নিজস্ব প্রতিবেদক »
সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা আক্তার মিতু হত্যা মামলার চার্জ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দিয়েছেন আদালত। চার্জের আসামি বাবুল আক্তারসহ ৭ জনের বিচার শুরুর কথা বলা হলেও পলাতক থাকায় আদালতে উপস্থিত ছিলেন না কামরুল শিকদার মুসা ও খাইরুল ইসলাম কালু।
গতকাল সোমবার বিকেলে চট্টগ্রামের তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ মো. জসিম উদ্দিনের আদালত এ আদেশ দিয়েছেন। আদেশের পূর্বে অভিযোগ গঠন বিষয়ে উভয় পক্ষের শুনানি হয়। শুনানি শেষে বিকেল চারটায় আদেশের জন্য রেখেছিলেন। এ সময় বাবুল আক্তার, আনোয়ার হোসেন, শাহজাহান মিয়া ও মোতালেব মিয়া প্রকাশ ওয়াসিমকে আদালতে হাজির করা হয়। এ মামলার আসামিদের মধ্যে জামিনে থাকা এহতেশামুল হক ভোলা আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
এ সময় চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) প্রসিকিউশনের রুমে বিকেলে সাড়ে চারটা থেকে বিকেল সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত এক ঘণ্টা আইনজীবীদের সঙ্গে বাবুল আক্তারের বৈঠকের সুযোগ দিয়েছেন আদালত বলে জানিয়েছেন মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) মো. আবদুর রশিদ।
তিনি বলেন, ‘দীর্ঘদিন পরিকল্পনা করে স্ত্রী মাহমুদা আক্তার মিতুকে আসামি বাবুল আক্তার হত্যা করায়। বাবুল আক্তার যখন ঢাকায় ছিলেন তখন সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হয়েছিল। মিতুকে হত্যা করার জন্য কামরুল ইসলাম শিকদার মুছা, এহতেশামুল হক ভোলা ও মোতালেব মিয়া ওয়াসিম বিভিন্ন সময় বৈঠক করে। মিতুকে হত্যা করার জন্য কামরুল ইসলাম শিকদার মুছা, এহতেশামুল হক ভোলা ও মোতালেব মিয়া ওয়াসিম পূর্ব থেকে ভাড়া করে ও অস্ত্র সংগ্রহ করে হত্যাকা- বাস্তবায়ন করেন প্রধান আসামি বাবুল। পরে মিতু হত্যা ঘটনা ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে তড়িঘড়ি করতে বাবুল আক্তার মামলা করেছিল। বাবুল আক্তারের বিরুদ্ধে ৩০২, ২০১ এবং ১০৯ ধারায় চার্জ গঠন করা হয়েছে।
মামলার নথি থেকে জানা যায়, ২০১৬ সালের ৫ জুন নগরীর জিইসি মোড় এলাকায় খুন হন মাহমুদা খানম মিতু। গত বছরের ১৩ সেপ্টেম্বর বিকেলে মিতু হত্যা মামলায় সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারসহ ৭ জনকে আসামি করে আদালতে ২ হাজার ৮৪ পৃষ্ঠার চার্জশিট জমা দেয় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। এই অভিযোগপত্র গত বছরের ১০ অক্টোবর গ্রহণ করেন আদালত। চলতি বছরের ৩১ জানুয়ারি মিতু হত্যায় চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ ড. জেবুন্নেছা বেগমের আদালত বিচার শুরুর নির্দেশনা দিয়ে তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতে নথি পাঠানোর নির্দেশ দেন। ১১ জানুয়ারি সকালে চট্টগ্রামের অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ আবদুল হালিমের আদালত মামলাটি বিচারের জন্য প্রস্তুত হওয়ায় বদলি আদেশ দিয়েছিলেন। তবে ২০ ফেব্রুয়ারি আসামিদের আদালতে হাজির না করায় অভিযোগ গঠন পিছিয়েছিল।
গতকালের শুনানিতে পিপি মো. আবদুর রশিদ বলেন, ‘এক ঘটনায় দ্বিতীয় মামলা নিতে পারে কিনা আসামি পক্ষ প্রশ্ন তুলেছেন? হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্টে একাধিক রায় আছে দ্বিতীয় মামলা নিতে পারে। এ মামলায় অভিযোগপত্র দিয়েছে প্রথম মামলার ভিত্তিতে। কিভাবে পরিকল্পনা ও টাকা লেনদেন করে হত্যাকা-টি ঘটানো হয় তা দীর্ঘ সময়ের তদন্তে বের হয়েছে। আসামিপক্ষ যেসব তথ্য উপস্থাপন করেছেন তার বেশিরভাগ ট্রায়ালের বিষয়। এটা বিচারে প্রমাণ হবে।’
অন্যদিকে বাবুল আক্তারের আইনজীবী গোলাম মাওলা মুরাদ বলেন, আমরা এই মামলার অভিযোগ থেকে বাবুল আক্তারের ডিসচার্জ (অব্যাহতি) চেয়ে আবেদন করেছি। এর পক্ষে আমরা যুক্তি উপস্থাপন করেছি। আদালত বাবুল আক্তারের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দিয়েছেন। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) প্রসিকিউশনের রুমে বিকেলে সাড়ে চার থেকে বিকেলে সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত এক ঘণ্টা আইনজীবীদের সঙ্গে বাবুল আক্তারের বৈঠকের সুযোগ দেয়া হয়েছে। অভিযোগ গঠনের বিষয়ে বাবুল আক্তারের সঙ্গে কথা বলে উচ্চ আদালতে যাব কিনা সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। বাবুল আক্তারকে ফেনী কারাগারে রাখার একটি আবেদন করা হয়েছিল, আদালত আদেশে বিচারের সুবিধার জন্য চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে রাখার আদেশ দিয়েছেন। জেল কোড অনুযায়ী চিকিৎসাসহ সকল সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন।