সুপ্রভাত ডেস্ক »
বন্দরনগরী চট্টগ্রামের প্রায় সব সড়কেই অফিসে যাওয়া আসার সময় ছাপিয়ে যানজট থাকছে এখন দিনের বড় অংশজুড়েই; রোজায় বিপণি বিতানকেন্দ্রিক সড়কগুলোতে যা আরও বেড়েছে।
নগরীর বহাদ্দারহাট থেকে বন্দর পেরিয়ে ইপিজেড পর্যন্ত প্রধান সড়কে যেমন, তেমনি নিউ মার্কেট মোড় থেকে জুবলী রোড কিংবা লালদিঘী থেকে আন্দরকিল্লা মোড় অথবা জিএসই থেকে প্রবত্তক মোড়ের মত স্বল্প দূরতেও যানজট লেগেই থাকছে। খবর বিডিনিউজের।
আর নগরীর প্রবেশপথ হিসেবে পরিচিত একে খান, অক্সিজেন মোড়, শাহ আমানত সেতু সংলগ্ন বশিরুজ্জামান চত্বর ও কাপ্তাই রাস্তার মাথায় যানজটে নগরবাসী এবং নগরে যাতায়াতকারীদের ভোগান্তির সেই পুরনো চিত্র একটুও বদলায়নি বরং বেড়েছে।
ইপিজেডের একটি পোশাক কারখানার কর্মকর্তা অজয় মিত্র বলেন, নিউ মার্কেট থেকে ১২ কিলোমিটার দূরত্বের গন্তব্যে যেতে দিনের অন্য সময় সাধারণত সোয়া এক ঘণ্টা লাগলেও বিকালে লাগে আড়াই ঘণ্টার মত।
অথচ ছুটির দিনে ২০/২৫ মিনিটেই ইপিজেড পৌঁছানো যায় জানিয়ে তিনি বলেন, প্রায়ই সড়কের একপাশে লরি, কাভার্ড ভ্যানের সারি থাকে। যে কারণে যানজটে দীর্ঘ সময় বসে থাকতে হচ্ছে প্রতিদিনই।
কোভিড সংক্রমণ কমে আসায় দুই বছর পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালু হওয়ায় বিভিন্ন সড়কে জট বেড়েছে কয়েক গুণ বলে মনে করছেন অনেকেই।
আর রমজানে মূল সড়কের পাশাপাশি বিপণি বিতানকেন্দ্রিক যানজটে অসহনীয় ভোগান্তি পিছু নিয়েছেন যাত্রীদের।
চার দশকের বেশি সময় ধরে নিউ মার্কেট এলাকায় যাতায়াতকারী আলকরণের বাসিন্দা জাহিদুল আমিন বলেন, একসময় নগরীর গুরুত্বপূর্ণ ও ব্যস্ততম সড়ক ছিল এটি। আগে সড়কে গাড়ি বেশি থাকলেও যানজট তেমন ছিল না। কিন্তু কয়েক বছর ধরে সেই স্বস্তি উধাও।
‘আলকরণ থেকে আগে রিকশায় রেয়াজউদ্দিন বাজার আসতে ৫/৭ মিনিটের বেশি সময় লাগত না। এখন হেঁটে আসলে রিকশা বা অন্যান্য যানবাহনের আগে পৌঁছানো যায়।’
হাজারি লেইনের বাসিন্দা পার্থ সারথী বলেন, সকাল ১০টার পর থেকে রাত পর্যন্ত সড়কটিতে জট যেন লেগেই থাকে।
অনেকটা একই চিত্র দেখা যায় স্বল্প দূরত্বের জামালখান, কাজীর দেউড়ি, চকবাজার, চেরাগী পাহাড়, রাইফেল ক্লাব ও জুবিলী রোডে গাড়ি বা রিকশার জট যেন নিয়মিত ঘটনা।
লাভ লেইন এলাকার বাসিন্দা প্রীতম সেন বলেন, চেরাগী পাহাড় থেকে লাভ লেইনের দূরত্ব এক কিলোমিটারের মত। রাতে কিংবা ভোরে এ সড়কে রিকশায় যেতে সময় লাগে ৪/৫ মিনিট। কিন্তু বেলা বাড়লেই এটুকু পথ পাড়ি দিতে লেগে যায় ২০/৩০ মিনিট।
এগুলোর বেশির ভাগ সড়কের ফুটপাতগুলো দখলে গেছে হকারদের। এতে পথচারীরা চলাফেরা করছেন সড়ক দিয়ে।
নগর পুলিশের ট্রাফিক দক্ষিণ বিভাগের উপ কমিশনার নাসির উদ্দিন বলেন, বন্দর নগরীতে রাস্তার তুলনায় যানবাহন বেড়েছে। এক সড়কের মধ্যেই চলাচল করছে বাস, ট্রাক, রিকশাসহ বিভিন্ন ব্যক্তিগত যানবাহন।
‘পাশাপাশি যত্রতত্র পার্কিং সড়ক আইন না মানার কারণেও যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। এজন্য মানুষের সচেতনতা প্রয়োজন।’
বিপণি বিতানকেন্দ্রীক সড়কে ট্রাফিক সদস্যদের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে জানিয়ে তার আশা ঈদের বাজারের যানজট অসহনীয় হবে না।
স্বল্প দূরত্বের জিইসি মোড়, গোলপাহাড়, প্রবর্ত্তক কিংবা ষোলশহর মোড়ে যেতেও দীর্ঘ সময় ঠাই দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। এসব পথ দিয়ে যারা আরও দূরে যেতে চান তাদের সড়কেই কেটে যায় অনেকটা সময়।বাসিন্দারা বলছেন, নগরীর জাকির হোসেন সড়কে সবচেয়ে বেশি যানজটের সৃষ্টি হয় সকাল ও দুপুরে। স্থানীয় বাসিন্দা মো. শাহ আলম জানান, খুলশী এলাকার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শুরুর আগে ও ছুটিতে এ সড়কে বেশি যানজটের সৃষ্টি হয়। এসসময় পাঁচ মিনিটের পথ যেতে সময় লাগে অন্তত ২০ মিনিট।
নগর পুলিশের উত্তর জোনের উপ কমিশনার জয়নুল আবেদীন বলেন, বিভিন্ন স্থানে হাসপাতাল ডায়াগনস্টিক সেন্টার হয়েছে। কিন্তু পর্যাপ্ত পার্কিং ব্যবস্থা নেই। যার কারণে এসব হাসপাতালে আসা রোগীসহ বিভিন্ন ব্যক্তিদের বহনকারী যানবাহনগুলোর কারণে একটি যানজটের সৃষ্টি হয়।
তিনি জানান, মালিক পক্ষকে হাসপাতালে আসা গাড়ির জন্য তাদের গাড়ি রাখার স্থান উন্মুক্ত করে দিতে বলা হয়েছে।
নগরীর আরেক ব্যস্ততম সড়ক টাইগার পাস থেকে বারিক বিল্ডিং মোড় এবং কাস্টম সড়কে একেক দিনের যানজট যেন আগের দিনের চিত্রকে ছাপিয়ে যাচ্ছে।
এর বাইরে চট্টগ্রাম বন্দরকেন্দ্রিক যানজটের সেই পুরনো সমস্যা রয়েই গেছে। এ সড়কে জটে পড়ে বিভিন্ন সময়ে বিদেশগামী যাত্রীদের ফ্লাইট মিসের ঘটনা সাম্প্রতিক সময়ে প্রায়ই ঘটছে বলে শোনা যাচ্ছে।