চসিকের সভা
পতেঙ্গা এলাকায় সুপেয়
পানি মিলছে না
হকার পুনর্বাসনে সুফল মেলেনি
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সাধারণ সভায় গতকাল ব্যাটারিরিকশা ও অবৈধ হকার নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বক্তারা।
রোববার নগরীর থিয়েটার ইন্সটিটিউটে চসিকের নির্বাচিত ৬ষ্ঠ পরিষদের ৩৩তম সাধারণ সভায় বক্তারা দ্রুততম সময়ে ব্যাটারি রিকশা বন্ধ এবং অবৈধ হকারদের দৌরাত্ম রোধে পদক্ষেপ গ্রহণের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেন।
হকার প্রসঙ্গে মেয়র বলেন, হকার সবসময় ছিল। কিন্তু এখন এমন একটা অবস্থা তৈরি হয়েছে যেন ফুটপাতগুলো টাইলস করে দেয়াই হয়েছে তাদের ব্যবসা করার জন্য। আর রাস্তায় ভ্যানগাড়ির কারণে প্রচণ্ড জ্যাম হচ্ছে। হকারদের জন্য শিক্ষার্থীরা, বিশেষ করে মেয়েরা স্কুলেও ঢুকতে পারেনা। অনেকে হকার পুনর্বাসনের কথা বলেন। পূর্বে হকার পুনর্বাসন কোন সুফল বয়ে আনেনি। এর আগে হকারদের জহুর হকার মার্কেটে পুনর্বাসন করা হয়। কিন্তু দোকান বরাদ্দ পেয়েই অনেকে দোকান বিক্রি করে আবারো ফুটপাত দখল করে ব্যবসা শুরু করেন। এ কারণে, শুক্র ও শনিবার আগ্রাবাদসহ বিভিন্ন এলাকায় উপযুক্ত স্থানে হলিডে মার্কেট চালু করার পক্ষে আমি।
পে-পার্কিং বিষয়ে মেয়র বলেন, অভিযোগ পেয়েছি বেশ কিছু বড় মার্কেটে কাস্টমারদের পার্কিং ব্যবহার করতে না দেয়ায় গাড়ি রাস্তায় পার্কিং করায় প্রচণ্ড জ্যাম হচ্ছে।
ট্রাফিক বিভাগ ও চসিকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বলব এসব মার্কেটের কর্তৃপক্ষকে আইনের আওতায় আনতে। ইতোমধ্যে ডিসি ট্রাফিক আমার সাথে দেখা করেছেন। আমরা ঠিক করেছি চসিক ও ট্রাফিক বিভাগ একসাথে পে-পার্কিং বাস্তবায়নে কাজ করবে এবং নগরীর ট্রাফিক ব্যবস্থাপনাকে ঢেলে সাজাবে।
ব্যাটারিচালিত রিকশা প্রসঙ্গে মেয়র বলেন, ব্যাটারিচালিত রিকশা এখন আতঙ্কের কারণ হয়ে দাড়িয়েছে। এগুলোর ব্রেক অত শক্তিশালী না, আবার অনেক সময় ছোট বাচ্চারাও চালায়। সাথে বিদ্যুৎ চুরি ও অপচয়ের বিষয়টিতো আছেই। এজন্য সোলার রিকশা চালু করতে হবে।
আমাদের অযান্ত্রিক যানবাহনের লাইসেন্স প্রদানের কার্যক্রম চলছে, এটি শেষ হলে ব্যাটারিচালিত রিকশা নিয়ন্ত্রণে আইনি কোন বাধা আছে কি না তা আমরা পর্যালোচনা করে অন্যান্য সংস্থার সাথে মিলে যৌথভাবে পদক্ষেপ গ্রহণ করব। প্রয়োজনে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হবে। যে ব্যাটারিচালিত রিকশাগুলো আছে সেগুলোকে সোলারচালিত হিসেবে রূপান্তর করে নিতে হবে। তবে, সোলার রিকশা চালু করলেও অল্প কিছু এলাকা ছাড়া মূল সড়কে এই রিকশাকে উঠতে দেয়া যাবেনা। প্রয়োজনে রিকশার জন্যও লাইসেন্স চালু করতে হবে যাতে শিশুরা এসব না চালাতে পারে। আইনি কাঠামোতে ব্যাটারি রিকশা বন্ধের সুযোগ থাকলে প্রাথমিকভাবে বহদ্দারহাট থেকে সল্টগোলা পর্যন্ত বন্ধ করে দিব। পরে ধাপে ধাপে ব্যাটারিচালিত রিকশাকে নিয়ন্ত্রণে আনব।
এ সময় কমান্ডার লতিফুল হক কাজমী, পিএসসি, বিএল ব্যাটারিচালিত রিকশাগুলোতে সর্বোচ্চ ২০ কিলোমিটার গতিবেগের নিয়ন্ত্রক সেন্সর ব্যবহারের পরামর্শ দেন।
এ সময় চসিক, জনপ্রতিনিধি এবং ট্রাফিক বিভাগ সমি¥লিতভাবে কাজ করে হকারদের অবৈধ দখল ও ব্যাটারি রিকশা কমানো সম্ভব বলে মন্তব্য করে এডিসি মো. কাজী হুমায়ুন রশীদ বলেন, ষোলশহর দুই নম্বর গেট এবং জিইসি জনবহুল এলাকা। এ দুটি এলাকায় ফুটওভার ব্রিজসহ শহরজুড়ে জ্যাব্রা ক্রসিং বাড়াতে পারলে সড়ক দুর্ঘটনা কমানো সম্ভব।
সুপেয় জলের ব্যবস্থা করতে ওয়াসার প্রতি আহ্বান জানিয়ে মেয়র বলেন, পতেঙ্গা এলাকায় লবণাক্ততার জন্য পানি খাওয়াতো দূরে থাক, সে পানি দিয়ে গোসলও করা যাচ্ছেনা। আবার এক সময়ের সুপেয় পানির উৎস পুকুর-দীঘিগুলোও নেই। এজন্য ওয়াসাকে জলাবায়ু পরিবর্তন ও নগরীতে দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধির বিষয়টি মাথায় রেখে সুপেয় পানি সরবরাহের সক্ষমতা বাড়াতে হবে। আমি কাউন্সিলরদের বলব, আপনাদের এলাকায় যেসব নালা-কালভার্টের নীচে ওয়াসা-টিএন্ডটিসহ বিভিন্ন সংস্থার পাইপ গিয়ে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে সেগুলো চিহ্নিত করে ওয়াসাসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সাথে যোগাযোগ করে সেগুলো অপসারণ করুন।
জবাবে চট্টগ্রাম ওয়াসার নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুর রউফ জানান, সুপেয় জল সরবরাহ সক্ষমতা বাড়াতে ওয়াসা সচেষ্ট আছে। চসিকের সাধারণ সভায় উত্থাপিত বিষয়গুলো দ্রুত সমাধানে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করব। অনুমতি ছাড়া সড়ক কর্তনকারী ঠিকাদার ও গ্রাহকদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ইতোমধ্যে ফিরিঙ্গিবাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় ওয়াসার পাইপ লাইনের লিকেজ মেরামতের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। পুরাতন কিছু ওয়াসার পাইপ নালা ও বক্স কালভার্টের ভিতর ছিল সেগুলো সরিয়ে নেয়া হচ্ছে।
চট্টগ্রামের অন্য সেবা সংস্থাগুলোকে ধন্যবাদ জানিয়ে মেয়র বলেন, প্রধানমন্ত্রীর টানেল উদ্বোধনকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন সংস্থার যেসব প্রতিনিধি এসেছেন তারা অনেকে চট্টগ্রামের উন্নয়ন দেখে অবাক হয়েছেন।
বিশেষ করে সড়ক নির্মাণ, আলোকায়ন ও সৌন্দর্যবধনের জন্য চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন প্রশংসা কুড়িয়েছে। এটা সম্ভব হয়েছে অন্য সংগঠনগুলোর সহযোগিতার কারণে।
ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে চলমান কার্যক্রম প্রসঙ্গে মেয়র বলেন, মশা নিধনের পর্যাপ্ত মেডিসিন ক্রয় করা হয়েছে, বাড়ানো হচ্ছে জনবল। শুষ্ক মৌসুমে ৬ মাস কাজ করলে আগামী বছর ভাল ফল পাওয়া যাবে বলে আশা মেয়রের।
সভায় বিগত সাধারণ সভার কার্যবিবরণী, দরপত্র কমিটির কার্যবিবরণী এবং স্ট্যান্ডিং কমিটির কার্যবিবরণী অনুমোদিত হয়। সভায় চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম, প্যানেল মেয়র, কাউন্সিলরসহ চসিকের বিভাগীয় ও শাখা প্রধান এবং নগরীর বিভিন্ন সরকারি সংস্থার প্রতিনিধিবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। বিজ্ঞপ্তি