করোনাভাইরাসে প্রতিদিন বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা, বাড়ছে মৃত্যুও। এমন কঠিন পরিস্থিতিতে যেখানে মানুষের আরও বেশি সচেতন হয়ে চলাচলের কথা সেখানে বাস্তবে দেখা যাচ্ছে উল্টো চিত্র। নগরে মাস্ক ছাড়াই চলাচল করছে মানুষ। মানা হচ্ছে না নিরাপদ দূরত্ব।
করোনার ঝুঁকি এড়াতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বাইরে চলাফেরায় মাস্ক পরতে বলছে। কারণ আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি-কাশির মাধ্যমে করোনা ছড়ায়।
এদিকে গত ৩০ মে স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানার স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বাইরে চলাচলের ক্ষেত্রে সবসময় মাস্ক পরিধানসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। তা নাহলে সংক্রামক রোগ (প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল) আইন, ২০১৮ এর ধারা ২৪ (১), (২) ও ধারা ২৫ (১) ও (২) অনুয়ায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। আর এই আইন বাস্তবায়ন করবে জেলা প্রশাসন ও যথাযথ কর্তৃপক্ষ।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ ইলিয়াস হোসেন সুপ্রভাতকে বলেন, ‘মাস্ক না পরলে যে শাস্তি দেওয়া যাবে এটা আইনে সুনির্দিষ্ট করা নেই। প্রজ্ঞাপন দিয়ে কখনো শাস্তি দেওয়া যায় না। মাস্কের জন্য কি ১ লাখ টাকা জরিমানা করা যায়? সর্বোচ্চ ১০০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে। সরকারি আদেশ অমান্যকারীদের জরিমানা করা যাবে কিন্তু জেল দেওয়ার বিষয়টা আইনে পরিষ্কার নয়।’
সরেজমিন দেখা যায়, অনেকেই মাস্ক না পরে, নিরাপদ দূরত্ব না মেনে দৈনন্দিন কাজকর্ম করে যাচ্ছে। কেউবা মাস্ক পকেটে রেখে হাঁটছে, আবার কেউ তা যথাযথভাবে পরছেন না। কেউ কেউ মাস্ক না পরার পেছনে গরমের অজুহাতও দিচ্ছেন।
অবশ্য মাস্ক ছাড়া চলাচল বেড়েছে স্বীকার করে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াস হোসেন বলেন ‘বিষয়টা আমাদের নজরে আছে। সরকার এটা নিয়ে চিন্তাভাবনা করছে। সরকার নির্দেশনা দিলে আমরাও কঠোর হব।’
এদিকে চীনা বিশেষজ্ঞ দল প্রচলিত সামাজিক অভ্যাস পরিবর্তন করা, প্রাথমিক শনাক্তকরণের পর চিকিৎসা এবং আইসোলেশন বাংলাদেশকে কোভিড-১৯ এর বিরুদ্ধে সাফল্য অর্জন করতে সহায়তা করতে পারে বলে পরামর্শ দিয়েছেন ।
বাংলাদেশে চলমান ভুল অনুশীলনগুলো সম্পর্কে নিজেদের অনুসন্ধানের বিষয় উল্লেখ করে চীনা বিশেষজ্ঞরা বলেন, ‘এখানে অনেকে ডাবল মাস্ক পরেন, পা বের করা স্যান্ডেল ব্যবহার করেন এবং ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবিধি বজায় রাখেন না।’
চীনা দূতাবাস শুক্রবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, সর্বোপরি বিশেষজ্ঞরা বাংলাদেশে স্বাভাবিক সামাজিক অভ্যাস পরিবর্তনের ওপর জোর দিয়েছেন।
বাংলাদেশ সফরের তৃতীয় দিন (বৃহস্পতিবার) সকালে চীনা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল (ঢামেক) পরিদর্শন করে এবং বিকালে কোভিড-১৯ নিয়ে বাংলাদেশের জাতীয় উপদেষ্টা কমিটির সঙ্গে একটি সফল সংলাপে অংশ নেয়।
ঢামেকের বিশেষজ্ঞরা তাদের চ্যালেঞ্জগুলো তুলে ধরে বলেন, চীনে হালকা লক্ষণযুক্ত রোগীদেরকেও অস্থায়ী হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। তবে এক্ষেত্রে বাংলাদেশিরা নিজ বাড়িতে থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এ বিষয়ে চীনা বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ চান তারা।
এ বিষয়ে বায়ু চলাচলের উপযুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করা, যথাযথভাবে হাত ধোয়া, মাস্ক পরা, দ্রুত জীবাণুমুক্তকরণ এবং সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত সম্পূর্ণ একা থাকার ওপর জোর দিয়েছেন চীনা বিশেষজ্ঞরা।
বর্তমানে সরকার অফিস-আদালত খুলে দিয়েছে, অনেক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে কাজ শুরু হয়েছে। তৈরিপোশাকশিল্পসহ অনেক শিল্পকারখানায় পুরোদমে কাজ চলছে। রাস্তাঘাট, মাঠে-ময়দানে অসংখ্য মানুষ ঘুরে বেড়াচ্ছে। এদের অধিকাংশই সঠিকভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলছেন না। যদিও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বারবার মাস্ক ব্যবহারের ওপর জোর দিচ্ছে।
আমাদের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে এবং ভবিষ্যতে অর্থনৈতিক মন্দা ঠেকাতে সরকারকে কিছু ক্ষেত্রে লকডাউন শিথিল করতে হয়েছে। এতে সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়লেও বাস্তবতার নিরিখে কর্মকাণ্ড চালু করতে হয়েছে। এ অবস্থায় আমাদের নিজের নিরাপত্তা নিজেকেই নিশ্চিত করতে হবে। নিজে এবং পরিজনকে সুরক্ষা দিতে হলে সরকার ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সবাইকে অবশ্যই মাস্ক পরিধান করতে হবে।
এ বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কঠোর হওয়া ছাড়া উপায়ও নেই। মহামারির সঙ্গে সঙ্গে দেশের মানুষ ও অর্থনীতির স্বার্থে এ বিষয়ে কড়াকড়ি আরোপ করডে হবে। অতি সম্প্রতি গবেষকরা বলছেন, মাস্ক পরিধান লকডাউনের চেয়েও অনেক বেশি কার্যকর সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে।