সুপ্রভাত স্পোর্টস ডেস্ক »
চট্টগ্রাম জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে সোমবার তৃতীয় ওয়ানডেতে শ্রীলঙ্কাকে ৪ উইকেটে হারাল বাংলাদেশ। ফলে ২-১ ব্যবধানে তিন ম্যাচের সিরিজ জিতে নিল নাজমুল হোসেন শান্তর দল। দ্বিপাক্ষিক ওয়ানডে সিরিজে এই নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো লঙ্কানদের হারাল টাইগাররা।
শ্রীলঙ্কার দেওয়া ২৩৬ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে পারেননি সৌম্য সরকার। ঘাড়ে চোট পাওয়া এই ওপেনারের কনকাশন বদলি হিসেবে ইনিংস শুরু করেন তানজিদ হাসান। একাদশের বাইরে থেকে এসে বাজিমাত করেছেন এই তরুণ।
তাঁর ৮১ বলে ৮৪ রানের অনবদ্য ইনিংসের সঙ্গে শেষদিকে রিশাদ হোসেনের টর্নেডো ইনিংসে ৪ উইকেটে জয় পেয়েছে বাংলাদেশ।
রিশাদ হোসেন যখন ক্রিজে গেলেন, তখন ৮৩ বলে ৫৮ রান দরকার ছিল বাংলাদেশের। হাতে মাত্র ৪ উইকেট থাকায় কিছুটা চাপে ছিল টাইগাররা। তবে সেই চাপ উড়িয়ে ব্যাট হাতে রিশাদ আবির্ভূত হন রুদ্রমূর্তিতে।
পাল্টা আক্রমণে চার-ছয়ের ফুলঝুরি ছুটিয়ে স্রেফ ১৮ বলে ৪৮ রানে অপরাজিত থাকেন তিনি। তার ব্যাট থেকে আসে ৫ চার ও ৪ ছক্কা। এতে ২৩৬ রান তাড়ায় ৫৮ বল হাতে রেখেই শেষ হাসি হাসে স্বাগতিকরা। ঝড়ো ব্যাটিংয়ের আগে বল হাতে ১ উইকেট নেন রিশাদ। সব মিলিয়ে ম্যাচসেরার পুরস্কার উঠেছে তার হাতে।
রিশাদের আগে ৮১ বলে ৮৪ রানের ইনিংস খেলেন সৌম্য সরকারের কনকাশন বদলি হিসেবে সুযোগ পাওয়া তানজিদ হাসান তামিম। এছাড়া, মুশফিকুর রহিম অপরাজিত থাকেন ৩৬ বলে ৩৭ রানে। রিশাদের সঙ্গে তার ২৫ বলের অবিচ্ছিন্ন বিধ্বংসী জুটিতে আসে ৫৯ রান। বলা বাহুল্য, সেখানে সিংহভাগই রিশাদের অবদান।
লঙ্কানদের হয়ে ৪৮ রানে ৪ উইকেট নেন লাহিরু কুমারা। রিশাদের তাণ্ডব হজম করা ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা ২ উইকেট নিতে খরচ করেন ৬৪ রান।
এর আগে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামা শ্রীলঙ্কা শুরুতেই বিপদে পড়ে যায়। দুর্দান্ত বোলিংয়ে শুরুতেই লঙ্কান দুই ওপেনারকে ফিরিয়ে দারুণ সূচনা এনে দেন টাইগার পেসার তাসকিন আহমেদ। এরপর মিডল অর্ডারে ধাক্কা দেন আরেক পেসার মোস্তাফিজুর রহমান। মেহেদী হাসান মিরাজও ঘূর্ণির জাদু দেখান। তাতে নিয়মিত বিরতিতেই উইকেট তুলে নিতে থাকেন টাইগার বোলাররা।
তবে ধারার বিপরীতে দারুণ ব্যাটিংয়ে এক প্রান্ত আগলে রাখেন জেনিথ লিয়ানাগে। দায়িত্বশীল এক ইনিংস খেলে তুলে নেন ওয়ানডে ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি। তার এই সেঞ্চুরিতে ভর করেই ২৩৫ রানের লড়াকু পুঁজি পায় শ্রীলঙ্কা। সেই পুঁজি নিয়ে তারা লড়াই জমিয়ে তোলার ইঙ্গিত দিয়েছিল বটে। কিন্তু শেষে পার্থক্য গড়ে দেন রিশাদ।
শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থেকে ১০১ রানের ইনিংস খেলেন লিয়ানাগে। ১০২ বলের অসাধারণ ইনিংসটি সাজাতে ১১টি চার ও ২টি ছক্কা মারেন লিয়ানাগে। আসালাঙ্কার ব্যাট থেকে আসে ৩৭ রান। নয় নম্বরে নেমে ১৫ রানের কার্যকরী এক ইনিংস খেলেন মহেশ থিকশানা।
বাংলাদেশের হয়ে ৪২ রানের খরচায় ৩টি উইকেট নেন তাসকিন। এছাড়া মোস্তাফিজুর রহমান ও মেহেদী হাসান মিরাজ ২টি করে উইকেট পান।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
শ্রীলঙ্কা: ৫০ ওভারে ২৩৫ (নিসাঙ্কা ১, আভিশকা ৪, মেন্ডিস ২৯, সামারাউইক্রামা ১৪, আসালাঙ্কা ৩৭, লিয়ানাগে ১০১*, ওয়েলালাগে ১, হাসারাঙ্গা ১১, থিকশানা ১৫, মাদুশান ৩, কুমারা ১; শরিফুল ১০-০-৫৫-০, তাসকিন ১০-১-৪২-৩, মুস্তাফিজ ৯-১-৩৯-২, সৌম্য ২-০-১০-১, মিরাজ ১০-১-৩৮-২, রিশাদ ৯-০-৫১-১)
বাংলাদেশ: ৪০.২ ওভারে ২৩৭/৬ (এনামুল ১২, তানজিদ , শান্ত ১, হৃদয় ২২, মাহমুদউল্লাহ ১, মুশফিক ৩৭*, মিরাজ ২৫, রিশাদ ৪৮*; থিকশানা ৯.২-১-৩৫-০, মাদুশান ৭-০-৫২-০, কুমারা ৮-০-৪৮-৪, হাসারাঙ্গা ৯-০-৬৪-২, ওয়েলালাগে ৬-০-৩০-০, আসালাঙ্কা ১-০-৮-০)।
ফল: বাংলাদেশ ৪ উইকেটে জয়ী।
সিরিজ: ৩ ম্যাচ সিরিজে বাংলাদেশ ২-১ ব্যবধানে জয়ী।