নিজস্ব প্রতিবেদক »
এমভি আবদুল্লাহ নামে বাংলাদেশের পতাকাবাহী একটি জাহাজ ভারত মহাসাগরে সোমালিয়ান জলদস্যুদের কবলে পড়েছে। আনুমানিক ৫০ জন সশস্ত্র জলদস্যু জিম্মি করেছে জাহাজটিতে থাকা ২৩ জন নাবিককে। তবে জিম্মি কোনো নাবিককে আঘাত না করে জাহাজটি সোমালিয়া উপকূলে নিয়ে যেতে বাধ্য করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
গতকাল মঙ্গলবার বেলা ১২টার দিকে সোমালিয়ান জলদস্যুদের কবলে পড়ার ঘটনাটি জানান এসআর শিপিংয়ের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মোহাম্মদ মেহেরুল করিম।
তিনি জানান, এ জাহাজটি চট্টগ্রামের কবির স্টিল রি-রোলিং মিলস (কেএসআরএম) গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান এসআর শিপিংয়ের মালিকানাধীন। ২০১৬ সালে তৈরি জাহাজটি লম্বায় ১৯০ মিটার। ‘গোল্ডেন হক’ নামের জাহাজটি মালিকানা পরিবর্তনের পর নতুন নাম রাখা হয় এমভি আবদুল্লাহ।
জাহাজ থেকে একজন বাংলাদেশি নাবিক হোয়াটসঅ্যাপে বার্তা পাঠান। বার্তাটিতে তিনি লিখেন, ‘শ’খানেক জলদস্যু জাহাজটিকে আক্রমণ করে। সেটি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার পর ২৩ বাংলাদেশি নাবিককে জিম্মি করা হয়। তাদের কেবিনে রাখা হয়েছে। জাহাজে অন্তত ৫০ জন সশস্ত্র জলদস্যু অবস্থান করছে। তবে নাবিকরা সুস্থ আছেন। জিম্মি করা হলেও তাদের কোনো আঘাত করা হয়নি। জাহাজটিকে জলদস্যুরা সোমালিয়া উপকূলের দিকে নিয়ে যেতে বাধ্য করছে।’
জিম্মি হওয়া ক্রুরা হলেন- ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ আব্দুর রশিদ, চিফ অফিসার মোহাম্মদ আতিকুল্লাহ খান, সেকেন্ড অফিসার মাজহারুল ইসলাম চৌধুরী, থার্ড অফিসার মো. তারেকুল ইসলাম, ডেক ক্যাডেট মো. সাব্বির হোসেন, প্রধান প্রকৌশলী এএসএম সাইদুজ্জামান, দ্বিতীয় প্রকৌশলী মো. তৌফিকুল ইসলাম, তৃতীয় প্রকৌশলী মো. রোকন উদ্দিন, চতুর্থ প্রকৌশলী তানভীর আহমদ, ইঞ্জিন ক্যাডেট আইয়ুব খান, ইলেক্ট্রিশিয়ান ইব্রাহিম খলিল উল্লাহ, এবি মো. আনোয়ারুল হক, এবি মো. আসিফুর রহমান, এবি সাজ্জাদ হোসেন, ওএস জয় মাহমুদ, ওএস মো. নাজমুল হক, ওএস আইনুল হক, অয়েলার মোহাম্মদ শামসউদ্দিন, মো. আলী হোসেন, ফায়ারম্যান মোশারফ হোসেন শাকিল, চিফ কুক মো. শফিকুল ইসলাম, জিএস মো. নূর উদ্দিন ও ফিটার মো. সালেহ আহমেদ। তাদের মধ্যে ১১ জন চট্টগ্রামের এবং সাতজন বাংলাদেশ মেরিন একাডেমির ক্যাডেট বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে এসআর শিপিংয়ের সিইও মোহাম্মদ মেহেরুল করিম বলেন, ‘আফ্রিকার মোজাম্বিক থেকে কয়লা নিয়ে জাহাজটি সংযুক্ত আরব-আমিরাতের দুবাই যাওয়ার সময় জাহাজটি জলদস্যু আক্রান্ত হওয়ার তথ্য জানা গেছে। এ বিষয়ে গুরুত্ব সহকারে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে।
২০১০ সালের ৫ ডিসেম্বর আরবসাগরে ‘এমভি জাহান মণি’ নামে আরেকটি জাহাজ সোমালিয়ান জলদস্যু দ্বারা আক্রান্ত হয়েছিলো। ওই জাহাজটিতে ২৫ বাংলাদেশি নাবিকের পাশাপাশি এক ক্যাপ্টেনের স্ত্রীসহ ২৬ জনকে ১০০ দিন জিম্মি করে রাখা হয়েছিল। সরকারি উদ্যোগসহ নানা প্রক্রিয়ায় ২০১১ সালের ১৪ মার্চ জিম্মিদের মুক্তি দেওয়া হয়। পরের দিন (১৫ মার্চ) তারা বাংলাদেশে ফিরে আসেন। আশা করছি, এবারও আমরা সবাইকে সুস্থ ও স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে পারবো।’