চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন
খোরশেদ আলম সুজন। প্রবীন আওয়ামী লীগ নেতা। এতোদিন নগরবাসীর বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে সেবা ও উন্নয়ন সংস্থাগুলোর সাথে নাগরিক উদ্যোগের ব্যানারে দেখা করতেন। এখন নিজে ১৮০ দিনের জন্য প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের। গত ৬ আগস্ট দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে কাজও শুরু করে দিয়েছেন। কিন্তু এই কম সময়ে কোন কাজকে অগ্রাধিকার দিবেন? কীভাবে নগরবাসীকে সেবা দেবেন? আর কীভাবে পরিচালনা করবেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন। কর্পোরেশনের আর্থিক স্বচ্ছলতা আনার পরিকল্পনাই বা কি? এসব বিষয়ে কথা হয় খোরশেদ আলম সুজনের সাথে। কথা বলছেন সুপ্রভাতের প্রধান প্রতিবেদক ভূঁইয়া নজরুল।
সুপ্রভাত বাংলাদেশ : আপনি মেয়র বা সংসদ সদস্য হওয়ার দৌড়ে ছিলেন। হলেন ১৮০ দিনের জন্য প্রশাসক। কেমন লাগছে? খোরশেদ আলম সুজন : মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে যেখানে ভালো মনে করেছেন, সেখানে পদায়ন করেছেন। তিনি যে দায়িত্ব দিয়েছেন আমি তা অক্ষরে অক্ষরে পালন করবো। আর এই ১৮০ দিনের মধ্যেও যে কাজ করা যায় তা দেখিয়ে দেবো। সুপ্রভাত: একসময় নাগরিক উদ্যোগের ব্যানারে বিভিন্ন সংস্থা প্রধানদের সাথে দেখা করে নগরবাসীর সমস্যা সমাধানে কাজ করেছেন? এখন নিজেই সেসব সংস্থার সমন্বয়ের দায়িত্বে- সুজন: হুম, আগে যেমন বিভিন্ন সংস্থা প্রধানদের কাছে গিয়েছে সমস্যা সমাধানের দাবি নিয়ে। এখনো সেই যাওয়া অব্যাহত থাকবে। তবে আমার লক্ষ্য সকল উন্নয়ন ও সেবা সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয় করা। আর তা করার মাধ্যমে প্রতিমাসে একটি সমন্বয় সভা করবো। সুপ্রভাত : প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে কোন কাজকে অগ্রাধিকার দেবেন? সুজন : সবার আগে নগরীর ভাঙ্গা রাস্তা মেরামত করার উদ্যোগ নেব। নগরবাসীকে যাতে প্রতিদিন ওষুধ খেয়ে রাস্তায় বের হতে না হয়। নগরীর বেহাল সড়কগুলো আগামী কিছুদিনের মধ্যে সংস্কার হয়ে যাবে। ৮০ ভাগ গর্ত মেরামত হয়ে যাবে। দিনে রাতে কাজ কলছে। এছাড়া কর্পোরেশনের অভ্যন্তরীণ দুর্নীতির লাগাম টেনে ধরা, বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় পরিচ্ছন্নতা আনয়ন করা, ভেঙ্গে যাওয়া স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে পুন:রুদ্ধার করা। এছাড়া সাবেক মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরীর নেয়া কিছু স্বপ্নের প্রকল্পের কাজও শুরু করার পরিকল্পনা রয়েছে। সুপ্রভাত : সাবেক মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরীর কোন প্রকল্পের কথা বলছেন? সুজন : আমাদের নেতা মহিউদ্দিন চৌধুরী মেয়র থাকাকালীন সময়ে বাটালি হিলকে কেন্দ্র করে একটি পর্যটন জোন করার স্বপ্ন দেখেছিলেন। এছাড়া পতেঙ্গায় পাঁচ তারকা হোটেল, শিশুদের জন্য আন্তর্জাতিক মানের পার্ক এবং আন্তর্জাতিক সামিট করার মতো স্থাপনা নির্মাণের স্বপ্ন দেখেছিলেন তিনি। আমি আমার নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সেসব প্রকল্পের বিষয়ে একটি গাইড লাইন রেখে যেতে চায় পরবর্তী মেয়রের জন্য। সুপ্রভাত : কর্পোরেশনের অভ্যন্তরীনণ দুর্নীতি কিভাবে দূর করবেন? সুজন : আমি ইতিমধ্যে কর্পোরেশনে সকাল ৯টা ১৫ মিনিট পর কাউকে প্রবেশ করতে দিচ্ছি না। কলাপসেবল গেইট বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে। সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত অফিস নিশ্চিত করা হচ্ছে। আমিও বিকাল ৫টার পর অফিস করবো না। কিন্তু অফিস টাইমে সবাইকে অফিস করতে হবে। এছাড়া কর্পোরেশনে কোনো সিন্ডিকেশন করতে দিব না। কোনো ধরনের অনিয়ম আমি নিজে করবো না এবং কাউকে করতেও দিব না। আমার রাজনীতি হবে বাসায় বা আমার রাজনীতির অফিসে। কর্পোরেশনে কোনো রাজনৈতিক কার্যক্রম হবে না। সব ধরনের আড্ডা বন্ধ করে দিব। সুপ্রভাত : তাহলে নগরবাসী দেখা করতে চাইলে কিভাবে তা করবেন? সুজন : আমি যেহেতু ৪০ লাখ মানুষের প্রশাসক, তাই ফেইসবুক, ওয়াটসঅ্যাপ এবং বিভিন্ন মাধ্যমে নগরবাসীর কাছ থেকে সব ধরনের সমস্যা আমার কাছে চলে আসছে। একইসাথে কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে একটি সাইট চালু করবো। সেই সাইটে নগরবাসী বিভিন্ন সমস্যার কথা বলবে। দিন শেষে সেসব প্রশ্নের আলোকে সমস্যা সমাধান করা হবে এবং আমি নিজে এর উত্তর দিবো। এছাড়া আন্দরকিল্লা পুরনো নগরভবনে নগরবাসীর সাথে একটি নির্ধারিত সময়ে দেখা করা যায় কিনা তা নিয়ে পরিকল্পনা করা হচ্ছে। আগামী ২০ আগস্টের পর তা চূড়ান্ত হতে পারে। সুপ্রভাত : নগরীর বেদখল হয়ে যাওয়া ফুটপাতগুলো সম্পর্কে আপনার কার্যক্রম কি হবে? সুজন : ইতিমধ্যে বেদখল হয়ে যাওয়া ফুটপাতগুলো উদ্ধারের জন্য কাজ শুরু হয়ে গেছে। সৌন্দর্য বর্ধনের নামে যেসব পয়েন্টে পকেট ভরেছে সেসব সৌন্দর্য্য গুঁড়িয়ে দেয়া হবে। ফুটপাত থাকবে দখলমুক্ত। তবে ফুটপাতে ভাসমান হকার থাকবে। কিন্তু সেসব হকার একটি নীতিমালার আওতায় থাকবে। শিগগিরই আমি সেই নীতিমালা বা গাইডলাইন প্রকাশ করবো।
সুপ্রভাত : চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন আর্থিকভাবে স্বচ্ছল নয়। আর্থিক ঘাটতি মিটিয়ে কিভাবে তা এগিয়ে নিয়ে যাবেন? সুজন : এটা কোনো বিষয় নয়। আমি নগরবাসীর কাছ থেকে নির্ধারিত পৌর কর আদায় নিশ্চিত করবো। একইসাথে যারা কর দিতে পারবে না তাদের মওকুফ করা হবে। তবে যাদের সামর্থ্য রয়েছে তাদের কে ছাড় দেয়া হবে না। পানি, বিদ্যুৎ, গ্যাস কি টাকা ছাড়া পাওয়া যায়? যেহেতু সেগুলো পাওয়া যায় না, তাই পৌর করও নিশ্চিত করতে হবে। তবে আর্থিক সমস্যা দূরীকরণে আরেকটি পরিকল্পনা রয়েছে আমার। সুপ্রভাত : কি সেই পরিকল্পনা? সুজন : চট্টগ্রাম বন্দর প্রতিবছর হাজার কোটি টাকা নিয়ে যাচ্ছে। কাস্টমস সরকারকে অনেক টাকা রাজস্ব দিচ্ছে। বন্দর ও কাস্টমস যদি তাদের উপার্জনের সামান্য কিছু টাকা পৌরকর হিসেবে দেয় তাহলে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের টাকার সমস্যা হবে না। একইসাথে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো যদি তাদের পৌর কর পরিশোধ করে তাহলে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের টাকা দিয়েই উন্নয়ন প্রকল্প নেয়া যাবে। সুপ্রভাত : এসব উন্নয়ন প্রকল্প এবং আমার স্বপ্নগুলো বাস্তবায়নের জন্য ১৮০ দিন কি পর্যাপ্ত বলে মনে করছেন? সুজন : যে পারে সে ১৮০ দিনেই পারবে। আমিও এসব কাজ এই সময়ের মধ্যে করতে পারবো। আর কি করছি তা নগরবাসী দেখবে। যদি সব কাজ শেষ করতেও না পারি শুরু করে যেতে পারবো কিংবা পরবর্তী মেয়রের জন্য কর্ম পরিকল্পনা বা গাইড লাইন আকারে রেখে যেতো পারবো বলে বিশ্বাস করি।