নিলা চাকমা »
গত কয়েকদিন ধরে প্রচুর পরিমাণে খাওয়া-দাওয়া হয়েছে সাইফুল ইসলামের। একদিন সকালে হঠাৎ বুকে প্রচ- ব্যথা শুরু হয়। মুখ দিয়ে কথা পর্যন্ত বলতে পারেন নি। দেরি না করে তৎক্ষণাৎ চমেক হাসপাতালে ভর্তি হয়ে যান তিনি। হার্টে ব্লক ধরা পড়েছে বলে জানায় দায়িত্বরত চিকিৎসক। এভাবে বুকের ব্যাথা নিয়ে গত কয়েকদিন ধরে চমেক হাসপাতালে হৃদরোগ বিভাগে রোগী বেড়ে হয়েছে দ্বিগুণ। অন্য সময় ২৫ থেকে ২৮ জন রোগী ভর্তি হলেও রোববার (২ জুন) একদিনেই ৭০ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। এদিকে বাড়তি রোগীদের সেবা দিতে গিয়ে হিমসিম খেতে হচ্ছে সংশ্লিষ্টদের।
হৃদরোগ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ১ জুন ৫৫ জন, ২ জুন ৭০ জন, ২৭ জুন ২৭ জন, ২৮ জুন ২৭ জন, ২৯ জুন ৩৮ জন, ৩০ জুন ৪০ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন; যাদের অর্ধেকের বেশি নতুন রোগী। ভর্তি হওয়া রোগীদের অধিকাংশই বুকে ব্যথা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
চমেক হাসপাতালের হৃদরোগ বিভাগে শয্যা সংখ্যা রয়েছে ৮০ টি। সাধারণ সময়ে ১৫০ থেকে ২৫০ জন রোগী ভর্তি থাকে। কিন্ত ঈদের পর থেকে সেই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩০০-৩৫০ জনে। বিভাগটিতে প্রতিদিন ১৫ থেকে ২০ জনকে এনজিওগ্রাম, ৩ থেকে ৫ জনকে রিং পরানো হয়। দুটি ক্যাথল্যাব মেশিনের মধ্যে একটি আড়াই বছর ধরে অচল থাকায় কমসংখ্যক রোগী রিং পরানোর সেবা পেয়েছে। ফলে বেশিরভাগ রোগীকে বেসরকারি হাসপাতালে রিং পরানোর জন্য যেতে হচ্ছে। চমেক হাসপাতালে ২ থেকে ৫ হাজার টাকা দিয়ে সেবা নেওয়া যায়। কিন্তু বেসরকারিতে গুণতে হচ্ছে ৭ থেকে ১৫ হাজার টাকা।
সরেজমিন সোমবার (৩ জুলাই) দুপুর ১২টায় হৃদরোগ বিভাগে গিয়ে দেখা যায় এ, বি, সি, ডি ব্লকে রোগী ভর্তি। মূল ফটকের বাইরেও রোগীর স্বজনদের উপচেপড়া ভিড়। কেউ আগে থেকেই হৃদরোগে আক্রান্ত, আবার কেউ বন্ধের পর থেকে বুকে ব্যথা নিয়ে ভর্তি হয়েছেন। রোগী বাড়তি থাকায় কোনো চিকিৎসক এবং নার্সদের ডিউটি রুমে দেখা যায়নি। সকলকে ব্লকে গিয়ে দীর্ঘ সময় ধরে চিকিৎসা সেবা দিতে হচ্ছে।
ডেইজি রহমান নামে এক রোগী বলেন, ‘২ জুন বুক ব্যথা হওয়ায় হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি। চিকিৎসক কয়েকটা পরীক্ষা দিয়েছেন। তা করিয়েছি তবে রিপোর্ট এখনো পায়নি। এ ধরনের বুকে ব্যথা আমার আগে কখনো হয়নি। নিঃশ্বাস নিতে এবং কথা বলতেও কষ্ট হয়েছিলো। তাই দেরি না করে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি। স্যালাইন এবং কিছু ওষুধ খেতে দিয়েছে চিকিৎসক। এখন একটু ভালো আছি। রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পর বুঝতে পারবো হার্টের সমস্যা আছে কিনা।
ওষুধ না পাওয়া নিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের সব ওষুধ বাইরে থেকে কিনতে হচ্ছে। হাসপাতাল থেকে শুধু মাত্র স্যালইন দেওয়া হচ্ছে। তবে সেগুলোও সবাই পাচ্ছে না।’
রোগী বাড়ার বিষয়ে হৃদরোগ বিভাগের প্রধান প্রফেসর ডা. আশীষ দে বলেন, ‘মাত্রাতিরিক্ত মাংস খেলে রোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়। যেকোনো ভারী খাবার-দাবারের পর হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকিও তাই বেড়ে যায়। প্রচুর খাবার একসঙ্গে গেলে সেগুলোকে সামাল দেয়ার জন্য পাকস্থলীকে অনেক কাজ করতে হয়। আর বেশি কাজ মানেই বেশি শক্তি। এই অতিরিক্ত শক্তির জন্য রক্তও দরকার হয় বেশি। কিন্তু এই রক্ত সে পাবে কই? পাকস্থলীর মোটামুটি কাছের প্রতিবেশী যেহেতু হার্ট, তখন হার্টকে স্যাক্রিফাইস করতে হয় বেশ খানিকটা রক্ত। আর ঠিক তখনই ঘটতে পারে দুর্ঘটনা। খাওয়া নিয়ে সচেতন থাকার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘যাদের আগে থেকেই হার্টের সমস্যা আছে তাদের অবশ্যই মাত্রাতিরিক্ত মাংস খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। যাদের হার্টের সমস্যা নেই মাংসের পাশাপাশি তাদের বেশি পরিমাণে ফল ও সবজি খেতে হবে। এছাড়া হার্ট ভালো রাখতে প্রতিদিন ৩০ মিনিট ধরে ব্যায়াম করা প্রয়োজন। এছাড়া সুষম খাদ্য খাওয়াও জরুরি।