সুপ্রভাত ডেস্ক »
মেঘলা আকাশ আর গুমোট আবহাওয়ায় ফ্লাড লাইট জ্বালিয়ে রাখা হলো দিনজুড়েই। তার পরও আলোকস্বল্পতায় খেলা শেষ বিকেল সোয়া চারটাতেই। আম্পায়ারের ইশারা পেয়ে হনহন করে ড্রেসিং রুমের পথে হাঁটা দিলেন নিউ জিল্যান্ডের দুই অপরাজিত ব্যাটসম্যান। যদি সম্ভব হতো, এই মাঠে হয়তো তারা আর ব্যাটিংয়েই ফিরতেন না! শুধু তারাই কেন, এই উইকেট তো বিভীষিকা বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের জন্যও।
মিরপুরের উইকেট ব্যাটসম্যানদের জন্য মৃত্যুকূপ হয়ে ওঠা নতুন কিছু নয়। তবে এবার যেমন দেখা গেল, এরকম মাইনফিল্ড সম্ভবত আগে কখনও দেখা যায়নি। কোনো বল বিশাল টার্ন করছে তো কোনোটি যাচ্ছে একদম সোজা। কোনো ডেলিভালি হালকা টার্ন করছে, কোনোটি আবার লাফাচ্ছে অনেকটা। বোলারও হয়তো বুঝতে পারছিলেন না, বল কেমন হবে। ব্যাটসম্যানদের অবস্থা সহজেই বোধগম্য! প্রথম দিন প্রথম সেশন থেকেই যেন প্রঞ্চম দিন শেষ সেশনের রূপ দেখা গেল।
এমন উইকেটে যা হওয়ার কথা, হলোও তাই। ১৫ উইকেটের দিনে বাংলাদেশ প্রথম ইনিংসে অলআউট ১৭২ রানে, নিউ জিল্যান্ড দিন শেষ করেছে ৫ উইকেটে ৫৫ রানে। আলোর স্বল্পতায় ৮.২ ওভার আগে খেলা শেষ হয়েছে বলে তবু একটু রক্ষা। নইলে আরও গোটা দুই উইকেটের পতন হয়তো দেখা যেত। তার পরও যা হয়েছে, সেটিই রেকর্ড। মিরপুরে প্রথম দিনে এত উইকেটের পতন হয়নি আগে কখনও।
১৫ উইকেটের ১৩টিই নিয়েছেন স্পিনাররা, একটি নিয়েছেন নিউ জিল্যান্ডের পেসার টিম সাউদি। বাকি যে উইকেট, দিনের সবচেয়ে আলোচিত আউট সেটিই। মুহূর্তের খামখেয়ালিপনায় ব্যাখ্যাতীতভাবে ‘অবস্ট্রাক্টিং দা ফিল্ড’ আউট হন মুশফিকুর রহিম।
তারপরও মুশফিকের ৩৫ রানের ইনিংসটিই দিনের সর্বোচ্চ। শাহাদাত হোসেন করতে পেরেছেন ৩১। এই দুজনের ৫৭ রানের জুটি দিনের একমাত্র অর্ধশত রানের বন্ধন।
এছাড়া দুই দলের আর কোনো ব্যাটসম্যান ২০ ছুঁতেও পারেননি।
স্কোরকার্ডের এই অবস্থাই পিচের বাস্তবতা ফুটিয়ে তুলছে। তবে এসবও আসলে যথেষ্ট নয়। পিচ এমন যে, এক পর্যায়ে মনে হচ্ছিল প্রতি বলেই উইকেট পড়তে পারে।
দিনের প্রথম ১০ ওভারে যে উইকেট পড়েনি, এটিই এখন বলা যায় সবচেয়ে বড় বিস্ময়। নতুন বলে টিম সাউদি দারুণ সুইং আদায় করে নিয়েছেন। মাহমুদুল হাসান জয় বেশ কয়েকবার আউট হতে হতেও বেঁচে যান। তবে উইকেটের অবস্থা বুঝে ষষ্ঠ ও সপ্তম ওভারেই দুই প্রান্তে স্পিন আক্রমণে আনেন কিউই অধিনায়ক।
তবে উইকেটের অবদান তো ছিলই, স্পিনারদের দিকে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরাও। ১০ ওভার কাটিয়ে দেওয়ার পর মিচেল স্যান্টনারকে উড়িয়ে মারার চেষ্টায় উইকেট বিলিয়ে আসেন জাকির হাসান। পরের ওভারেই জোরের ওপর রক্ষণাত্মক শট খেলার চেষ্টায় আউট হন জয়।
নাজমুল হোসেন শান্ত প্রথম রানের দেখা পান রিভার্স সুইপ খেলে। একটু পর রিভার্স সুইপেই দেখা পান বাউন্ডারির। এটিকেই হয়তো তিনি রান করার একমাত্র পথ ধরে নিয়েছিলেন। ওই ওভারেই আরেকবার রিভার্স সুইপের চেষ্টায় তিনি বিদায় নেন। শরীরের অনেক কাছে বল কাট করতে গিয়ে মুমিনুল হক আউটে হয়ে ফেরেন তো আগেই।
দিনের একমাত্র অর্ধশত রানের জুটি আসে এরপরই। বল একটু পুরোনো হয়ে আসার পর ব্যাটিং কিছুটা হলেও সহজ হয়ে ওঠে। মুশফিক ও শাহাদাতের জুটিতেই একশ পেরিয়ে যায় বাংলাদেশের রান।
লাঞ্চের একটু পরই মুশফিকের ওই আউট। কাইল জেমিসনের ডেলিভারিতে রক্ষণাত্মক শট খেলার পর হুট করেই হাত দিয়ে বল সরিয়ে দেন তিনি। অথচ বল স্টাম্পের আশেপাশে ছিল না, বিপজ্জনক কিছুও ছিল না। কিউইরা আবেদন করেন, নিয়ম অনুযায়ী আম্পায়ার আউট দিতে বাধ্য। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে ‘অবস্ট্রাক্টিং দা ফিল্ড’ আউট হন মুশফিক।
দারুণ খেলতে থাকা শাহাদাতের আউটও ভীষণ হতাশাজনক। গ্লেন ফিলিপসের নীরিহ অফ স্পিনে লেগ স্টাম্পের অনেক বাইরের বলে ব্যাট ছুঁইয়ে বিদায় নেন দ্বিতীয় টেস্ট খেলতে নামা ব্যাটসম্যান। দৃষ্টিকটূ শটে ফিলিপসকেই উইকেট উপহার দিয়ে ফেরেন নুরুল হাসান সোহান।
এরপর মেহেদী হাসান মিরাজের ২০ রান আর লোয়ার অর্ডারের খানিকটা প্রতিরোধে ১৭২ পর্যন্ত যেতে পারে বাংলাদেশ।
নিউ জিল্যান্ড ব্যাটিংয়ে নামার পর আসা-যাওয়ার মিছিল শুরু হতেও সময় খুব একটা লাগেনি। পেসার শরিফুল ইসলাম স্রেফ এক ওভার হাত ঘোরান। এরপর দুই প্রান্ত থেকে তাইজুল ইসলাম ও মিরাজের ঘূর্ণি চলতে থাকে।
মিরাজের বলে লাইন পড়তে ভুল করে ছেড়ে দিয়ে বোল্ড হয়ে যান ডেভন কনওয়ে। তাইজুলের বল ব্যাটের নিচের কানায় লেগে আউট হন টম ল্যাথাম। তাইজুলকেই উড়িয়ে মারায় চেষ্টায় কাটা পড়েন হেনরি নিকোলস।
আগের টেস্টের সেঞ্চুরিয়ান ও বাংলাদেশের সম্ভাব্য সবচেয়ে বড় বাধা কেন উইলিয়ামসনকে শর্ট লেগে অসাধারণ এক রিফ্লেক্স ক্যাচ নিয়ে বিদায় করেন শাহাদাত হোসেন। পরের বলে টম ব্লান্ডেলকেও ফেরান মিরাজ।
একটু পরই দিনের খেলা শেষের ঘোষণা আসে। ড্যারিল মিচেল ও গ্লেন ফিলিপস আপাতত মাঠ ছাড়েন স্বস্তিতে। তবে নতুন দিনে আবারও কঠিন পরীক্ষা তাদের অপেক্ষায়।
সেই চ্যালেঞ্জ অবশ্য সব ব্যাটসম্যানেরই থাকবে। প্রথম দিন শেষেই তাই প্রশ্নটি উঠে যাচ্ছে, তৃতীয় দিনে গড়াবে তো এই টেস্ট!