সুপ্রভাত ক্রাড়ী ডেস্ক »
প্রথম আধা ঘণ্টায় জালে দুবার বল পাঠিয়ে অসাধারণ কিছুর আভাস দেয় সেল্তা ভিগো। প্রতিবারই দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়ায় রিয়াল মাদ্রিদ। ম্যাচের পরবর্তীতেও সমান তালে ভীতি ছড়ায় সেল্তা, তবে দ্বিতীয়ার্ধে নজরকাড়া ফুটবল উপহার দেওয়া প্রতিপক্ষের সঙ্গে আর পেরে ওঠেনি তারা। করিম বেনজেমার হ্যাটট্রিকে দারুণ এক জয়ে লিগ টেবিলের শীর্ষে ফিরল প্রতিযোগিতার সফলতম দলটি। ১৮ মাস পর সান্তিয়াগো বের্নাবেউয়ে ফেরার ম্যাচে রোববার রাতে ৫-২ গোলে জিতেছে কার্লো আনচেলত্তির দল। হ্যাটট্রিক করার পাশাপাশি ভিনিসিউস জুনিয়রের গোলেও অবদান রাখেন বেনজেমা। তাদের অপর গোলদাতা অভিষিক্ত এদুয়ার্দো কামাভিঙ্গা।
বেশ কয়েকটি উল্লেখযোগ্য সুযোগ নষ্ট না হলে স্কোরলাইন আরও বড় হতে পারত। ম্যাচের প্রায় ৬০ শতাংশ সময় বল দখলে রেখে গোলের জন্য মোট ১৫টি শট নেয় রিয়াল, যার ১১টি লক্ষ্যে। দারুণ চ্যালেঞ্জ জানানো সেল্তার ১১ শটের চারটি ছিল লক্ষ্যে। চার ম্যাচে তিন জয় ও এক ড্রয়ে ১০ পয়েন্ট শীর্ষে আছে আনচেলত্তির দল। ম্যাচের শুরুতেই নিজেদের ভুলে গোল হজম করে রিয়াল। প্রতিপক্ষের একটি আক্রমণে তেমন কোনো হুমকিই ছিল না; কিন্তু ডি-বক্সে বল ক্লিয়ার করতে গিয়ে গড়বড় করে ফেলেন কাসেমিরো ও নাচো ফের্নান্দেজ। সেই সুযোগে ইয়াগো আসপাস বল ধরে ছোট পাস দেন সান্তি মিনাকে আর স্প্যানিশ এই ফরোয়ার্ড কোনাকুনি শটে সেল্তাকে এগিয়ে নেন।
পিছিয়ে পড়ার পর প্রবল চাপ বাড়ায় রিয়াল। পরের ১০ মিনিটে কয়েকটি সুযোগও তৈরি করে, কিন্তু সাফল্য মেলেনি। এদেন আজারের ফ্রি কিকে ভিনিসিউস জুনিয়রের হেড কোনোমতে কর্নারের বিনিময়ে ফেরান গোলরক্ষক। খানিক পর ভালো পজিশনে থেকে গোলরক্ষক বরাবর শট নেন আজার। অবশেষে ২৪তম মিনিটে গোলের দেখা পায় রিয়াল। কাসেমিরোর দূরের পোস্টে উঁচু করে বাড়ানো বল ভলিতে কাটব্যাক করেন ফেদে ভালভেরদে। আর পেনাল্টি স্পটের কাছে ফাঁকায় বল পেয়ে প্রথম ছোঁয়ায় জোরালো শটে সমতা টানেন বেনজেমা। তবে তাদের সে স্বস্তি স্থায়ী হয়নি। পাল্টা আক্রমণে মাঝেমধ্যেই ভীতি ছড়ানো সেল্তা তেমনি এক আক্রমণে ৩১তম মিনিটে আবার এগিয়ে যায়। সতীর্থের পাস ছয় গজ বক্সের মুখে পেয়ে এমানুয়েল সের্ভির ব্যাকহিল প্রচেষ্টা পোস্টে বাধা পায়, তবে ফিরতি বল দ্বিতীয় প্রচেষ্টায় জালে পাঠাতে ভুল করেননি এই আর্জেন্টাইন মিডফিল্ডার। বিরতির আগের বাকি সময়ে সমান তালে চলতে থাকে আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণ। বেনজেমা হেডে আবারও জালে বল পাঠিয়েছিলেন; কিন্তু পরিষ্কার অফসাইডে ছিলেন তিনি।
দ্বিতীয়ার্ধের খেলা শুরু হতেই আবারও উদযাপনের উপলক্ষ এনে দেন বেনজেমা। মিগেল গুতিয়েরেসের ক্রসে প্রতিপক্ষের দুই খেলোয়াড়ের মধ্যে থেকে হেডে স্কোরলাইন ২-২ করেন ফরাসি ফরোয়ার্ড। লিগের প্রথম ম্যাচে জোড়া গোল করেছিলেন তিনি। আট মিনিট পর দারুণ গোলে রিয়ালকে প্রথমবারের মতো এগিয়ে নেন ভিনিসিউস। বেনজেমার পাস ধরে মাঝমাঠ থেকে এক ছুটে ডি-বক্সে ঢুকে ঠাণ্ডা মাথায় নিচু শটে গোলরক্ষকের পাশ দিয়ে ঠিকানা খুঁজে নেন ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড। দ্বিতীয় রাউন্ডে লেভান্তের মাঠে ৩-৩ ড্রয়ের ম্যাচে জোড়া গোল করেছিলেন তিনি। এগিয়ে গেলেও স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলার সময় ছিল না রিয়ালের। চার মিনিট পরই স্কোরলাইনে আবারও সমতা আসতে পারত; তবে আসপাসের ভলি দারুণ রিফ্লেক্সে ঠেকিয়ে দেন থিবো কোর্তোয়া। ৬৬তম মিনিটে ভিনিসিউসের শট কোনোমতে পা দিয়ে ফেরান সেল্তা গোলরক্ষক মাতিয়াস দিতুরো। ৬৮তম মিনিটে আজারকে তুলে নিয়ে কামাভিঙ্গাকে মাঠে নামান কোচ। অভিষেকে চার মিনিটের মাথায় গোল পেয়ে যান তরুণ এই ফরাসি মিডফিল্ডার। লুকা মদ্রিচের শট গোলরক্ষক ঠেকালেও দলকে বিপদুমক্ত করতে পারেননি, আলগা বল অনায়াসে জালে পাঠান ১৮ বছর বয়সী কামাভিঙ্গা।
আর ৮৭তম মিনিটে স্পট কিকে হ্যাটট্রিক পূরণ করেন বেনজেমা। ডান দিক দিয়ে ডি-বক্সে ঢোকা ভিনিসিউস ফাউলের শিকার হলে পেনাল্টিটি পায় রিয়াল। আসরে এখন পর্যন্ত চার ম্যাচে ৫ গোল করে তালিকার শীর্ষে বেনজেমা। আগামী বুধবার ইন্টার মিলানের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ অভিযান শুরু করবে রিয়াল। হাইভোল্টেজ লড়াইটির আগে ঘুরে দাঁড়িয়ে পাওয়া দারুণ এই জয় নিশ্চিতভাবেই বাড়তি আত্মবিশ্বাস জোগাবে আনচেলত্তির দলকে। দিনের অন্য ম্যাচে ওসাসুনার মাঠে ৪-১ গোলে জেতা ভালেন্সিয়া চার ম্যাচে সমান ১০ পয়েন্ট নিয়ে আছে দুইয়ে। আরেক ম্যাচে এস্পানিওলকে ২-১ গোলে হারানো আতলেতিকো মাদ্রিদের পয়েন্টও ১০, তিন নম্বরে আছে তারা। তিন ম্যাচে ৭ পয়েন্ট নিয়ে সপ্তম স্থানে বার্সেলোনা।