বেড়েছে আদা পেঁয়াজ রসুন ও ডিমের দাম

বাজারদর

নিজস্ব প্রতিবেদক »

গতকাল বৃহস্পতিবার নগরীর রেয়াজউদ্দিন ও বক্সিরহাট বাজার সরেজমিনে দেখা যায়- চাল, ডাল, আলু, আটা, পেঁয়াজ, রসুন, আদাসহ অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রীর দাম গত সপ্তাহের তুলনায় আরও বেড়েছে। তার সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে ডিমের দাম। গত সপ্তাহের দরে স্থিতিশীল রয়েছে মুরগি, মাছ, গরুর মাংসের বাজার ।

গতকাল বাজারে সরু মানের নাজিরশাইল ও মিনিকেট বিক্রি হয়েছে কেজিপ্রতি ৬০ থেকে ৭৫ টাকা। মাঝারি মানের পাইজাম ও লতা ৫০ থেকে ৫৫ টাকা। আর মোটা মানের স্বর্ণা ও ইরি জাতের চাল ৪৮ থেকে ৫০ টাকা। যা গত সপ্তাহে কম ছিল ২ থেকে ৫ টাকা।

নগরীর পাইকার বাজার চাক্তাইয়ের আলিফ ট্রেডার্সের ম্যানেজার মো. জামাল উদ্দিন বলেন, চালের বাজার নিয়ন্ত্রণ করে বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলো। কয়েকমাস ধরে কয়েক টাকা উঠানামা করছে।

এদিকে বক্সিরহাট বাজারে সয়াবিন তেল বিক্রি হয়েছে কেজিপ্রতি ১৯০ টাকা। আর বোতলজাত সয়াবিন ২০০ টাকার উপরে।

বাজারে কৃত্রিম সংকট রয়েছে খোলা চিনির। কিছু দোকানে চিনি বিক্রি হয়েছে ১৩৫ টাকার উপরে। আর গত এক মাস ধরে অস্থিরতার মধ্যে পেঁয়াজ ও আদার বাজার এখনো বিক্রি হচ্ছে চড়া দামে। গতকাল খুচরা বাজারে পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৮৫ থেকে ৯০ টাকা। আদা বিক্রি হয়েছে ২৪০ থেকে ২৬০ টাকা পর্যন্ত।

বক্সিরহাটের মাবিয়া স্টোরের মালিক মো. হারুন সওদাগর বলেন, ‘আমি চিনি বিক্রি করছি না। সরকার দর নির্ধারণ করে দিলেও ওই দামে পাইকাররা আমাদের কাছে বিক্রি করছে না। যার ফলে ক্রেতাদের সমালোচনার মুখোমুখি হতে হয়। তাছাড়া সপ্তাহের ব্যবধানে ভোজ্যতেল, আদা, পেঁয়াজসহ প্রায় নিত্যপণ্যের দাম বাড়তি চলছে। প্রশাসন আমাদেরকে অভিযান চালিয়ে কোন লাভ নেই। প্রশাসনকে অভিযান চালাতে হবে মূল গোড়ায়।’ এদিকে দিনদিন নিত্যপণ্যের চড়া দামে হিমশিম খাচ্ছেন নি¤œ ও মধ্য আয়ের ক্রেতারা।

ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের তথ্যমতে দেখা যায় নিত্যপ্রয়োজনীয় বেশিরভাগ পণ্যের দাম বাড়তি। তাদের মতে সপÍাহের ব্যবধানে সকল ধরনের চালে দাম বেড়েছে ২ থেকে ৫ টাকা। এদিকে এক মাসের ব্যবধানে ভোজ্যতেলের দাম বেড়েছে ৪ থেকে ৮ শতাংশ। চিনির দাম বেড়েছে এক মাসের ব্যবধানে বেড়েছে ৬ শতাংশ।
ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের তথ্যমতে দেখা যায় নিত্যপ্রয়োজনীয় বেশিরভাগ পণ্যের দাম বাড়তি। তাদের মতে সপ্তাহের ব্যবধানে সকল ধরনের চালে দাম বেড়েছে ২ থেকে ৫ টাকা। এদিকে এক মাসের ব্যবধানে ভোজ্যতেলের দাম বেড়েছে ৪ থেকে ৮ শতাংশ। চিনির দাম বেড়েছে এক মাসের ব্যবধানে বেড়েছে ৬ শতাংশ।

নগরীর আসকার দীঘির পাড়ের ফার্নিচার মিস্ত্রী মো. ফরিদ উদ্দিন জানান তাদের পরিবারে ৫ সদস্য। নিত্যপণ্যের দাম বাড়লেও সে হারে বেতন বাড়েনি। ফলে এখন বাধ্য হয়ে চাহিদার চেয়ে অনেক কম জিনিস কিনতে হয়। নিত্যপণ্যের এমন অস্বাভাবিক দাম বেড়ে যাওয়ায় সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে।

‘আগে বাজারে ৫০০ টাকা নিয়ে গেলে সব বাজার করা যেত। এখন ২০০০ হাজার টাকা নিয়ে গেলেও হচ্ছে না।
অন্যদিকে সপ্তাহের ব্যবধানে প্রায় সবজির দাম রয়েছে স্থিতিতে। তবে বাজারে শীতকালীন সবজির দাম বেড়েছে। গ্রীষ্মকালীন সবজির যোগানও চাহিদা অনুযায়ী অনেক কম। ফলে বাড়তি দামে ক্রেতাদের সবজি কিনতে হচ্ছে।

গতকাল বাজারে শীতকালীন সবজি ফুলকপি বিক্রি হয়েছে ১২০ থেকে ১৩০ টাকা, বাঁধাকপি ৬০ থেকে ৭০ টাকা ও টমেটো ৪০ থেকে ৬০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।
অন্যদিকে গ্রীষ্মকালীন সবজির মধ্যে বরবটি ৫০ থেকে ৬০ টাকা, পটল ৬০ থেকে ৭০ টাকা, লাউ ৪০ থেকে ৫০ টাকা, পেঁপে ৩০ থেকে ৪০ টাকা ও আলু ৩০ থেকে ৩৫ টাকা দরে কেজিতে বিক্রি হয়েছে।

বক্সিরহাট কাঁচাবাজারের ব্যবসায়ী মো. রুবেল বলেন, ১ কেজি আলুর দাম এখন ৩০ থেকে ৩৫ টাকা, যা গত মাসে ছিল ১৮-২০ টাকা। এছাড়া বাজারে পর্যাপ্ত যোগান না থাকায় বরবটি, পটল, করলা, ঢেঁড়সের মতো কয়েকটি সবজির দাম বেড়েছে।

একই বাজারে কথা হয় মো. এরফান নামের এক নিরাপত্তা কর্মীর সাথে। তিনি বলেন, ‘বারো ঘণ্টা ডিউটি করে প্রতি মাসে বেতন পায় ১৩ হাজার টাকা। পরিবারের সদস্য ৬ জন। যে বেতন পাই তাতে প্রয়োজনীয় খরচ কোনমতে মিটিয়ে মাছ-মাংস কেনার সামর্থ্য থাকে না।’

অন্যদিকে সপ্তাহের ব্যবধানে ডিমের দাম ডজন ১০ টাকা বেড়ে বিক্রি হয়েছে লেয়ার ডিম (লাল) ডজন ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকা বিক্রি হয়েছে। হাঁসের ডিম বিক্রি হয়েছে ১৮৫ থেকে ১৯০ টাকা।

অন্যদিকে চড়া হয়ে সপ্তাহের ব্যবধানে স্থিতিতে রয়েছে ব্রয়লার, সোনালী, দেশি মুরগিসহ মাছ ও গরুর মাংসের দাম।

গতকাল বাজারে ব্রয়লার মুরগি কেজিপ্রতি ২২০ থেকে ২২৫ টাকা, সোনালি ৩০০ থেকে ৩২০ টাকা ও দেশি ৬৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে। আর গরুর মাংস বিক্রি হয়েছে হাড়যুক্ত ৬০০ থেকে ৮৫০ টাকা ও হাড়ছাড়া ৯০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে।

বাজারে ২০০ টাকার নিচে কোন ধরনের মাছ নেই। বাজারে চাষের শিং মাছের কেজি বিক্রি হয়েছে ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকায়, রুই ২৫০ থেকে ৩৫০ টাকা, আইড় ও শোল মাছ ৬০০ থেকে ৭০০ টাকায় এবং কোড়াল ৭০০ টাকার উপরে। দেশি বড় চিংড়ি বিক্রি হয়েছে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা দরে। হরিণা, বাগদা ও গলদা আকারভেদে কেজি ৫৫০ থেকে ৭০০ টাকা ।