শফিউল আলম, রাউজান »
রাউজান উপজেলার ১৪টি ইউনিয়ন ও পৌরসভার মধ্যে ১৪ হাজার ৫শ হেক্টর ফসলি জমিতে এক সময়ে শুষ্ক মৌসুমে বোরোধান, বর্ষায় আমন ও আউশ ধানের চাষাবাদ করতো কৃষকেরা। চাষাবাদের সময়ে ভোররাতে কৃষক তার হালের গুরু নিয়ে লাঙ্গল জোয়াল কাঁধে জমিতে উপস্থিত হয়ে গরু দিয়ে হাল চষে চাষাবাদ করতো। কালের বিবর্তনে এখন মান্ধাতার আমলের গরু ও লাঙ্গল-জোয়াল দিয়ে চাষাবাদ হয় না।
পাওয়ারটিলার দিয়ে জমিতে ফসলের চাষাবাদ হচ্ছে। চাষাবাদে যান্ত্রিক যুগ সৃষ্টি হলেও রাউজানে দিন দিন ফসলি জমিতে চাষাবাদের পরিমাণ কমে যাচ্ছে। এতে ফসলি জমিগুলো অনাবাদী হয়ে পড়ে রয়েছে গত দেড় যুগেরও বেশি সময় ধরে। অনাবাদি হয়ে পড়া ফসলি জমিগুলো ঝোপঝাড়ে ভরে উঠেছে। আবার অনেক অনাবাদি জমি মহিষের চারণভূমিতে পরিণত হয়েছে।
সরেজমিনে পরিদর্শনকালে দেখা যায়, রাউজান পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের পশ্চিম গহিরা, দক্ষিণ গহিরা, গহিরা মোবারকখীল, পূর্ব গহিরা. হাজি পাড়া. সুলতানপুর কাজী পাড়া, ছিটিয়া পাড়া, নোয়াজিশপুর ইউনিয়নের পশ্চিম ফতেহনগর, নদীমপুর, গহিরা ইউনিয়নের দলইনগর, কোতোয়ালিঘোনা, চিকদাইর ইউনিয়নের দক্ষিণ সর্তা, হলদিয়া ইউনিয়নের বানারস, বিনাজুরী ইউনিয়নের ইদিলপুর, পশ্চিম বিনাজুরী, মধ্য বিনাজুরী, জাম্বইন, লেলাঙ্গারা, ৭ নম্বর রাউজান ইউনিয়নের পশ্চিম রাউজান, মঙ্গলখালী, খলিলাবাদ, ৮ নম্বর কদলপুর ইউনিয়নের পশ্চিম কদলপুর, পশ্চিম কদলপুর বড়–য়া পাড়া, পাহাড়তলী ইউনিয়নের উনসত্তরপাড়া, খৈয়াখালী, বদু পাড়া, মহামুনি, বহলপুর, দেওয়ানপুর, ১০ নম্বর পূর্ব গুজরা ইউনিয়নের উত্তর গুজরা, আধারমানিক, পূর্ব আধারমানিক, পশ্চিম আধারমানিক, হোয়ারা পাড়া, বড়ঠাকুর পাড়া, সাতবাড়িয়া, হামজার পাড়া, ১১ নম্বর পশ্চিম গুজরা ইউনিয়নের কাগতিয়া, ডেমাখালী, মগদাই, আবুরখীল, বদু মুন্সি পাড়া, মীরধার পাড়া, উরকিরচর ইউনিয়নের হারপাড়া, মাইশকরম, মীরা পাড়া, আবুরখীল, খলিফার ঘোনা, উরকিরচর, নোয়াপাড়া ইউনিরয়নের পটিয়া পাড়া, সামমাহলদার পাড়া, মোকামী পাড়া, কচুখাইন, পালোয়ান পাড়া, উভলং, শেখ পাড়া, বাগোয়ান ইউনিয়নের গশ্চি, পাঁচখাইন, দেওয়ানপুর, কোয়ে পাড়া প্রভৃতি এলাকার বিপুল পরিমাণ ফসলি জমি গত এক যুগ ধরে অনাবাদি হয়ে পড়ে আছে। অনাবাদী হয়ে পড়ে থাকা ফসলী জমিগুলোতে এক সময়ে শুষ্ক মৌসুমে বোরোধান, বর্ষার মৌসুমে আমন ও আউশ ধানের চাষাবাদ করতো কৃষকেরা।
ধানচাষে আর্থিক লোকসান দেখা দেওয়ার পর থেকে কৃষকেরা ধানের চাষাবাদ থেকে আগ্রহ হারিয়ে অন্য পেশায় নিয়োজিত হয়ে পড়েছে। সরকার ফসলি জমি অনাবাদি না রাখার জন্য কৃষকদের সার-বীজসহ বিভিন্ন প্রণোদনা দিলেও রাউজানে চাষাবাদ থেকে আগ্রহ হরিয়ে ফেলা কোন কৃষক সার ও বীজে প্রণোদনা পায়নি। রাউজানে বিপুল পরিমান ফসলি জমি দীর্ঘদিন ধরে অনাবাদি হয়ে থাকায় ফসল উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। অপরদিকে ফসলি জমিগুলো অনাবাদি পড়ে থাকায় ঝোপঝাড়ে ভরে উঠেছে।
রাউজান উপজেলা কৃষি অফিসার ইমরান হোসাইন-এর কাছে এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, রাউজানে ১৪ হাজার হেক্টর ফসলি জমি আছে। এর মধ্যে ৩শ ৪০ হেক্টর জমি একযুগ ধরে অনাবাদি পড়ে আছে।
উপজেলা কৃষি অফিসার ইমরান হোসাইন-এর দেওয়া তথ্য নিয়ে এলাকার লোকজন বলেন, রাউজানে ৩ শ ৪০ হেক্টর পরিমাণ ফসলি জমি অনাবাদি রয়েছে বলে উপজেলা কৃষি অফিসার যে তথ্য দিয়েছেন তা সঠিক নয়। রাউজানের বিভিন্ন এলাকায় কমপক্ষে ৭ হাজার হেক্টর পরিমাণ জমি একযুগ ধরে চাষাবাদ না হওয়ায় অনাবাদি পড়ে রয়েছে। তারা রাউজানে কি পরিমাণ জমি অনাবাদি রয়েছে তা সঠিকভাবে জরিপ করে অনাবাদি জমিগুলো চাষাবাদের আওতায় আনার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।