সুপ্রভাত ডেস্ক »
বড়রা অনেকসময়ই আমাদের দাঁড়িয়ে পানি পান করতে মানা করেন। বিজ্ঞানও এই সংস্কারের সঙ্গে একমত। চলুন জেনে নিই কেন দাঁড়িয়ে পানি পান করতে মানা করেছেন বিজ্ঞানীরা।
পানি অপরিহার্য
তৃষ্ণা মেটাতে পানির বিকল্প কিছু নেই। আমাদের ডিহাইড্রেশন থেকে বাঁচাতে—এবং যেমনটা আমরা জানি, অনেক স্বাস্থ্য সমস্যা এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্ট অসুস্থতা (এমনকি ওজন সমস্যা) সেরে যায় নিয়মিত পানি খেলে। সুস্থ থাকতে হলে প্রতিদিন আমাদের অন্তত ৮ গ্লাস পানি পান করতে হবে।
কেন দাঁড়িয়ে পানি খাবেন না
আমাদের অভ্যাস হলো বাড়ি ফিরেই তড়িঘড়ি পানি পান করা, প্রায়ই দাঁড়িয়ে। যেহেতু আমাদের সবার বিশ্বাস যে পানি কোনো ক্ষতি করবে না, তাই আমরা কীভাবে পানি খাচ্ছি—বসে না দাঁড়িয়ে—তা নিয়ে খুব একটা ভাবি না। তবে মোদ্দা কথা হলো, দাঁড়িয়ে পানি খেলে আমরা প্রয়োজনীয় পুষ্টি থেকে বঞ্চিত হই। চমকে গেলেন? পানি ঠিকভাবে না খেলে তা আমাদের জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে এবং আমাদের স্বাস্থ্যঝুঁকিতে ফেলতে পারে।
আয়ুর্বেদ কী বলে
আয়ুর্বেদ শাস্ত্রমতে, আমাদের দেহ এমনভাবে ডিজাইন করা যেন বসা এবং দেহ নাড়াচাড়ার সময় আমরা সর্বোচ্চ সুবিধা পাই। আর এ কারণেই আমাদের বয়োজ্যেষ্ঠরা সবসময় বলে আসছেন বসা অবস্থায় খেতে এবং একইভাবে পানি পান করারও পরামর্শ দেন তারা।
ঠিকভাবে পান করুন
দেহকে ডিটক্সিফাই করতে এবং সব পুষ্টি ও খনিজ উপাদান গ্রহণের জন্য যথাযথ উপায়ে পানি পান করতে হবে। এটা মনে রাখা জরুরি যে, আমাদের দেহ প্রতিদিন প্রচুর জল হারায়, যদিও দেহের ৭০ শতাংশের বেশি জল। তাই সেই ঘাটতি পূরণ জরুরি এবং যথাযথভাবে পানি পান করতে হবে। আপনি যদি দাঁড়িয়ে পানি খান তাহলে এই ঘাটতি পূরণ সম্ভব নয়। ভাবছেন, কেন? শুনুন তাহলে।
ধীরে চলো নীতি
দাঁড়িয়ে পানি খেলে তা প্রয়োজনীয় যেসব অঙ্গে পৌঁছা দরকার সেখানে ঠিকমত পৌঁছায় না। এর ফলে যেসব দূষিত পদার্থ শরীর থেকে বের হয়ে যাওয়ার কথা তা কিডনি এবং ব্লাডারে জমা হয়।
স্নায়ুকে উস্কে দেবেন না
দাঁড়িয়ে পানি পান করলে প্রকৃতির সঙ্গে দেহের মেলবন্ধন ছিন্ন হয় এবং তা স্নায়ুতন্ত্রকে উস্কে দেয়। এভাবে পুষ্টির অপচয় হয় এবং দেহের উপর স্ট্রেস পড়ে।
এতে তৃষ্ণা মেটে না
এবং সবচেয়ে খারাপ ব্যাপার হলো, দাঁড়িয়ে পানি পান করলে সত্যিকার অর্থে তৃষ্ণা মেটে না। যেহেতু পানি সরাসরি শরীরে ঢুকে যায়, তাই প্রয়োজনীয় পুষ্টি ও ভিটামিন যকৃত এবং পরিপাক নালীতে পৌঁছায় না। দাঁড়িয়ে পানি পান করলে তা শরীরের বিভিন্ন অংশে দ্রুত চলে যায়। আর এতে ফুসফুস ও হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া ঝুঁকিতে পড়ে। এতে অক্সিজেনের মাত্রায়ও তারতম্য ঘটে।
পানি পানের ধরন গুরুত্বপূর্ণ
খাওয়ার পর পানি দেহের নিচের অংশে যাওয়ার সময় তা হাড় ও হাড়ের সংযোগস্থলকে ঝুঁকিতে ফেলতে পারে। সংযোগস্থলে ব্যাথা অনুভব ছাড়াও হাড় ক্ষয় হতে পারে। তাই শরীরে পানির গতি এবং কীভাবে তা পান করা হলো তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
বসে পানি খান
কাজেই বসে পানি পান করতে বলার পেছনে অত্যন্ত যৌক্তিক কারণ আছে। একইভাবে বলা হয়ে থাকে বসে খাবার খাওয়ার জন্য। আমাদের দেহের গড়ন এমন যে, আমরা যখন সোজা হয়ে বসি তখন সবচেয়ে বেশি স্বাস্থ্য সুবিধা পাই। বসে বোতল বা গ্লাস থেকে পানি পান করলে পুষ্টি উপাদান মস্তিষ্কে পৌঁছায় এবং এর কার্যকলাপকে জোরদার করে। এটি খাবার ভালোভাবে হজম হতে সাহায্য করে এবং পানি পানের পর নিজেকে ভরপুর মনে হয় না। এভাবে পানি পান করলে তা যথাযথভাবে দেহের সব অঙ্গে পৌঁছায়। দেহ থেকে টক্সিন বেরিয়ে যায় এবং সার্বিকভাবে স্বাস্থ্যের উন্নতি হয়।
সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া/ টিবিএস