পাড়ের বাসিন্দাদের স্বস্তি
নিজস্ব প্রতিনিধি, ফটিকছফড়ি :
রাক্ষসী হালদা। উত্তাল হালদা। সর্বগ্রাসী হালদা। নানান নামে অভিহিত করে হালদা পাড়ের মানুষেরা। নদীর উৎপত্তি পার্বত্য অঞ্চলে হওয়ায় বর্ষায় তার গর্জনে কপাল পুড়ে দুই পাড়ের হাজার হাজার হালদা পাড়ের বাসিন্দাদের। এখন সেই হালদা নদীর ভাঙ্গণ রোধে বসছে সিসি বøক। বন্যা প্রতিরোধে নির্মিত হচ্ছে বেড়িবাঁধ। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড ১শ ৫৭ কোটি টাকা ব্যয়ে হালদা নদীর ফটিকছড়ি-হাটহাজারী অংশে এবং তার উপ-শাখা খাল ধুরুং এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে ২০১৮ সালের অক্টোবর থেকে।
সরেজমিনে পরিদর্শনে দেখা যায়, হালদা নদীর সমিতিরহাট ইউনিয়নের দক্ষিণ নিচিন্তাপুর, ধুরুং খালের মুখ, পেলা গাজির বাড়ি, আকবর শাহ বাড়ি, ছাদেক নগর, আরবানীয়া হালদা ব্রিজ এলাকায় দেখা গেছে বেড়িবাঁধ নির্মাণের কাজ অনেক শেষ হয়েছে।
সমিতিরহাট হাজির ঘাটা, রোসাংগীরি ইউনিয়নের শীলের হাট, নাজিরহাট পৌরসভার ফরহাদাবাদ, কুম্ভারপাড় এলাকায় সিসি বø¬ক স্থাপনের বেশ কিছু কাজ শেষ হয়েছে।
সুন্দরপুর, আজিমপুর, সুয়াবিল, হারুয়ালছড়ি, পাইন্দং, ভূজপুর, নারায়ণহাট, হাটহাজারীর ফরহাদাবাদ এলাকায় এবং ধুরুং খালের ফটিকছড়ি পৌরসভার বিভিন্ন অংশে বেড়িবাঁধ নির্মাণ ও সিসি বøক স্থাপনের কাজ চলছে।
সমিতিরহাট ইউনিয়নের দক্ষিণ নিচিন্তাপুর এলাকার কৃষিজীবী মো. পেয়ারুল ইসলাম জানান, ২০১৭-১৮ সালের বন্যায় তার পৈত্রিক ২বিঘার বেশী ধানী জমি ও একটি মুরগীর খামার হালদা নদীতে তলিয়ে গেছে। এখন বেড়িবাঁধ দেয়ার কারণে পৈত্রিক ভিটা ভ‚মিটি রক্ষা হবে।
আরবানীয়া সওদাগর বাড়ির বাসিন্দা মোস্তাকিম টিটু জানান, বছর বছর হালদা নদী রাক্ষসী হয়ে বাপ-দাদার ভিটে মাটির শেষ চিহ্ন টুকু আছে। বেড়িবাঁধ নির্মাণ ও সিসি বøক স্থাপনের কারণে নতুন আশায় বুক বেঁধেছি।
নাজিরহাট কুম্ভার পাড় এলাকার আবদুল লতিফ জানান, হালদার ভাঙ্গণে নড়তে নড়তে জীবনের শেষ প্রান্ত। এখন দেখছি সরকারি লোকজন মাটি কাটছে, পাথর বøক করছে। দেখে স্বপ্ন দেখছি আবার। আশা করি ছেলে মেয়েদের আর নড়তে হবে না।
রোসাংগীরি ইউপি চেয়ারম্যান সোয়েব আল সালেহীন বলেন, হালদার ভাঙ্গণ এবং বাঁধ উপচে বন্যার কারণে প্রতি বছর যা উন্নয়ন কর্মকাÐ করি তা নষ্ট হয়ে যায়। এখন সেগুলো রক্ষা হবে।
ফটিকছড়ি পৌরসভার মেয়র মো. ইসমাইল হোসেন বলেন, আমার পৌর এলাকার বুক ছিড়ে বয়ে চলেছে ধুরুং খাল। পাউবোর বাস্তবায়িত প্রকল্পটির কাজ শেষ হলে আতংকিত পৌরবাসী স্বস্তি পাবে।
নাজিরহাট পৌরসভার মেয়র মো. সিরাজুদৌল্ল¬াহ বলেন, হালদা নদীর ভাঙ্গণ আর হালদার পুরাতন সেতু আমাদের দুঃখ। এখন ভাঙ্গণ রোধে সিসি বøক হচ্ছে, বেড়িবাঁধ হচ্ছে। নিঃস্ব মানুষগুলো নতুন করে স্বপ্ন দেখছে। সরকারের ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানাই।
এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ড চট্টগ্রামের নির্বাহী প্রকৌশলী তয়ন কুমার ত্রিপুরা বলেন, হালদা নদী ও ধুরুং খালে বেড়িবাঁধ নির্মাণ, সিসি বøক স্থাপনের কাজ প্রায় ৫০% শেষ। বাকি কাজ সম্পন্ন হলে প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে হালদা, ধুরুং খালের ভাঙ্গণে এবং বন্যায় যে পরিমাণ ক্ষতি হয় তা অনেকাংশে কমে যাবে।