হয়েছে। বর্তমানে চলছে ইলেকট্রো-মেকানিক্যালের কাজ। কিন্তু নগর থেকে তলদেশ দিয়ে আনোয়ারা যাওয়া গাড়িগুলোর গতি নিয়ে প্রশ্ন রয়ে যাচ্ছে। কেননা আনোয়ারা অংশে টানেলের সংযোগ সড়ক কাজে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে আনোয়ারা-কর্ণফুলীর তিনটি অংশ। ছয় লেনের রাস্তার চার লেন ঠিক রাখতে পারলেও তিনটি অংশে অধিগ্রহণ জটিলতায় কাজের অগ্রগতি আটকে আছে। ফলে এ বছরের শুরুতে টানেল উদ্বোধন করার পরও যান চলাচলে স¦াভাবিক করতে পুরো বছর লেগে যেতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, বঙ্গবন্ধু টানেল সংযোগ সড়কের সাথে সঙ্গতি রেখে যানবাহনের চাপ নিয়ন্ত্রণে আনোয়ারা ওয়াইজংশন থেকে কালাবিবিরি দীঘি পর্যন্ত ৮ দশমিক ১০ কিলোমিটার সড়ক ছয় লেনে এবং কালাবিবির দীঘি থেকে আনোয়ারা ফায়ার স্টেশন পর্যন্ত ২ দশমিক ৪ কিলোমিটার সড়কে ৫ দশমিক ৫ মিটার থেকে ৭ দশমিক ৩ মিটারের উন্নীতকরণ প্রকল্পের কাজ চলছে। তবে ভূমি অধিগ্রহণ কার্যক্রম শেষ না হওয়ায় ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসের নির্ধারিত সময়ে শেষ করা যায়নি ছয় লেনের কাজ। এছাড়া চলমান সড়ক বর্ধন প্রকল্পে চাতরি চৌমুহনী বাজারসহ বিভিন্ন স্থানে এখনো বিদ্যুতের খুঁটি সরানো হয়নি।
এর আগে ওয়াসা, সিইউএফএল ও কর্ণফুলী গ্যাস পাইপ লাইনের জন্য কালভার্টগুলো নির্মাণে বেশ বেগ পেতে হয়। পরবর্তীতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এনডিএ ক্রসিং থেকে কালাবিবির দীঘি মোড়ের ৮ দশমিক ১০ কিলোমিটার সড়কের ১৬ টি কালভার্ট সম্পূর্ণভাবে নির্মাণ শেষ করেছে। তবে বঙ্গবন্ধু টানেলের সাথে মিল রেখে চার লেন যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হবে। বাকি দুই লেনের জন্য ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় বাড়ানো হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সড়ক ও জনপথের একজন কর্মকর্তা জানান, সওজের নির্দেশ অনুযায়ী কন্ট্রাক্ট ডকুমেন্ট মোতাবেক প্রয়োজনীয় গুণগত মান পরীক্ষা করে প্রকল্পের কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে। প্রকল্পের ক্রসিং ওয়াই জংশন থেকে কালাবিবির দীঘি পর্যন্ত ৮ দশমিক ১০ কিলোমিটার বঙ্গবন্ধু টানেল সংযোগ সড়ক রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ প্রজেক্ট (কেপিএ)। এখানে সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার বাইরে নির্মাণ কাজের মান নিয়ে কোনো হেরফের করার সুযোগ নেই। তবে কিছু জায়গায় অধিগ্রহণের কাজ শেষ না হওয়ায় কাজে গতি আসছে না। টানেলের সাথে মিল রেখে রাস্তা চার লেন উন্মুক্ত করা হলেও সমস্যা হবে বর্তমান রাস্তার গাড়িগুলোর সাথেই টানেল থেকে বের হওয়া গাড়িগুলো চলাচল করবে। তখন বেশ কয়েকটি এলাকায় যানজট তৈরি হতে পারে।
অধিগ্রহণ জটিলতা নিয়ে ভূমি মালিকদের সঙ্গে কথা হয়। ২০২০ সালে গড়ে ওঠা আনোয়ারা চৌমুহনী এলাকার মার্কেটের মালিক বদরুল হক বলেন, ‘সরকার চাইলেতো আমাদের ছাড় দিতেই হবে। আমার মাকের্টের প্রায় ২০ থেকে ২৫ ফুটের মতো ছাড়তে হতে পারে। যদি যথাযথ ক্ষতিপূরণ পাই, তাহলে ভূমি ছাড়তে আমাদের আপত্তি কিসের! সরকারের উন্নয়ন কাজে প্রায় জায়গাতেই জমি ছাড়তে হচ্ছে। এখানেও একইভাবে হবে।’
এ প্রসঙ্গে দোহাজারী সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী ও ছয় লেন সড়কের প্রকল্প পরিচালক সুমন সিংহ বলেন, ‘টানেলের সাথে মিল রেখে ছয় লেনের মধ্যে মূল চার লেন তা অল্প কিছুদিনের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে। বাকি অংশটার কাজ এ বছরের ডিসেম্বরে পুরো শেষ হয়ে যাবে। ৩ দশমিক ১৮ হেক্টর ভূমি অধিগ্রহণ করা আছে। এর মধ্যে ২ দশমিক ৪ হেক্টর পেডি ল্যান্ড। এগুলো যাদের জায়গা তাদেরকে আমরা ৬ ধারা দিয়ে দিয়েছি। ৮ ধারাও দিয়ে দিবো। কিন্তু বাকি কিছু জায়গায় স্ট্রাকচার আছে। এগুলো পর্যায়ক্রমে শেষ হবে। এ সড়কের প্রকল্প ব্যয় আনুমানিক ৪০৭ কোটি টাকা। আশা করছি, নির্ধারিত সময়ে ও বাজেটে আমাদের কাজ শেষ হয়ে যাবে।























































