নিজস্ব প্রতিবেদক »
রমজানের দুই মাস আগে থেকেই বাড়তে শুরু করেছে আদা ও রসুনের দাম। গত এক বছরের ব্যবধানে প্রতিকেজি আদা ও রসুনের দাম বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ।
শনিবার নগরীর খাতুনগঞ্জ ও চাক্তাই বাজার ঘুরে দেখা যায়, পর্যাপ্ত পরিমাণ দেশীয় চাষের ও আমদানির আদা ও রসুন আড়তে রয়েছে। কিন্তু সে অনুযায়ী বাজারে দাম কমছে না। অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর বাজারে আদা ও রসুনের বাজারে তেমন ঘাটতি নেই। কিন্তু ব্যবসায়ীরা আমদানিতে খরচ বৃদ্ধি, বুকিং রেট, সরবরাহ খরচ বৃদ্ধির কারণে দাম কমানো যাচ্ছে না বলে দাবি করছে।
গতকাল খাতুনগঞ্জের আড়তে আমদানিকৃত রসুন বিক্রি হয়েছে ১৮০ থেকে ১৯৫ টাকা। যা খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ২২০ থেকে ২৪০ টাকার ওপরে। আর আমদানিকৃত আদা বিক্রি হয়েছে ১৬০ থেকে ১৮০ টাকা যা খুচরা বাজারে ২২০ থেকে ২৩০ টাকা পর্যন্ত। গতবছরের তুলনায় এ বছর বিক্রি হচ্ছে দ্বিগুণ দামে।
এদিকে জানা যায় পর্যাপ্ত যোগান ও সরবরাহ থাকার পরও কৃত্রিমসংকট দেখিয়ে রমজান ঘিরে এবারও ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট নতুন করে ফাঁদ পেতেছে। রমজান শুরুর দুই মাস আগে থেকে মসলার বাজারসহ নিত্যপণ্যের দাম নীরবে বাড়ানো হচ্ছে, যেন রমজানে পণ্যের দাম বেড়েছে-এমন অভিযোগ না ওঠে বলে দাবি ভোক্তা ও খুচরা ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে। তারা দুষছেন খাতুনগঞ্জ-চাক্তাইয়ের আড়তদারদের কারসাজিকে।
চাক্তাই এলাকার খুচরা ব্যবসায়ী মো. ফয়েজ উদ্দিন সওদাগর বলেন, গত বছর যে রসুন দাম ছিল ১১০ থেকে ১২৫ টাকা তা এখন আড়তদারেরা বিক্রি করছে ১৯৫ টাকার বেশি। আবার কেউ কেউ ২১০ টাকার বেশি দরে বিক্রি করছে। একই অবস্থা আদাতেও।
কোরবানিগঞ্জের ব্যবসায়ী মো. আলী বলেন, রমজানের দুইমাস আগেই নানা ইস্যু তৈরি করে খাতুনগঞ্জের আড়তদাররা প্রায় নিত্যপণ্যের দাম বাড়ায়। আর ক্রেতারাও রমজানের ২০ দিন আগে প্রয়োজনীয় পণ্য কিনে রাখে। সে সুযোগ কাজে লাগানোর চেষ্টা করে ব্যবসায়ীরা।
এদিকে বাজারে আসা ভোক্তারা জানান, বরাবরের মতো আসন্ন রমজানকে ঘিরে এবারও ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে নিত্যপণ্যের দাম বাড়াচ্ছে। শুধু আদা ও রসুন না, দুই মাসের ব্যবধানে সব ধরনের পণ্যের দাম বাড়ানো হয়েছে। এসব বিষয়ে প্রশাসনের মনিটরিং বাড়ানো প্রয়োজন।
কনজ্যুমার অ্যসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন সুপ্রভাতকে বলেন, ‘তদারকি সংস্থাগুলোর বাজার মনিটরিং নেই বললেই চলে। রমজান আসার এক থেকে দু’মাস আগে ব্যবসায়ীরা নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেয়। এ কারণে কঠোর মনিটরিং করে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।’
খাতুনগঞ্জের আড়তদারদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দেশীয় পর্যায়ে যে সকল আদা-রসুনের চাষ হয় তা পর্যাপ্ত নয়। তাই প্রতিবছর আমাদের নির্ভর করতে হয় আমদানির ওপর। কিন্তু আমদানি খরচ গত দুই বছরের চেয়ে বর্তমান রেট অনেক বেড়েছে। এছাড়া এলসি করতে ব্যাংকে বেশ ঝামেলা পোহাতে হয়।
চাক্তাইয়ের পেঁয়াজ আড়তদার আবুল বশর সওদাগর বলেন, বাজারে পেঁয়াজ, আদা ও রসুনের বুকিং দিতে বেশ ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। ৫০ লাখ টাকার বুকিং অতিরিক্ত ২০ লাখ টাকা ব্যাংকে রাখতে হচ্ছে। পরিবহন খরচও বেশ বাড়তি। ফলে গতবছরের তুলনায় চলতি বছর আদা ও রসুনের দাম এখনো দ্বিগুণ দরে বিক্রি করতে হচ্ছে।
চাক্তাই ব্যবসায়ী সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক মো. ফোরকান বলেন, ‘বাজারে পর্যাপ্ত আদা ও রসুন রয়েছে। হয়তো রমজানে কিছুটা দাম কমতে পারে।’
খাতুনগঞ্জ ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. ইদ্রিছ বলেন, ‘বাজারে যা আদা, রসুন ও পেঁয়াজ আছে, তা রমজানের চাহিদা অনুযায়ী অনেকটা কম। বিশেষ করে ব্যবসায়ীরা এলসি বুকিং করতে বেশ ঝামেলায় পড়ছে। ডলারের সংকট রয়েছে। তাছাড়া আমদানির এ সংকট না কাটালে মসলাজাত পণ্যের দাম বাড়তে পারে।’
রমজানের আগে কঠোর মনিটরিং
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ফয়েজ উল্যাহ বলেন, ‘অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে নিয়মিত বাজার তদারকি করা হচ্ছে। রমজান ঘিরে কঠোর তদারকি শুরু হবে। সিন্ডিকেট কারসাজিতে যেসব প্রতিষ্ঠান জড়িত থাকবে, তাদের কঠোর শাস্তির আওতায় আনা হবে।’
এদিকে কৃষি অধিদপ্তর ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যমতে গতবছরের উৎপাদন ও আমদানি অনুযায়ী বাজারে আদা ও রসুনে ঘাটতি থাকার কথা নয়। গত এক দশকের ব্যবধানে আদার চাহিদা পাঁচগুণ, রসুনের তিনগুণ বেড়েছে। বিপরীতে আদার উৎপাদন থেমে আছে প্রায় এক জায়গায়। রসুনের উৎপাদন কিছুটা বাড়লেও সেটা চাহিদার তুলনায় কম। এতে বাড়ছে আদা-রসুনের আমদানি নির্ভরতা। ডলার সংকটে বাড়ছে আমদানি খরচ।