সুপ্রভাত ডেস্ক »
দেশে পরিবেশবান্ধব বিদ্যুৎ বা ক্লিন এনার্জির ক্ষেত্র সম্প্রসারণের জন্য সরকারের আন্তরিক প্রচেষ্টার অংশ হিসাবে একটি ৬০ মেগাওয়াট বায়ু বিদ্যুৎ প্রকল্প আগামী জুনে উৎপাদনে যাচ্ছে। সরকারি সূত্র জানিয়েছে, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ইউএস-ডিকে গ্রিন এনার্জি (বিডি) লিমিটেড কক্সবাজারের খুরুশকুলে দেশের প্রথম ও বৃহত্তম বায়ু বিদ্যুৎ প্রকল্প স্থাপন করছে।
গত সপ্তাহে এই প্রতিবেদককে প্রকল্পস্থল পরিদর্শনকালে ব্যবস্থাপক (প্রকল্প ও পরিকল্পনা) প্রকৌশলী মুকিত আলম খান জানান, একটি চুক্তির আওতায় রাষ্ট্রায়ত্ত বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি) এখান থেকে বিদ্যুৎ কিনবে। তিনি বলেন, বায়ূ থেকে ৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য মোট ২২টি টারবাইন স্থাপন করা হবে, যার প্রতিটি টারবাইন ৩-মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করবে। আজ পর্যন্ত ইতোমধ্যে ১০টি টারবাইন স্থাপন করা হয়েছে। মুকিত আলম বলেন, ব্যাকআপের জন্য স্ট্যান্ডবাই হিসেবে দুটি টারবাইন বসানো হবে। এর জন্য ২০টিরও বেশি টারবাইনের প্রয়োজন হবে। এজন্য ১২০ মেগাওয়াট পর্যন্ত উৎপাদন ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রনালয়ের কাছে একটি প্রস্তাব জমা দেয়া হয়েছে।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বাসসকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার পর্যায়ক্রমে পরিবেশবান্ধব জ্বালানির অংশীদারিত্ব বাড়াতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হওয়ায়, প্রকল্পটি এই উৎসের মাধ্যমে নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদনের নতুন পথ দেখাচ্ছে। তিনি বলেন, নবায়নযোগ্য জ্বালানি ভবিষ্যতের বিদ্যুৎ উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। দেশের জ্বালানি মিশ্রণে নবায়নযোগ্য জ্বালানির অবদান ক্রমেই বাড়ছে। নসরুল হামিদ অবশ্য বলেন যে দেশের বিভিন্ন স্থানে আরও বায়ু বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করা হবে। প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী ও বিচক্ষণ নেতৃত্বের কারণে বাংলাদেশ এখন ১০০% বিদ্যুতায়নের আওতায় রয়েছে। আমরা সফলভাবে দুর্গম পাহাড় থেকে বিচ্ছিন্ন চর এলাকা পর্যন্ত সব মানুষের কাছে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়েছি’। খবর বাসসের।
২০২২ সালের ৩১ মার্চ নসরুল হামিদ এই প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। এই লক্ষ্যে পাওয়ার পারচেজ এগ্রিমেন্ট (পিপিএ) এবং ইমপ্লিমেন্টেশন এগ্রিমেন্ট (আইএ) করা হয়েছিল ২০১৪ সালের ১৫ মে।
কক্সবাজার ৬০ মেগাওয়াট উইন্ড পাওয়ার প্ল্যান্ট প্রজেক্টের ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর হেই ঝাও (ব্রেট) বলেন, ইউএস-ডিকে গ্রিন এনার্জি (বিডি) লিমিটেড প্ল্যান্টটির উন্নয়নে ১১৬.৫১ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করছে। তিনি বলেন, এই আধুনিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি ৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করবে, যার উৎপাদন ক্ষমতা ২০০ মেগাওয়াট পর্যন্ত বাড়ানোর সুযোগ থাকবে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের জন্য সরকারের সমন্বিত মহাপরিকল্পনার অংশ হিসেবে ইন্টিগ্রেটেড এনার্জি অ্যান্ড পাওয়ার মাস্টার প্ল্যানটি (আইইপিএমপি) এখন প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। বর্তমান নবায়নযোগ্য জ্বালানি ইনস্টল ক্ষমতা এখন ৯৫০.৭২ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। সরকার দেশের গ্রিডের আওতা দূরবর্তী গ্রামীণ জনগণের মৌলিক বিদ্যুত চাহিদা মেটাতে সোলার হোম সিস্টেম (এসএইচএস) কর্মসূচি শুরু করেছে। এই কর্মসূচির আওতায় জানুয়ারি ২০২৩ পর্যন্ত, যেখানে গ্রীড সম্প্রসারণের মাধ্যমে বিদ্যুতায়ন করা চ্যালেঞ্জিং এবং ব্যয়বহুল, সেসব প্রত্যন্ত অঞ্চলে প্রায় ৬.১ মিলিয়ন এসএইচএস ইনস্টল করা হয়েছে ।
এইভাবে কর্মসূচিগুলো ২০ মিলিয়নেরও বেশি লোককে অর্থাৎ দেশের মোট জনসংখ্যার ১২%, যারা আগে আলোর জন্য কেরোসিন বাতি ব্যবহার করতো, তাদের কাছে সৌর বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করেছে।