সুপ্রভাত ডেস্ক »
বান্দরবানের রুমা ও থানচিতে সোনালী ও কৃষি ব্যাংকের শাখার সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজে ডাকাতি করতে আসা অস্ত্রধারীদের কিছু চিত্র ইতোমধ্যে গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। সোমবার (৮ এপ্রিল) আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সূত্রে ওই ভিডিও ফুটেজ এবং ফুটেজ থেকে নেওয়া বেশ কিছু ছবি পাওয়া গেছে।
ব্যাংক লুটের চেষ্টার ঘটনায় সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে ইতিমধ্যে অনেককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। শনাক্ত করে বাকিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চালাচ্ছে যৌথ বাহিনী।
বান্দরবানে সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার, অস্ত্র ও টাকা উদ্ধারে বান্দরবানে সেনাবাহিনী, বিজিবি, র্যাব, পুলিশ ও আনসার সদস্যদের সমন্বিত অভিযান চলছে। অভিযান সমন্বয় করছে সেনাবাহিনী। রোববার শুরু হওয়া এ অভিযানে কেএনএফের দুই সদস্যসহ ৫৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ঘটনায় রুমা ও থানচি থানায় ছয়টি মামলা হয়েছে।
ব্যাংক ডাকাতি ও অস্ত্র লুটের পর শুরু হওয়া যৌথ অভিযানে গ্রেপ্তার ৫৫ জনের মধ্যে ১৯ জন নারী রয়েছেন। এ ছাড়া ৭টি বন্দুক, ২০ রাউন্ড গুলি, ল্যাপটপ, কেএনএফের ইউনিফর্ম ও বুট উদ্ধার করা হয়েছে। ডাকাতিতে ব্যবহৃত একটি গাড়িও জব্দ করা হয়।
আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, রুমা উপজেলার বেথেলপাড়ায় সোমবার যৌথ বাহিনীর অভিযানে কেএনএফের দু’জন সক্রিয় সদস্যকে আটক এবং সাতটি দেশি বন্দুক উদ্ধার করা হয়।
এ নিয়ে কেএনএফের তিন সক্রিয় সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হলো। এর আগে রোববার সদর উপজেলার সুয়ালক ইউনিয়নের শ্যারনপাড়া থেকে কেএনএফের ‘প্রধান সমন্বয়ক’কে গ্রেপ্তারের কথা জানায় র্যাব।
বান্দরবান জেলা পুলিশ সূত্র জানায়, ব্যাংক ডাকাতি ও থানায় হামলার ঘটনায় চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে একজনকে থানচি ও অপর তিনজনকে বান্দরবান সদরের রেইসা চেকপোস্ট এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃত হলো– রোয়াংছড়ির রৌনিনপাড়ার জিংচুন নুং বমের ছেলে ভাননুন নুয়াম বম, থানচির সিমত্লাংপিপাড়ার লালমুন চম বমের মেয়ে জেমিনিউ বম ও ছেলে আমে লমচেউ বম।
কেএনএফ সদস্যরা ব্যাংক ডাকাতির জন্য দুটি গাড়ি ব্যবহার করেছে। এর মধ্যে একটি জব্দ ও এর চালক কফিল উদ্দিনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। অভিযান শুরুর পর তারা বান্দরবান ছেড়ে গোপনে ঢাকায় যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তাদের ধরা হয়।
বান্দরবানের পুলিশ সুপারের দপ্তর থেকে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ব্যাংক ডাকাতির ঘটনায় গ্রেপ্তার চারজনই জড়িত। তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে।
বান্দরবানের রুমা ও থানচি উপজেলায় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের জেরে নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসন। এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে ব্যাপক প্রস্তুতি নিচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। দুই উপজেলার সার্বিক নিরাপত্তায় নেওয়া হচ্ছে নতুন নতুন পদক্ষেপ। এরই অংশ হিসেবে চলমান পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিশেষ সাঁজোয়া যান এপিসি আনা হয়েছে এ দুই উপজেলায়। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় এরই মধ্যে টহল শুরু করেছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।
একাধিক গোয়েন্দা সূত্র জানায়, কেএনএফের সঙ্গে গোপন যোগাযোগ রাখা বম সম্প্রদায়ের সদস্যদের নাম-পরিচয় পাওয়া গেছে। তাদের মধ্যে কয়েকজন ছোটখাটো সরকারি-বেসরকারি চাকরিও করছে। তারা বিভিন্ন তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করছে বলে তথ্য পেয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। গ্রেপ্তার এড়াতে কেএনএফ-প্রধান নাথান বমের পরিবারের সদস্যরা গা-ঢাকা দিয়েছে। তারা পাঁচ ভাই এক বোন।
কেএনএফ সংগঠনের শক্তি বাড়াতে নারী সদস্যদেরও সম্পৃক্ত করেছে। দলের সদস্যদের ভাগ করে বিভিন্ন মেয়াদে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।
কেএনএফ সশস্ত্র সংগঠন হিসেবে আত্মপ্রকাশের পর থেকে নানা অপকর্মে জড়িয়ে পড়েছে। দেশে নতুন জঙ্গি সংগঠন ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার’ সদস্যদের অর্থের বিনিময়ে প্রশিক্ষণ দিয়েছে তারা।
রোয়াংছড়ি উপজেলার সোনালী ব্যাংকের কর্মচারী লালজখুম বম অর্থ লেনদেনে বড় ভূমিকা পালন করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তাঁর ব্যাংক হিসাব নম্বরে অবৈধ অর্থ লেনদেনের তথ্য পাওয়া পর গ্রেপ্তার করা হয়। বর্তমানে রাঙামাটির কারাগারে আছেন তিনি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রুমা ও রোয়াংছড়ি উপজেলার কয়েকজন স্কুলশিক্ষক জানান, সেখানকার সরকারি ও বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক কেএনএফের সঙ্গে সম্পৃক্ত। কেউ কেউ কেএনএফের সঙ্গে যুক্ত থেকে সামরিক কায়দার প্রশিক্ষণ নিয়েছে।
এদিকে কেনএনএফ তাদের ফেসবুক বিবৃতিতে দাবি করে, আটক ব্যক্তিরা কেএনএফের সদস্য নয়। তারা সবাই নিরীহ ও নিরপরাধ। এভাবে চলতে থাকলে কেএনএফও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ছাড় দেবে না, জবাব দিতে প্রস্তুত থাকবে।
কেএনএফ কেন শান্তি আলোচনার শর্ত লঙ্ঘন করেছে, তারও জবাব রয়েছে এ পোস্টে। বলা হয়েছে, প্রথম সশরীর বৈঠকে উভয় পক্ষ স্বাক্ষরিত শর্ত সরকার পক্ষ পুরোপুরি লঙ্ঘন করেছে। জেলে বন্দিদের (যারা কেএনএফ সদস্য নয় ও নিরীহ) এক মাসের মধ্যে ধাপে ধাপে মুক্তি দেওয়ার কথা থাকলেও তা পাঁচ মাসেও কার্যকর হয়নি।
গত ২ ও ৩ এপ্রিল রুমা ও থানচিতে সোনালী ও কৃষি ব্যাংকে ডাকাতি, ব্যাংক ব্যবস্থাপককে অপহরণ, টাকা লুট ও পুলিশ-আনসারের ১৪টি অস্ত্র ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। ব্যাংক ব্যবস্থাপক উদ্ধার হলেও লুট হওয়া অস্ত্র ও টাকা উদ্ধার করা যায়নি।