সুপ্রভাত ডেস্ক »
বাংলাদেশ যাতে ২০৪১ সাল নাগাদ একটি উন্নত, সমৃদ্ধ ও উচ্চ আয়ের দেশে পরিণত হতে পারে, সেজন্য সহযোগিতা অব্যহত রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল-আইএমএফ। এ ঋণদাতা সংস্থার উপ ব্যবস্থাপনা পরিচালক অ্যান্তইনেত মনসিও সায়েহ সোমবার গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাতকালে এ আশ্বাস দেন বলে বাসসের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়।
আইএমএফ কর্মকর্তা বলেন, ২০৪১ সাল নাগাদ বাংলাদেশের একটি উন্নত, সমৃদ্ধ ও উচ্চ আয়ের দেশে উত্তরণ ঘটবে আশা করা যায়। এটা বাস্তবায়নে আইএমএফ বাংলাদেশকে সহযোগিতা অব্যহত রাখবে।
অ্যান্তইনেত মনসিও সায়েহ বলেন, আইএমএফ দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের উন্নয়ন সহযোগী এবং তিনি এ সম্পর্ককে আরও জোরদার করতে এসেছেন।
এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ ‘বেইল-আউটের’ জন্য কোনো ধরনের সহযোগিতা চায় না, বরং পূর্বপ্রস্তুতির জন্য বাংলাদেশ সহযোগিতা চেয়েছে। আমরা কোনো ধরনের বেল-আউট চাই না। আমাদের এই কর্মসূচি বেইল-আউট নয়,’ বলেন শেখ হাসিনা।
বৈঠকের পর প্রধানমন্ত্রীর স্পিচ রাইটার মো. নজরুল ইসলাম সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন বলে বাসসের প্রতিবেদনে জানানো হয়। আইএমএফ এর ডিএমডি বলেন, গোটা বিশ্ব কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছে, পাশাপাশি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে একটি কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যেতে হচ্ছে। খবর বিডিনিউজ।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের মত উদীয়মান অর্থনীতির দেশগুলোর মুদ্রাস্ফীতি সংক্রান্ত চাপ, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য-বৃদ্ধি ও বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ সংক্রান্ত নানা ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে। এসব সমস্যা মোকাবিলায় বাংলাদেশের প্রচেষ্টায় আইএমএফ পাশে থাকবে।
এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোভিড-১৯ অভিঘাত, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং এর প্রেক্ষিতে নিষেধাজ্ঞা ও পাল্টা নিষেধাজ্ঞার কারণে বাংলাদেশের উন্নয়নের গতি মন্থর হয়েছে। বাংলাদেশও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য মূল্য বৃদ্ধির কারণে কঠিন পরিস্থিতি অতিবাহিত করছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে নি¤œ আয়ের মানুষকে সহায়তা করতে সরকার সামাজিক সুরক্ষা জাল ও খাদ্য কর্মসূচি বর্ধিত করেছে।
শেখ হাসিনা বলেন, সরকার দারিদ্র দূরীকরণ ও খাদ্য নিরাপত্তার লক্ষ্যে বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মসূচি হাতে নেওয়ার পাশাপাশি হতদরিদ্র মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে সামাজিক সুরক্ষা জালের আওতা বর্ধিত করেছে এবং টিসিবি ও ভিজিএফ কার্ডের মাধ্যমে তাদের মাঝে খাদ্য ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী বিতরণের মত নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। বাংলাদেশ খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে পতিত জমিগুলোকে চাষাবাদের আওতায় নিয়ে এসেছে।
গত এক দশকে নারীর ক্ষমতায়ন, শিক্ষা, কৃষি ও ৬ শতাংশ ডিজিপি প্রবৃদ্ধিসহ বিভিন্ন খাতে সরকারের সাফল্যের তথ্যও বৈঠকে তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, চলমান বিশ্ব পরিস্থিতিতে অনেক উন্নত দেশের নি¤œ আয়ের মানুষও কঠিন সময় পার করছে।
বাসস লিখেছে, আইএমএফ এর ডিজিএম প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের ভূয়োসী প্রশংসা করেন।
প্রধানমন্ত্রীও তার সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মসূচি তুলে ধরে বলেন, এ ধরনের কর্মসূচির লক্ষ্য হচ্ছে- দারিদ্র দূরীকরণ ও দরিদ্র জনগোষ্ঠীর খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। ইয়াং বাংলা মুভমেন্টের মত উদ্যোগের মাধ্যমে আত্মনির্ভরশীল হতে উচ্ছুক তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
শেখ হাসিনা নারীর ক্ষমতায়ন ও নারী শিক্ষার জন্য তার সরকারের গৃহীত নানা পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে বলেন, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৬০ শতাংশ শিক্ষক নারী। এছাড়াও মাধ্যমিক পর্যায়ে মেয়ে ও ছেলেদের লিঙ্গভিত্তিক অনুপাত যথাক্রমে ৫৩ শতাংশ ও ৪৭ শতাংশ। সরকার আইসিটিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছে।
বৈঠকে আইএমএফ প্রতিনিধি দল প্রধানমন্ত্রীর কাছে দুটি আলোকচিত্র হস্তান্তর করে। ১৯৭২ সালের ১৭ অগাস্ট বাংলাদেশ আইএমএফ এর আর্টিকেল অব এগ্রিমেন্টে সই করার সময় ছবি দুটি তোলা হয়েছিল।
অন্যদের মধ্যে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা গওহর রিজভী, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার, জ্যেষ্ঠ অর্থ সচিব ফাতিমা ইয়াসমিন এবং ঢাকায় নিযুক্ত আইএমএফ এর স্থায়ী প্রতিনিধি জয়েন্দু দে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।