সুপ্রভাত ডেস্ক »
একাদশ নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা বেশ সফল। ব্যাটিং অর্ডারের পরিবর্তনগুলোও কাজে লাগল। বড় রান তোলার লক্ষ্য পূরণ হলো। বোলিং মোটামুটি গোছানো হলো। সম্মিলিত পারফরমান্সে দাপুটে জয়ও ধরা দিল। যে লক্ষ্যগুলো নিয়ে সিরিজের শুরু, এই ম্যাচে ধরা দিল প্রায় সবকিছুই। রেকর্ড ব্যবধানের জয়ে সিরিজ শুরু করল বাংলাদেশ।
সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে শনিবার তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে আয়ারল্যান্ডকে ১৮৩ রানে উড়িয়ে দিল বাংলাদেশ।
ওয়ানডে ক্রিকেটের আঙিনায় ৩৭ বছরের পথচলায় ৪০৭ ম্যাচে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় জয় এটিই। পেছনে পড়ে গেল ২০২০ সালে এই মাঠেই জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ১৬৯ রানের জয়।
বাংলাদেশের শুরুটা যদিও পরিকল্পনার পথ ধরে এগোয়নি। অধিনায়ক তামিম ইকবাল রানে ফিরতে পারেননি। লিটন দাস ও নাজমুল হোসেন শান্ত ফেরেন থিতু হয়ে। তবে সাকিব আল হাসান ও তাওহিদ হৃদয়ের দুর্দান্ত ব্যাটিং আর দারুণ জুটির সঙ্গে মুশফিকের রহিমের ক্যামিও ইনিংসে বাংলাদেশ তোলে ৩৩৮ রান। ওয়ানডেতে যা বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় পুঁজি।
চারে নেমে ৮৯ বলে ৯৩ রানের ইনিংস খেলেন সাকিব। অভিষেক রাঙিয়ে হৃদয় করেন ৮৫ বলে ৯২। বাংলাদেশের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে অভিষেকে সেঞ্চুরির কীর্তি গড়তে পারেননি তিনি একটুর জন্য। তবে অভিষেকে দেশের সর্বোচ্চ ইনিংসে রেকর্ড গড়েন ঠিকই। ৬ বছরের বেশি সময় পর ৬ নম্বরে ব্যাটিংয়ে নেমে মুশফিক খেলেন ২৬ বলে ৪৪ রানের ইনিংস।
বিশাল রান তাড়ায় উদ্বোধনী জুটিতে লড়াইয়ের ইঙ্গিত দিলেও পরে ভেঙে পড়ে আয়ারল্যান্ড। স্রেফ ৩০ ওভার পেরিয়েই অল আউট হয়ে যায় তারা ১৫৫ রানে।
একটু খরুচে হলেও ইবাদত হোসেনের শিকার ৪ উইকেট, দুর্দান্ত বোলিংয়ের ধারাবাহিকতায় তাসকিন আহমেদের প্রাপ্তি দুটি। উইকেটের পেছনে মুশফিক গ্লাভসবন্দি করেন রেকর্ড ছোঁয়া ৫ ক্যাচ।
টস ভাগ্যকে এ দিন পাশে পায়নি বাংলাদেশ। তবে আগে ব্যাটিংয়ের সুযোগ এসে যায়। উইকেট শুরুর দিকে ছিল একটু চ্যালেঞ্জিং, কিছু বল থমকে আসে, বাউন্স ছিল খানিকটা অসমান। তৃতীয় ওভারে তামিম আউট হয়ে যান যদিও আলগা শটেই।
তবে একটু সময় গড়ানোর পর উইকেট পুরোপুরিই ব্যাটিং সহায়ক হয়ে ওঠে। লিটন ও শান্ত ইঙ্গিত দেন জুটি গড়ার। কিন্তু কেউই পারেননি লম্বা সময় টিকতে। কার্টিস ক্যাম্পারের বলে লিটন বাজেভাবে আউট হন ২৬ রান করে। অফ স্পিনার অ্যান্ডি ম্যাকব্রাইনের বলে ব্যাট-প্যাডের ফাঁক গলে বোল্ড হন ২৫ রান করা শান্ত।
সপ্তদশ ওভারে বাংলাদেশের রান তখন ৩ উইকেটে ৮১। সেখান থেকেই সাকিব ও হৃদয়ের দুর্দান্ত জুটি।
আগের সিরিজের পাঁচে ব্যাট করা সাকিবকে তুলে আনা হয় চারে। অভিষেক হৃদয়কে নামানো হয় পাঁচে। সাকিব শুরুর দিকেই দুটি বাউন্ডারি মেরে এরপর একটু সাবধানে এগোতে থাকেন। হৃদয় ওয়ানডে ক্রিকেটে রানের পথে ছোটা শুরু করে দ্বিতীয় বলেই বাউন্ডারিতে। এরপর দারুণ সাবলিল ব্যাটিংয়ে এগোতে থাকেন। কখনোই তাকে দেখে মনে হয়নি অভিষিক্ত ব্যাটসম্যান।
এই জুটির পথে বাংলাদেশের দ্বিতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে ৭ হাজার রান পূর্ণ করেন সাকিব। ফিফটিতে পা রাখেন তিনি ৬৫ বলে, বাউন্ডারি সেখানে শুরুর সেই দুটিই। হৃদয়ের ফিফটি আসে ৫৫ বলে। দুজনের জুটির শতরান আসে ১০৩ বলে।
পঞ্চাশ পেরিয়ে রানের গতি বাড়ান দুজনই। হ্যারি টেক্টরের অফ স্পিনে এক ওভারেই ৫ বাউন্ডারিসহ ২২ রান তোলেন সাকিব। দশম ওয়ানডে সেঞ্চুরিও ছিল তারা নাগালেই। কিন্তু গ্রাহাম হিউমের বেশ বাইরের বলে উইকেটের পেছনে ধরা পড়েন তিনি সেঞ্চুরি থেকে ৭ রান দূরে।
দারুণ ফর্মে থাকলেও ওয়ানডেতে তার সেঞ্চুরি নেই টানা ২৫ ইনিংসে, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তিন অঙ্ক ছুঁতে পারলেন না টানা ৮২ ইনিংস। চতুর্থ উইকেট জুটি থামেন ১২৫ বলে ১৩৫ রানে।
শক্ত ভিতের পর বাংলাদেশের ইনিংস বড় রানের পথে ছোটে পরের জুটিতে। মুশফিক নেমেই বিধ্বংসী ব্যাটিং শুরু করেন। হৃদয় তো তখন আগ্রাসী হয়ে উঠেছেনই। দুজনের জুটিতে ৮০ রান আসে স্রেফ ৪৯ বলে।
হৃদয়ের হৃদয়ভাঙা বিদায়ে থামে এই জুটি। হিউমের ফুল লেংথ বল অনসাইডে খেলতে গিয়ে বোল্ড হয়ে যান তিনি। অভিষেকে ৫ নম্বরে নেমে ওয়ানডে ইতিহাসের প্রথম সেঞ্চুরি করতে পারেনি তিনি ৮ রানের জন্য।
৩টি করে চার ও ছক্কার ঝড়ো ইনিংস শেষে মুশফিক বিদায় নেন হৃদয়ের ১ বল আগেই। শেষ দিকে একটি করে চার-ছক্কায় ১০ বলে ১৭ করেন ইয়াসির, ম্যাচের সবচেয়ে বড় ছক্কাটি আসে তাসকিনের ব্যাট থেকে। প্রথম ৩০ ওভারে ১৫৫ রান তোলা বাংলাদেশ পরের ২০ ওভারে তোলে ১৮৩। শেষ ১০ ওভারে আসে ৯৬।
রান তাড়ায় আইরিশদের আশা জাগানিয়া শুরু এনে দেন পল স্টার্লিং ও স্টিভেন ডোহেনি। দ্বাদশ ওভারে ডোহেনিকে ৩৪ রানে ফিরিয়ে ৬০ রানের জুটি ভাঙেন সাকিব। পরের ওভারে ইবাদতের বলে মুশফিকের দুর্দান্ত ক্যাচে বিদায় নেন স্টার্লিং। এরপর তারা উইকেট হারাতে তাকে নিয়মিত। ১৬ রানের মধ্যে হারিয়ে ফেলে তারা ৫ উইকেট।
জর্জ ডকরেল সাতে নেমে ৪৭ বলে ৪৫ করে একটু এগিয়ে নেন দলকে। ১৪২ কিলোমিটার গতির ইয়র্কারে তাকে বোল্ড করে ম্যাচ শেষ করে দেন ইবাদত। পূর্ণ করেন ৪ উইকেটও। ৬ ম্যাচের ক্যারিয়ারে ২ বার এই স্বাদ পেয়ে গেলেন তিনি।
শেষ দিকে মার্ক অ্যাডায়ারের ক্যাচ নিয়ে ৫ ডিসমিসাল হয়ে যায় মুশফিকের। বাংলাদেশের হয়ে রেকর্ডে তিনি স্পর্শ করলেন নিজেকেই, যেখানে সঙ্গী পূর্বসূরী খালেদ মাসুদও।
সব মিলিয়ে অনেক অর্জনের ম্যাচ। এমনিতে খালি চোখে এই সিরিজে বাংলাদেশের পাওয়ার সুযোগ কম, হারানোর শঙ্কা অনেক বেশি। তবে প্রথম ম্যাচে অন্তত দল নিশ্চিত করল প্রাপ্তি অনেক বেশি।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ: ৫০ ওভারে ৩৩৮/৮ (তামিম ৩, লিটন ২৬, শান্ত ২৫, সাকিব ৯৩, হৃদয় ৯২, মুশফিক ৪৪, ইয়াসির ১৭, তাসকিন ১১, নাসুম ১১*, মুস্তাফিজ ১*; অ্যাডায়ার ১০-০-৭৭-১, হিউম ১০-০-৬০-৪, ম্যাকব্রাইন ১০-০-৪৭-১, ক্যাম্পার ৮-০-৫৬-১, টেক্টর ৬-০-৪৫-০, ডেলানি ৬-০-৫০-০)।
আয়ারল্যান্ড: ৩০.৫ ওভারে ১৫৫ (ডোহেনি ৩৪, স্টার্লিং ২২, বালবার্নি ৫, টেক্টর ৩, ক্যাম্পার ১৬, ডকরেল ৪৫, ডেলানি ১, ম্যাকব্রাইন ০, অ্যাডায়ার ১৩, হিউম ২*; মুস্তাফিজ ৬-০-৩১-০, তাসকিন ৬-২-১৫-২, নাসুম ৮-০-৪৩-৩, সাকিব ৪-০-২৩-১, ইবাদত ৬.৫-০-৪২-৪)।
ফল: বাংলাদেশ ১৮৩ রানে জয়ী।
সিরিজ: ৩ ম্যাচ সিরিজে বাংলাদেশ ১-০তে এগিয়ে।
ম্যান অব দা ম্যাচ: তাওহিদ হৃদয়।