সুপ্রভাত ডেস্ক »
সময়ের সঙ্গে যেমন মানুষের রুচি বা চাওয়ার পরিবর্তন হয় তেমনি বদলে গেছে পর্যটকদের চাহিদাও। ভ্রমণপিয়াসীদের কাছে আগে প্রকৃতির কাছে ছুটে যাওয়াটাই মুখ্য থাকলেও তাতে এখন যুক্ত হয়েছে আয়েশি আবাসন, সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থাসহ নানা আনুসাঙ্গিকতা।
পর্যটকদের পছন্দের এই পরিবর্তনে তাল মিলিয়ে এ খাতে দেশের অন্যতম আকর্ষণীয় জেলা, লেক আর সবুজ পাহাড়ে ঘেরা রাঙামাটিতে গত কয়বছরে তৈরি হয়েছে বেশ কয়েকটি রিসোর্ট। শুধুই রিসোর্ট নয় পাল্লা দিয়ে গত দুই বছরে হ্রদের জলে নামছে একের পর এক হাউজবোটও। খবর বিডিনিউজের।
পর্যটনের এমন বাঁকবদলের কথাই উঠে এসেছে রাঙামাটির পর্যটন সংশ্লিষ্টদের মুখে।
পাহাড়ের পর্যটনের এই বদলে যাওয়া নিয়ে রাইন্যাটুগুন ইকো রিসোর্টের পরিচালক ললিত সি চাকমা বলেন, ‘এখন আর হোটেল-মোটেল নয়, রিসোর্ট আর হাউজবোটেই স্বস্তি খুঁজে নিচ্ছেন পার্বত্য শহর রাঙামাটিতে বেড়াতে আসা পর্যটকরা। গত কয়েক বছরে এই খাতের সবচেয়ে বড় অগ্রগতি কিংবা পরিবর্তন, মূলত এটাই।’
রাইন্যাটুগুন ইকো রিসোর্ট ছাড়াও রাঙ্গামাটির প্রধান আকর্ষণ বিশাল কাপ্তাই লেকের পাড় ঘেঁষে গড়ে উঠেছে বরগাং, বেড়াইন্যে, বার্গি, ইজর, পলওয়েল, আরণ্যকসহ বেশ কয়েকটি রিসোর্ট।
এসব রিসোর্টের বেশিরভাগই রাঙামাটি-কাপ্তাই সড়কে। নয়নাভিরাম এই সড়কটি যেনো হয়ে উঠছে রিসোর্টপল্লী।
রিসোর্টগুলো যেমন পর্যটকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে এবং তেমনি ব্যবসাসফলও হয়েছে। শুরুতে এসব রিসোর্ট ও কটেজের সবগুলোতে থাকার ব্যবস্থা না থাকলেও এখন প্রায় প্রতিটিতেই এই ব্যবস্থা চালু হয়েছে। প্রথম দিকে ভাড়া বাড়তি থাকলেও এখন তা বেশ আয়ত্তের মধ্যেই আছে বলে মনে করছেন পর্যটকরা।
ডিভাইন লেক আইল্যান্ড নামের রিসোর্টের পরিচালক ইমতিয়াজ সিদ্দিক আসাদ বলেন, ‘আমার বছর দুয়েক আগে যে স্বপ্ন নিয়ে রিসোর্ট শুরু করেছিলাম, বলা যায় পর্যটকদের আকাঙ্ক্ষা সে পথেই হাঁটছে। আগে হোটেল-মোটেল যে পর্যটকরা খুঁজত, এখন তাদের রুচি ও পছন্দের বাঁক বদল হয়েছে। এটা বড় ধরনের একটা পরিবর্তন। তবে সামগ্রিক পর্যটকবান্ধব পরিবেশ তৈরি হওয়াটা জরুরি।’
রিসোর্টের পাশাপাশি পর্যটক চাহিদা বাড়ায় গত দুই বছরে হ্রদের জলেও বেড়েছে হাউজবোটের সংখ্যাও।
জনপ্রিয়তা পাওয়ায় প্রমোদিনী-১ এর পর প্রমোদিনী-২, মাওরুম, স্বপ্নতরী, স্বপ্নডিঙি, রাঙাতরি নামের পাঁচটি হাউজবোট এখন ঘুরে বেড়াচ্ছে কাপ্তাইয়ের সবুজাভ নীল জলরাশিতে। চাহিদা বাড়তে থাকায় পানিতে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছে আরও অন্তত পাঁচটি হাউজবোট।
নীলাঞ্জনা বোট ক্লাবের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রাঞ্জল দেওয়ান বলেন, ‘আমরা গতানুগতিক পর্যটন ধারণাকে বদলে দিতেই হাউজবোট কনসেপ্ট নিয়ে মাঠে নেমেছি। আমাদের দুটি হাউজ বোট হ্রদে নেমেছে। আরও নামবে।’
‘একই সঙ্গে আমরা নীলাঞ্জনা বোট ক্লাবে ঐতিহ্যবাহী জুমঘরের আদলে কটেজ করছি, যাতে ভিন্নধর্মী পরিবেশে থাকার বৈচিত্র্যের পাশাপাশি একেবারেই পৃথক অনুভূতি নিয়ে ফিরবেন রোমাঞ্চপ্রিয় পর্যটকরা। এবং পদক্ষেপগুলো বেশ পর্যটকপ্রিয়তাও পাচ্ছে।’
হাউজবোট মাওরুম-এর পরিচালক অজয় চাকমা বলেন, ‘আমরা আমাদের কাপ্তাই হ্রদ ও ট্যুরিজমকে সারাদেশ ও বিশ্বের কাছে পরিচিত করানো এবং এখানকার হ্রদকেন্দ্রিক পর্যটন বিকাশে নিজেদের দায়িত্ববোধের অংশ হিসেবে এই হাউজবোটটি করেছি।’
‘আমাদের স্বপ্ন আছে আরও কিছু করার। মাওরুম আমাদের কাজের একটি স্বপ্নযাত্রা বলতে পারেন। আমরা সাড়াও পাচ্ছি বেশ।’
তবে হাউজবোট ও রিসোর্টকেন্দ্রিক এই পর্যটনকে স্বাগত জানিয়ে পরিবেশ নিয়ে সতর্ক থাকার কথাও বলছেন পরিবেশ ও সংবাদকর্মী হেফাজত উল বারি সবুজ।
তিনি বলেন, ‘এটা খুবই দারুণ যে, পাহাড়ের পর্যটনে বাঁক বদল হচ্ছে। এটা আমরাও খেয়াল করছি। বেড়াতে আসা মানুষেরা কংক্রিটের হোটেল-মোটেলের চেয়ে প্রকৃতির সান্নিধ্যেই থাকতে চাইছেন বেশি। এটা স্বস্তিকর।’
‘তবে একই সাথে সতর্ক থাকাটাও জরুরি। কারণ কাপ্তাই হ্রদের প্রকৃতি ও পরিবেশ যেন বিপন্ন না হয়, রাঙামাটি-কাপ্তাই সড়কটিও যেনো সাজেকের মতো গিঞ্জি হয়ে না পড়ে! এর জন্য প্রয়োজন প্রয়োজনীয় পরিকল্পনা ও দীর্ঘমেয়াদী পদক্ষেপ।’
সংশ্লিষ্ট সব পক্ষ এই দিকটাতে সচেতন হবে বলেও আশা করেন তিনি।
এ বিষয়ে রাঙামাটি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, ‘পর্যটনের এই নতুন ডাইমেশনকে স্বাগত জানাই। পর্যটকরাও এইরকম ভিন্ন কিছু চান। আশা করি এসব উদ্যোগ তাদের আর্কষণ করবে।
‘তবে উদ্যোক্তা, পর্যটকসহ সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি অনুরোধ থাকবে যাতে কোনোভাবেই পাহাড়ের প্রকৃতি ও পরিবেশ নষ্ট করা না হয় এবং হ্রদ যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।’