- মিরসরাইয়ে মাইক্রোবাসে ট্রেনের ধাক্কায় নিহত ১১
- পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন
- গেটম্যানের অবহেলার অভিযোগ
- মাইক্রোবাসটি ১ কিলোমিটার টেনে নিয়ে
নিজস্ব প্রতিনিধি, মিরসরাই ও হাটহাজারী »
মিরসরাইয়ে রেললাইন পার হওয়ার সময় মাইক্রোবাসে ট্রেনের ধাক্কায় ১১ জন যাত্রী নিহত হয়েছেন। শুক্রবার দুপুরে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেললাইনের খৈয়াছরা এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহতরা সবাই মাইক্রোবাস যাত্রী। এসময় আরো ৬ জন আহত হয়। আহতদের মধ্যে একজনের অবস্থা আশংকাজনক। আহতদের চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন । ঘটনার পর বিকালে গেটম্যান সাদ্দামকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফাজতে নিয়েছে চট্টগ্রাম রেলওয়ে পুলিশ।
হতাহত ব্যক্তিদের মধ্যে চালক ও তার সহকারী ছাড়া সবাই হাটহাজারীর ‘আরএনজে কোচিং সেন্টার’ নামের একটি প্রতিষ্ঠানের ছাত্র ও শিক্ষক। এসএসসি ২০২২ ব্যাচের শিক্ষার্থীদের বিদায় উপলক্ষে তারা মিরসরাইয়ের খৈয়াছড়া ঝরনায় বেড়াতে গিয়েছিলেন। ফেরার পথে তারা দুর্ঘটনায় পড়েন।
জানা গেছে, দুর্ঘটনার পর চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ছুটতে থাকে নিহত ও আহতদের স্বজনরা। সেখানে এক হৃদয় বিদায়ক পরিবেশ সৃষ্টি হয়।
নিহতরা হলো হাটহাজারী উপজেলার চিকনদণ্ডি ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের আবদুর আজিমের বাড়ির হাজী মোহাম্মদ ইউসুফের পুত্র মাইক্রোবাস চালক গোলাম মোস্তফা নিরু (২৬), মো. ইলিয়াছ ভুট্টুর পুত্র এসএসসি পরীক্ষার্থী মোহাম্মদ হাসান (১৬), ৮ নম্বর ওয়ার্ডের হাজী জালাল কোম্পানী বাড়ির আব্দুল হামিদের পুত্র শিক্ষক জিয়াউল হক সজীব (২২) , আজিজ মেম্বারের বাড়ির জানে আলমের পুত্র শিক্ষক ওয়াহিদুল আলম জিসান (২৩), ৬ নম্বর ওয়ার্ডের বজল কন্ট্রাক্টরের বাড়ির মোজাফফরের পুত্র মোসহাব আহমেদ হিসাম (১৬), ২ নম্বর ওয়ার্ডের শিকারপুর গ্রামের মোতাহের হোসেনের পুত্র শিক্ষক মোস্তফা মাসুদ রাকিব (১৯), ৮ নম্বর ওয়ার্ডের মজিদ আব্বাস চৌধুরী বাড়ির বাদশা চৌধুরীর পুত্র শিক্ষক রিদুয়ান চৌধুরী (২২), পারভেজের পুত্র শিক্ষার্থী সাগর, আব্দুল ওয়াদুদ মাস্টার বাড়ির আব্দুল মাবুদের পুত্র শিক্ষার্থী ইকবাল হোসেন মারুফ, আবদুস শুক্কুর লাইনম্যান কবির বাড়ির শিক্ষার্থী আয়াতুল ইসলাম আয়াত, খন্দকিয়া গ্রামের আবুল কাশেমের পুত্র সামিউল ইসলাম (১৮)।
আহতরা হলো আব্দুল আজিজ বাড়ির পারভেজের পুত্র তাসমির হাসান, মাইক্রোবাসের হেলপার তৌহিদ ইবনে শাওন (২০), মনসুর আলমের পুত্র মাহিম, সৈয়দুল আলমের পুত্র সৈকত, আবুল কাশেমের পুত্র ইমন, আব্দুর রহিমের পুত্র তানভীর হাসান হৃদয়।
এদিকে দুর্ঘটনার পরপরই পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে রেলওয়ে। রেলের বিভাগীয় পার্সোনেল অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) আনছার আলীকে আহ্বায়ক করে এ কমিটি গঠন করা হয় বলে নিশ্চিত করেছেন বিভাগীয় রেলওয়ে ব্যবস্থাপক মুহম্মদ আবুল কালাম চৌধুরী। এ ঘটনার চার ঘণ্টা পর শুক্রবার বিকাল ৫টায় ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলসড়কে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে।
রেল চলাচলের বিষয়টি নিশ্চিত করে বড়তাকিয়া স্টেশন মাস্টার মো. শামসুদ্দোহা বলেন, প্রায় ৩ ঘণ্টা চেষ্টা করেও মাইক্রোবাসটি সরাতে ব্যর্থ হয় মিরসরাই ও সীতাকু- ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের কর্মীরা। পরে চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ ফায়ার সার্ভিসের দুটি টিম এসে মাইক্রোবাসটি উদ্ধার করার পর পুনরায় রেল যোগাযোগ স্বাভাবিক হয়।
প্রত্যক্ষদর্শী এজেএম আলমগীর জানান, তিনি নামাজ পড়ার জন্য মসজিদে যাচ্ছিলেন। এসময় একটি বিকট শব্দ শুনে ছুটে এসে দেখেন একটি মাইক্রোবাসকে মহানগর প্রভাতী এক্সপ্রেস টেনে নিয়ে যাচ্ছে। খৈয়াছরা রেল গেট থেকে প্রায় ১ কিলোমিটার টেনে নিয়ে ট্রেনটি পূর্ব খৈয়াছরা এলাকায় থামে। এসময় ট্রেন ও মাইক্রোবাসের ভেতর থেকে চিৎকারের শব্দ শোনা যায়। পরে এলাকার লোকজনকে নিয়ে ১১ জন পর্যটকের লাশ উদ্ধার করেন। এসময় আহত হয় কমপক্ষে ৬ জন।
উদ্ধারের দায়িত্বে থাকা সীতাকু- ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড ডিফেন্সের সিনিয়র কর্মকর্তা নুরুল আলম দুলাল জানান, খবর পাওয়ার পর দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে ১১ জনের লাশ উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছেন। উদ্ধার কাজে মিরসরাই ও সীতাকু- ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট কাজ করেছে। পরে আগ্রাবাদের একটি টিম আসে উদ্ধার কাজে যোগ দেয়।
হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. শহিদুল আলম বলেন, খৈয়াছড়ায় ‘আর অ্যান্ড জে কোচিং সেন্টারের শিক্ষক ও ছাত্ররা সেখানে ঘুরতে গিয়েছিলেন। গাড়িতে কোচিং সেন্টারের ৪ জন শিক্ষক ছিলেন। বাকিরা শিক্ষার্থী ছিল।
চিকনদ-ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাসানুজ্জামান বাচ্চু বলেন, মিরসরাইয়ের ১২ নম্বর খৈয়াছড়া ঝরনায় যারা ঘুরতে গেছিলেন তারা শিক্ষক-শিক্ষার্থী। তাদের সবার বাড়ি আমান বাজার এলাকার খন্দকিয়া এলাকায়।
মিরসরাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কবির হোসেন জানান, ঘটনাস্থলে ১১ জন নিহত হয়েছে। এছাড়া আরো কয়েকজন আহত হয়েছে। আহতদের মধ্যে একজনের অবস্থা আশংকাজনক।
চট্টগ্রাম রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. নাজিম উদ্দিন জানান, শুক্রবার বিকালে গেটম্যান সাদ্দাম হোসেনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ হেফাজতে নেয়া হয়েছে।
মিরসরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিনহাজুর রহমান জানান, গেটম্যানের দায়িত্বে কোনো অবহেলা ছিল কিনা বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। নিহতরা সবাই পর্যটক বলে তিনি জানান।