আনোয়ারায় ৮৪ হাজার হাজার গ্রাহক ভোগান্তিতে, স্বাস্থ্যবিধি ছাড়াই মানুষের গিজগিজ
সুমন শাহ্, আনোয়ারা <
করোনা পরিস্থিতি মিটার না দেখেই বিদ্যুৎ বিল তৈরি করায় ভোগান্তিতে চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার ৮৪ হাজার গ্রাহকরা। ফেব্রুয়ারির চেয়ে মার্চ, এপ্রিল ও মে মাসে গুনতে হচ্ছে কয়েকগুণ বিল। এতে ক্ষুব্ধ ভুতুড়ে বিলের শিকার অসংখ্য গ্রাহক। জরিমানা মওকুফ ঘোষণা করে ৩০ জুনের মধ্যে বিদ্যুৎ অফিস বিল পরিশোধের সময় বেধে দিলে করোনা ভাইরাসের বিপর্যয়ের মধ্যে অস্বাভাবিক বিদ্যুৎ বিল নিয়ে স্বাস্থ্যবিধি না মেনে গাদাগাদি করে বিল পরিশোধ করতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে দিচ্ছে বিল। এতে করে ঝুঁকি ও চরম ভোগান্তিতে পড়ছেন গ্রাহকরা।
সকালে উপজেলার পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার ব্যবস্থা না রেখেই জোনাল অফিসে বিদ্যুৎ বিল নিচ্ছে। পুরম্নষ ও মহিলাদের কাউন্টারের সামনে মানুষ গিজ গিজ করছে। কারো মুখে নেই মাস্ক। লাইনে ৭০ বছরের বৃদ্ধ যেমন ছিলেন, তেমনি শিশু মহিলা যুবকও রয়েছেন। সবাই এমন ঠাসাঠাসি করে দাঁড়িয়েছেন, যেন এ উপজেলায় করোনাভাইরাস নেই।
করোনাভাইরাসের প্রকোপের মধ্যে এত মানুষের ভিড়ের মধ্যে বিল পরিশোধের বিষয়ে গ্রাহকদের কাছে জানতে চাইলে অনেকেই বলেন, করোনার মধ্যে লগডাউনের কারণে মার্চ, এপ্রিল ও মে মাসের বিদ্যুৎ বিল দিতে পারেননি। বিদ্যুৎ লাইন বিচ্ছিন্ন করা হবে বলে বিদ্যুৎ বিল দেওয়ার জন্য গ্রাহকদের চাপ দেওয়ায় ঝুঁকি নিয়ে তারা এসেছেন। সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার কোনো উদ্যোগ নেয়নি আনোয়ারা পল্লী বিদ্যুৎ জোনাল অফিস। অফিস ঘুরে দেখা যায়, এখানে হাত ধোঁয়ার কোনো ব্যবস্থা নেই। নেই স্যানিটাইজার। জীবাণুনাশক স্প্রে ছিটানো হয়নি কোনো সময়েও। সামাজিক দূরত্বে দাঁড়ানোর জন্য গোল চিহ্ন দেয়নি। অফিসের কোনো কর্মকতার মুখেও দেখা যায়নি মাস্ক।
এছাড়া সময়মতো বিল না পাওয়া এবং দীর্ঘ সাধারণ ছুটিতে ব্যাংক লেনদেন সীমিত থাকায় বিদ্যুৎ গ্রাহকদের অনেকেই গত দুই-তিন মাসের বিল পরিশোধ করতে পারেননি। অস্বাভাবিক বিদ্যুৎ বিল সমন্বয় করা হবে বলে বিদ্যুৎ বিভাগ আশ্বসত্ম করায় অনেকেই সমন্বয় করা বিলের অপেড়্গায় ছিলেন। এই অবস্থায় ৩০ জুনের মধ্যে বকেয়া সব বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ না করলে বিদ্যুৎ সংযোগ কাটার ঘোষণা দিয়েছেন বিদ্যুৎ অফিস। এই ঘোষণার পর আরো বেশি আতঙ্কগ্রসত্ম হয়ে পড়েছেন গ্রাহকরা। মিটার রিডিং ছাড়া শুধু অনুমান করে বিদ্যুৎ বিল দেয়া যায় কিনা তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। ভুতুড়ে বিদ্যুৎ বিল আদৌ সমন্বয় করা হবে কিনা- তা নিয়েও সন্দেহ দেখা দিয়েছে বিদ্যুৎ বিতরণকারী প্রতিষ্ঠানের গ্রাহকদের মধ্যে।
বৈরাগ ইউনিয়নের উত্তর গুয়াপঞ্চকের খুরশিদা জাহান নামে এক গ্রাহক জানান, দীর্ঘ ৬ মাস ধরে আমরা ভাড়া বাসায় রয়েছি। জানুয়ারিতে স্বাভাবিক ভাবে বিল আসলেও এরপর থেকে বিল আসতে শুরম্ন করে অস্বাভাবিক। গত মার্চ ও এপ্রিল মাসে ২ হাজর টাকারও বেশি বিদ্যুৎ বিল এসেছে। কিন’ বাড়িতে তালা বদ্ধ, একটি লাইটও জ্বলে না এতো গুলো বিল আসলো কিভাবে। এরমধ্যে করোনার মাস গুলোতে তা ডাবল হয়ে গেছে। দিয়েছে বিল পরিশোধের চাপ, না দিলে কেটে দিবে সংযোগ। এসব বিলের কাগজ নিয়ে অফিসে কয়েকবার গেলেও মিলেনি কোনো সমাধান। তারা সোজা জানিয়ে দিয়েছে মিটারের সমস্যা। আগে সব বিল পরিশোধ করে অতিরিক্ত ২০০ টাকা দিলে মিটার পরিবর্তনের আবেদন করেন। তারপর মিটার পরিবর্তন করে দেওয়া হবে। আর কি করা তাই বিল সব পরিশোধ করে মিটার পরিবর্তনের জন্য ২০০ টাকা দিলে আবেদন করলাম।
অভিযোগ করে অ্যাডভোকেট সালাদ্দিন আহমেদ চৌধুরী লিপু জানান, আমরা সবাই শহরে থাকি। আনোয়ারা বটতলী গ্রামের বাড়িতে পৃথক-পৃথক ঘরের জন্য আলাদাভাবে মিটার রয়েছে। করোনার প্রাদুর্ভাবের কারণে গত মার্চ ও এপ্রিল মাসে বাড়িতে যাওয়া হয়নি। তাই বিদ্যুৎ ব্যবহার হয়নি, কিন’ আশ্চর্যের বিষয় মার্চে ৫শত ৮২ টাকার ও এপ্রিল মাসের ৭শ ২ টাকা। বিল গুলো পরিশোধ করতে গেলে তারা জানায় মিটারের রিডিং চেক করতে। সে মিটারের রিডিং চেক কওে দেখা যায়, গত ১১ মে তারিখ পর্যন্ত মিটারে রিডিং হয়েছে ২১শত ১৯ দশমিক ৮ ইউনিট, কিন’ আরো আশ্চর্যের বিষয়, ভৌতিকভাবে পল্লী বিদ্যুৎ এপ্রিল মাসের বিলে মিটার রিডিং উলেস্নখ করেছে ২০ মার্চ থেকে ২০ এপ্রিল পর্যন্ত ২১৭০ ইউনিট। আর এপ্রিল মাসের ব্যবহৃত ইউনিট ১৩০ ও মার্চ মাসের ব্যবহৃত ইউনিট ১১০ উলেস্নখ করেন। কিন’ ১১ মে পর্যন্ত ২১৭০ ইউনিট হয়নি। অথচ ২০ এপ্রিল পর্যন্ত বিলে উলেস্নখ করে ২১৭০ ইউনিট। যা মনগড়া বিল। এরকম শুধু আমি না আমার এলাকার আরো অনেকেই হয়েছে। তারা মিটার না দেখে কর্মচারীরা অফিসে বসে এসব মনগড়া বিল তৈরি করে গ্রাহকদের প্রতিনিয়ত হয়রানি করছে। তিনি আরো জানান, বটতলী অফিস পশ্চিম আনোয়ারার বিদ্যুৎ নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনা কেন্দ্র অফিস দুর্নীতির আখড়া বলা যায়। এখানের কর্মকর্তা, কর্মচারীরা বিভিন্ন জনকে অবৈধভাবে বিদ্যুৎ সংযোগ, লাইন, খুঁটি সরানো, লোডশেডিং করা না করা ইত্যাদি অনৈতিক কাজে লিপ্ত থাকে। যা সরেজমিনে তদন্ত করে তাদের বিরম্নদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। না হলে সাধারণ গ্রাহকরা এ হয়রানি থেকে কোনোদিনও মুক্তি পাবে না।
অস্বাভাবিক বিদ্যুৎ বিলের বিষয়টি স্বীকার করে আনোয়ারা বিদ্যুাৎ জোনালের অফিসের পরিচালক বেলায়েত হোসেন বলেন, আমরা বিদ্যুৎ বিল নিয়ে অভিযোগ পাচ্ছি। করোনার সংক্রমণের ভয়ে বাসায় গিয়ে মিটার রিডিং নেয়া সম্ভব না হওয়ায় এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। বিল নিয়ে কেউ অভিযোগ করলে আগের মাসের বিল ও মিটারের রিডিং দেখে গড় বিল ঠিক করে দেওয়া হচ্ছে। যদি মিটারের সমস্যা থাকে এটাও বলা হচ্ছে মিটার পরিবর্তনের। স্থানীয় গ্রাহকরা ব্যাংকে গিয়েও বিল পরিশোধের ব্যবস্থা রয়েছে। তিনি আরো বলেন, গ্রাহকরা ব্যাংকের না গিয়ে অফিসের এসে ভিড় করছে। আমাদের অফিসে নিচে ক্লাবে স্বাস্থ্যবিধি জন্য সাবান পানির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।