নিজস্ব প্রতিনিধি, রামগড় »
দীর্ঘ অপেক্ষার পর অবশেষে ইন্টারন্যাশনাল প্যাসেঞ্জার টার্মিনাল, রামগড় নামেই উদ্বোধন হতে যাচ্ছে রামগড় ইমিগ্রেশন। আজ মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে এর উদ্বোধন করবেন।
রামগড় স্থলবন্দরের প্রকল্প পরিচালক (যুগ্মসচিব) মো. সারওয়ার আলম এ প্রতিনিধিকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রী ১৪ নভেম্বর ভার্চুয়ালি এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করবেন। এ জন্য বন্দর ও কাস্টমস কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্টরা সব প্রস্তুতি শেষ করেছেন।
রামগড় উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বিশ্বপ্রদীপ কুমার কারবারি বলেন, ‘স্থলবন্দরটি দেশের অর্থনীতিতে তাৎপর্যপূর্ণ। এটি শুধু এ অঞ্চল নয়, সমগ্র দেশের অর্থনৈতিক কল্যাণে ভূমিকা রাখবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘দেশের বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রাম, পর্যটন নগরী কক্সবাজার ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী অধ্যুষিত পার্বত্য চট্টগ্রামের এবং ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চলের সেভেন সিস্টার্স খ্যাত সাত রাজ্যের কয়েক কোটি মানুষ এ বন্দর ব্যবহারে উপকৃত হবে। ব্যবসা-বাণিজ্য ও পারস্পরিক সম্পর্ক উন্নয়নে আরও সুদৃঢ় হবে বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রীময় বন্ধন।’
রামগড় পৌরসভার মেয়র রফিকুল আলম কামাল বলেন, ‘ত্রিপুরা রাজ্যের সঙ্গে সংযুক্ত রামগড় স্থলবন্দর গুরুত্ব বিবেচনায় বেনাপোল থেকে কিছু মাত্র কম হবে না। চট্টগ্রাম বন্দর সংশ্লিষ্টতার কারণে গুরুত্ব বিবেচনায় বেনাপোলকে ছাড়িয়ে যাবে।’
জানা যায়, রামগড়ের সঙ্গে দ্রুত যোগাযোগ স্থাপনে মিরসরাই ফটিকছড়িসহ উত্তর চট্টগ্রামের সড়ক ব্যবস্থাপনায় এসেছে বৈপ্লবিক উন্নয়ন। রামগড় স্থলবন্দরের মাধ্যমে ভারতের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্যর প্রসার ঘটবে। চট্টগ্রাম থেকে বেনাপোলের দূরত্ব বেশি। প্রচুর সময় দরকার, খরচও বেশি। পক্ষান্তরে রামগড় বন্দর চালু হওয়ার মাধ্যমে কম সময় ও স্বল্প খরচে ভারত পণ্যসামগ্রী নিতে পারবে। এটি একটি ইতিবাচক দিক। এতে দুুুুদেশই লাভবান হবে। এছাড়া মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চল ও চট্টগ্রাম বন্দরের পাশাপাশি মাতারবাড়ী গভীরসমুদ্র বন্দরের নানা কর্মকা-ে রামগড় বন্দর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। পাশাপাশি চট্টগ্রামের নাজিরহাট থেকে রামগড় স্থলবন্দর পর্যন্ত রেল লাইন সম্প্রসারণের মহাপরিকল্পনার বিষয়টি সরকারি সংশ্লিষ্ট বিভাগ গুরুত্বের সঙ্গেই দেখছে।
স্থানীয় বাসিন্দা অধ্যক্ষ ফারুকুর রহমান বলেন, ‘ভবিষ্যতে রামগড় এক অনন্য উচ্চতায় পৌঁছাবে। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে প্রায় ১১২ কিলোমিটার দূরত্বের এ স্থলবন্দর ব্যবহার করে মাত্র ৩ ঘণ্টায় ট্রান্সশিপমেন্টের পণ্য যাবে ভারতে। পাশাপাশি এ সড়কের মাধ্যমে ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চলীয় ত্রিপুরা রাজ্যসহ মেঘালয়, আসাম, মণিপুর, মিজোরাম, নাগাল্যান্ড এবং অরুণাচলের (সেভেন সিস্টার্স) সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন হবে।’
ইতিমধ্যেই রামগড়ে বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী সেতু-১ হয়ে গেছে। ফলে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর ও ঢাকার সঙ্গে ত্রিপুরার সাব্রুম ও খাগড়াছড়ির রামগড় স্থলবন্দরের সংযোগ স্থাপিত হবে সহজেই।
রামগড় বাজার ব্যবসায়ী কমিটির সভাপতি সালাউদ্দিন সুমন ও সাধারণ সম্পাদক দেবপ্রিয় শর্মা বলেন, এর মাধ্যমে আন্তঃদেশীয় ব্যবসা-বাণিজ্যে সম্প্রসারণ ঘটবে। উন্মোচিত হবে অর্থনীতির নতুন দুয়ার।
বিশ্লেষকদের মতে, শুধু চট্টগ্রাম পোর্ট নয়, চট্টগ্রাম বিমান বন্দরও ত্রিপুরাবাসী ব্যবহার করতে পারে। রামগড় স্থলবন্দর হবে দুদেশের নতুন বাণিজ্যিক করিডোর।
এ স্থলবন্দরের মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে ব্যবসা, বাণিজ্য ও পর্যটন শিল্পের প্রসার এবং মানুষে মানুষে সম্পর্কোন্নয়নে গোটা অঞ্চলের উপকার হবে। চট্টগ্রাম বন্দরকে উত্তর-পূর্ব ভারতের কমপক্ষে পাঁচ কোটি মানুষ ব্যবহার করবে। তখন প্রচুর রাজস্ব আয় হবে। ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারিত হওয়ার পাশাপাশি কর্মসংস্থান বাড়বে। উত্তর-পূর্ব ভারতের পণ্য আনা-নেওয়ার জন্য কলকাতা বন্দরে যেতে ১২শ কিলোমিটার পাড়ি দিতে হয় অন্যদিকে চট্টগ্রাম বন্দরের দূরত্ব অনেক কম। ভারতীয়রা সময় ও অর্থ বাঁচিয়ে পৃথিবীর অন্যতম দীর্ঘ সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার ভ্রমণের সুযোগ পাবে। আবার চট্টগ্রাম, ও পার্বত্য চট্টগ্রামের লোকজনও সহজেই সেভেন সিস্টার্স বেড়াতে যেতে পারবেন। অর্থনৈতিকভাবে এ অঞ্চল হবে সমৃদ্ধ। ব্যবসা-বাণিজ্যসহ সবক্ষেত্রেই অভাবনীয় উন্নয়ন ঘটবে। পুরো এলাকার চেহারাটা পাল্টে যাবে।