সুপ্রভাত ডেস্ক »
মিয়ানমারে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর উপর চালানো নির্যাতন-নিপীড়নের তথ্যানুসন্ধানের জন্য কক্সবাজার সফর করছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) প্রধান কৌঁসুলি করিম আসাদ আহমাদ খান। বুধবার কক্সবাজারে পৌঁছে বাংলাদেশের শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের সঙ্গে বৈঠক করেছেন নেদারল্যান্ডসের হেগভিত্তিক আদালতের এই আইনজীবী। খবর বিডিনিউজের।
রাখাইনে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর দমন-পীড়নের মুখে ১১ লাখের মতো রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিয়ে আছে।
মিয়ানমারের বাহিনীর সর্বশেষ অভিযানকে ‘জাতিগত নির্মূল অভিযান’ হিসেবে বর্ণনা করে আসছে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা। রোহিঙ্গাদের উপর চালানো ওই নির্যাতন ও নিপীড়নকে ইতোমধ্যে ‘জেনোসাইড’ হিসাবে স্বীকৃতি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র সরকার।
২০১৭ সালের ওই নির্যাতন ও হত্যাযজ্ঞ চালানোর কিছুদিন পর এরসঙ্গে জড়িতদের বিচারের আওতায় আনার প্রক্রিয়া শুরু করে আইসিসি। কিন্তু ওই আদালতের এখতিয়ার নিয়ে প্রশ্ন তোলে মিয়ানমার। কেননা, বাংলাদেশ আইসিসির সদস্যভুক্ত রাষ্ট্র হলেও মিয়ানমার এর সদস্য নয়।
তবে আইসিসির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, মিয়ানমার সদস্য রাষ্ট্র না হলেও রোহিঙ্গাদের নির্যাতনের ঘটনার বিচারে কোনো সমস্যা হবে না। এরপর দীর্ঘ শুনানি শেষে আদালতের আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর চালানো নির্যাতনের ব্যাপ্তি নিয়ে তদন্ত করছে আইসিসির প্রসিকিউশন বিভাগ।
তদন্ত প্রক্রিয়ায় তথ্যানুসন্ধানের অংশ হিসেবে চারদিনের সফরে মঙ্গলবার ঢাকায় পৌঁছে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন করিম আসাদ আহমাদ খান।
সফরের দ্বিতীয় দিন বুধবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতের পর কক্সবাজারে যান আইসিসির এই কৌঁসুলি।
শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, বুধবার বিকাল পৌনে ৫টার দিকে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) প্রধান কৌঁসুলি করিম এ এ খান কক্সবাজার পৌঁছান।
‘তার সঙ্গে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দুজন কর্মকর্তা রয়েছেন। তারা বিমানবন্দর থেকে সরাসরি শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের কার্যালয়ে আসেন।’
প্রতিনিধিদলের সদস্যরা কমিশনের সঙ্গে প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা বৈঠক করেন।
শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার কার্যালয় থেকেও আইসিসির বিভিন্ন রকম তথ্য সংগ্রহ করার পরিকল্পনার এর আগে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন।
বৈঠকে অংশ নেওয়া একাধিক কর্মকর্তা জানান, আইসিসির প্রধান কৌঁসুলি রোহিঙ্গা ক্যাম্পের পরিস্থিতি, আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থা ও তাদের সহায়তা নিয়ে আলোচনা করেন। এ সময় খাদ্য সহায়তা কমিয়ে দেওয়ায় তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
খাদ্য সহায়তা কমিয়ে দেওয়ায় ক্যাম্পের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে এবং ক্যাম্পের নারী ও শিশুদের উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে বলে আইসিসি কৌঁসুলি আশঙ্কা প্রকাশ করেন।
বৃহস্পতিবার আইসিসি প্রতিনিধিদলের সদস্যরা উখিয়ার ১ ও ১২ নম্বর ক্যাম্প পরিদর্শন করবেন। সেখানে তারা আইসিসি নির্ধারিত রোহিঙ্গা নারী ও পুরুষদের সঙ্গে কথা বলবেন। যাদের সঙ্গে কথা বলবেন তারা রোহিঙ্গা গণহত্যার মামলায় সাক্ষ্য দেবেন বলে জানানো হয়েছে।
বুধবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে করিম এ এ খানের সাক্ষাতের ছবি টুইটে প্রকাশ করে আইসিসি লিখেছে, আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচারে বৈশ্বিক নেতৃত্বের জন্য বাংলাদেশ ও শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন করিম খান।
টুইটে তিনি লিখেছেন, ‘জবাবদিহিতার জন্য অংশীদারিত্ব গভীর করতে দৃঢ় ও অভিন্ন লক্ষ্য।’
আর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাতের কথা টুইটারে জানিয়ে করিম খান বলেন, ‘আমরা একমত হয়েছি: বিশ্ব রোহিঙ্গা ভুলতে পারে না, এবং জবাবদিহিতার প্রয়োজনীয়তা, এটা নিশ্চিতে আমার কার্যালয় প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।’