নিজস্ব প্রতিবেদক »
দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর শুরু হলো দুনিয়া মাতানো বিশ্বকাপ ফুটবল। পরিবার-পরিজনদের সাথে একসাথে বসে প্রিয় দলের খেলা দেখার মজাই অন্যরকম। ক্রীড়াজগতের এমন বড় উৎসবকে কেন্দ্র করে সাধারণত টেলিভিশন কেনার হিড়িক পড়ে। কিন্তু এইবার এ উৎসবকে কেন্দ্র করে এই খাতে চলছে মন্দা। বৈশ্বিক সংকট, বাজারে নিত্যপণ্যের অতিরিক্ত দামের কারণে এবার আশানুরূপ বেচাকেনা নেই বলে দাবি টিভি ব্যবসায়ীদের।
নগরীর ইলেকট্রনিক্স পণ্যের বিক্রেতারা বলছেন, ‘দেশে ডলার সংকট ও যন্ত্রাংশের দাম বেড়ে যাওয়ায় প্রায় সব ধরনের টিভির দাম ৮ থেকে ১০ শতাংশ বেড়েছে। অন্যদিকে নিম্ন ও নিম্নমধ্যবিত্ত ক্রেতারাও আছেন চাপে। এদিকে ফুটবল বিশ্বকাপকে কেন্দ্র করে বিক্রি কিছুটা বাড়বে বলে ব্যবসায়ীরা আশায় বুক বাঁধলেও তেমন ক্রেতা না থাকায় হতাশ তারা।
বাজারে ওয়ালটন, স্যামসাং, সনি, স্মার্ট, এলজি, মিনিস্টার, সিঙ্গার, ভিশন, যমুনা, কনকা ইত্যাদি ব্র্যান্ডের টিভি জনপ্রিয় এবং এসব ব্র্যান্ডের শো রুমের মালিকরা টিভি ব্যবসায় বিনিয়োগ করেছেন।
নগরীর শাহ আমানত মার্কেট, নিউমার্কেট, জিইসি মোড়, ওয়াসা ও আগ্রাবাদের বিভিন্ন টেলিভিশন ব্র্যান্ডের শোরুমে কথা বলে জানা যায়, এবারের বিশ্বকাপ উপলক্ষে ক্রেতাদের অনুপস্থিতি এবং বিক্রি আশানুরূপ না হওয়ায় কেউ খুশি নন। বিনিয়োগ করেও ব্যবসায়ীদের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়ছে।
সংশ্লিষ্টদের দাবি, সাধারণ মানুষরা পুরাতন টিভি সারানো বা সেকেন্ডহ্যান্ড টিভিতে বেশি ঝুঁকছেন। কারণ দুর্মূল্যের বাজারে মানুষের সংসার চালাতেই হিমশিম খেয়ে যাচ্ছেন। বিলাসী পণ্যে তাই কারও নজর নেই। তার মধ্যে অনলাইনভিত্তিক বিভিন্ন অ্যাপস, মোবাইলের মাধ্যমে খেলা দেখার সুযোগ পাওয়ায় দিন দিন মানুষ টিভির প্রতি আকর্ষণ হারাচ্ছে।
নগরীর শাহ আমানত মার্কেট, নিউ মার্কেট, আগ্রাবাদ ও ওয়াসার শো রুম ঘুরে দেখা যায়, বিশ্বকাপ উপলক্ষে মূল্যছাড় ও বিভিন্ন অফার দিচ্ছে অনেক ব্র্যান্ড। বিভিন্ন লোভনীয় অফার থাকলেও কোনভাবে ক্রেতাদের আকর্ষণ করাতে পারছে না ব্যবসায়ীরা।
নিউমার্কেটের সনি-স্মার্ট শো রুমের ইনচার্জ আল আমিন বলেন, ‘এক কথায় বলতে গেলে ব্যবসার অবস্থা আশানুরূপ না। তবে প্রতিদিনের তুলনায় বিক্রি কিছুটা বেড়েছে। বিশ্বকাপ উপলক্ষে আমরা যেভাবে আশা করেছিলাম, আশানুরূপ বিক্রি হচ্ছে না। অতীতে দেখেছি বিশ্বকাপের আসর শুরু হলে পণ্য বিক্রির হিড়িক পড়তো। কিন্তু এবার তা দেখছি না। গতবার বিশ্বকাপের এই সময়ে দিনে ৫ থেকে ৭টি টেলিভিশন বিক্রি করলেও এবার দিনে বিক্রি হচ্ছে দুটি।’
বিশ্বকাপ উপলক্ষে ক্রেতাদের টেলিভিশন কেনায় আগ্রহ কম হওয়ার কারণ কি এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আসলে বৈশ্বিক মন্দার একটা প্রভাব পড়েছে। সাধারণ মানুষ বা মধ্যবিত্ত মানুষ এখন চিন্তা করে মাসের খরচ কিভাবে সামাল দেবেন। আর এসব নিয়ে মানুষ যখন চিন্তা করে তখন সৌখিনতার বিষয়টি আর থাকে না।’
নিউমাকের্টের রোমান্স ইলেকট্রনিক্স এর ম্যানেজার পবন বিশ্বাস বলেন, ‘বর্তমানে টিভির বাজারে খুবই মন্দা যাচ্ছে। আজ (রোববার) সারাদিনে একটি টিভি বিক্রি করছি। বুধ ও বৃহস্পতিবার একটি টিভিও বিক্রি হয়নি। এমনিতে করোনার কারণে ব্যবসার অনেক লোকসান হয়েছে। তারপরও মনে করেছি বিশ্বকাপে প্রতিবারের মত এবারও ক্রেতা মিলবে। সেই আশায় ৩ লক্ষ টাকার টিভি দোকানে তুলেছি। কিন্তু ক্রেতার অনুপস্থিতি দেখে হতাশ হয়েছি।’
শাহ আমানত মার্কেটের আহমেদ সাফা ইলেকট্রনিক্সের পরিচালক মেসবাহ উদ্দিন বলেন, ‘টিভির দাম হঠাৎ বেড়েছে। যে টিভির দাম ১০ হাজার ছিল তা এখন ১২ থেকে ১৪ হাজার। দাম বাড়লে মানুষ কিভাবে কিনবে।’
টিভির দাম বাড়ার কারণ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আমরা বাড়তি কিনে আনছি। টিভির এমন দাম বাড়বে কখনো চিন্তাও করিনি। কেন বাড়ছে তাও জানি না। এখন বেশি দাম দিয়ে কিনতে হচ্ছে, কাজেই ক্রেতাদেরও বেশি দাম বলতে হচ্ছে।’
আগ্রাবাদ শেখ মুজিব রোডে ওয়ালটন শো-রুমে হালিশহর থেকে টিভি কিনতে আসা পারভিন আক্তার বলেন, ‘শাহ আমানত মার্কেট, আগ্রাবাদের বিভিন্ন শোরুমে দেখেছি। সব টিভির দাম বাড়তি। বাচ্চাদের জন্যই কিনতে আসা। এত দাম দিয়ে টিভি কিনে ফুটবল খেলা দেখা সম্ভব না। মোবাইলেই খেলা দেখবো।’