দুই বছর ধরে বন্ধ ডেম্যু ও জালালাবাদ ট্রেন সার্ভিস
ট্রেনের জনবল , ইঞ্জিন এবং বগির প্রবল সংকট
যাত্রীদের অতিরিক্ত ভাড়া গচ্ছা
রাজু কুমার দে, মিরসরাই »
মিরসরাই-সীতাকুণ্ডের কর্মজীবী মানুষের আশার আলো ছিল চট্টগ্রাম-লাকসাম রুটে চলাচল করা ডেম্যু ও জালালাবাদ ট্রেন। এই ট্রেন দিয়ে কর্মজীবী মানুষরা নিয়মিত চলাচল করতো। ফলে সময় অর্থ দুইটোই লাঘব হতো। কিন্তু গত দুই বছর ধরে ডেম্যু ও জালালাবাদ ট্রেন সার্ভিস বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েছে দুই উপজেলার হাজার হাজার মানুষ।
উপজেলার বারইয়ারহাট সংলগ্ন চিনকির আস্তানা রেলস্টেশন থেকে একজন যাত্রীকে চট্টগ্রাম শহরে যেতে ভাড়া লাগে মাত্র ৩৫ টাকা। কিন্তু বাসে যেতে লাগে ১০০-১২০ টাকা। যখন ডেম্যু ও জালালাবাদ ট্রেন চলাচল করতো প্রতিদিন চট্টগ্রাম শহরে যাত্রায়াত করা এ অঞ্চলের যাত্রীদের দুশ্চিন্তা ছিল না। গুণতে হতো না বাড়তি ভাড়া।
চিনকির আস্তানা স্টেশন কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে. বর্তমানে শুধু মাত্র চিনকির আস্তানা স্টেশনে ট্রেন থামে। তবে বড়তাকিয়া স্টেশনে ময়মনসিংহ গ্রামী নাসিরাবাদ এক্সপ্রেস রেলটি চট্টগ্রাম থেকে যাওয়ার পথে থামে। এছাড়া চিনকির আস্তানা স্টেশনে চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে আসা সাগরিকা এক্সপ্রেস (সকাল-৭ঃ৪০ মিনিট), কর্ণফুলী এক্সপ্রেস (১০ঃ০০), ময়মনসিংহগামী নাসিরাবাদ এক্সপ্রেস (৩ঃ৩০ মিনিট) থামে। একইভাবে বিকালে ফিরতি ট্রেনগুলো চট্টগ্রামে যাত্রা পথে চিনকি আস্তানা স্টেশন থেকে সাগরিকা এক্সপ্রেস (৫:৫১), কর্ণফুলী এক্সপ্রেস (৪:৪৭) ময়মনসিংহ গামী নাসিরবাদ এক্সপ্রেস (৬:৪৫) সময় ছেড়ে যায়। বড়তাকিয়া স্টেশনে চট্টগ্রাম থেকে যাওয়ার ময়মনসিংহ গামী নাসিরাবাদ এক্সপ্রেস থামে। মিরসরাই ও মস্তাননগর স্টেশন বন্ধ থাকায় কোন ট্রেন থামে না। আগে চট্টগ্রামমুখী জালালাবাদ এবং ডেম্যু ট্রেন চিনকির আস্তানা থামলেও দুই বছর ধরে তা বন্ধ রয়েছে। জনবল ও ইঞ্জিন সংকটের কারণে ট্রেনগুলো বন্ধ রয়েছে বলে রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে।
এদিকে বন্ধ হয়ে যাওয়ার আগে ডেম্যু ট্রেনটি চট্টগ্রামের বটতলি থেকে প্রতিদিন বিকাল ৫.৩০ এ ছেড়ে ৪০ মিনিটে সীতাকুণ্ড আর ঠিক এক ঘণ্টা পর ৬.৩০ এ বড়তাকিয়া স্টেশন পৌঁছাতো। বারইয়াহাটের চিনকি আস্তানা পৌছাতো ৬.৫০ এ। আবার বিপরীত দিকের লাকসাম থেকে প্রতিদিন চট্টগ্রাম অভিমুখে ছাড়তো ভোর ৫.৪০। ফেনী থেকে ৬.৩৫, বারইয়াহাট চিনকি আস্তানা থেকে ৭.১৫, বড়তাকিয়া থেকে ৭.৪০, সীতাকুণ্ড থেকে ৮.০০টায়, চট্টগ্রাম পৌঁছাতো ৯.০০টায়। ফলে মিরসরাই ও সীতাকুণ্ডের কর্মজীবী মানুষরা অফিসে যাওয়া ও আসা পথে অনেক সুবিধা পেত। বাড়তি ভাড়ার পাশাপাশি সময় বাঁচতো তাদের।
করেরহাট ইউনিয়নের পূর্বজোয়ার গ্রামের বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন জানান, আগে চাকরির সূত্রে প্রতিদিন সকালে ডেম্যু ট্রেনে যাতায়াত করতেন। কিন্তু ডেম্যু ট্রেন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তাকে চট্টগ্রামে বাসা নিতে হয়েছে। ফলে খরচ বেড়েছে।
মিরসরাই উপজেলার বারইয়ারহাট বাস মালিক সমিতি সূত্রে জানা গেছে, বারইয়ারহাট-চট্টগ্রাম রুটে দৈনিক চয়েস সাভির্সের ৬০টি, উত্তরা সার্ভিসের ৮০টি ও বিভিন্ন আঞ্চলিক সার্ভিসের বাস শতাধিক যাত্রীবাহী বাস চলাচল করে। এতে দৈনিক কয়েক হাজার যাত্রী চলাচল করে থাকে। বারইয়ারহাট থেকে একজন যাত্রীকে চট্টগ্রাম শহরে যেতে খরচ পড়ে ১০০-১২০ টাকা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চিনকির আস্তানা রেলওয়ে স্টেশনের স্টেশন মাস্টার সিরাজুল ইসলাম জানান, জনবল ও ইঞ্জিন সংকটের কারণে ডেম্যু ও জালালাবাদ ট্রেন বন্ধ রয়েছে। তবে যে কয়টি সার্ভিস চালু রয়েছে সেগুলোতে যাত্রী কম। আমরা চাই বেশি বেশি মানুষ ট্রেনে যাতায়াত করুক। তবে রেলের উন্নয়নে সরকার আন্তরিকভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।