রাজিব শর্মা »
ডলার-সংকটের কারণে দেশীয় বাজারে আমদানি কমেছে জিরার। গত এক বছরের ব্যবধানে আমদানির এই পণ্যের দাম খুচরা পর্যায়ে তিনগুণ ছাড়িয়েছে। বছরের ব্যবধানে বাজারে এ পণ্যের দাম বেড়েছে ৭৬০ টাকার বেশি। যা পূর্বের দামের চেয়ে ১৭৩ শতাংশের বেশি। গত বছর এ দিনে (২৬ জুলাই) খুচরা বাজারে প্রতি কেজি জিরা বিক্রি হয়েছিল ৪০০ থেকে ৪৪০ টাকায়। যা পাইকারি বাজারে বিক্রি হয়েছিল ৩৪০ টাকা থেকে ৩৭০ টাকা।
টিসিবি’র হিসাবমতে, এক মাসের ব্যবধানে জিরার দাম বেড়েছে প্রায় ১৭ শতাংশের বেশি। আর এক বছরের ব্যবধানে বেড়েছে ১৭৩ শতাংশ ছাড়িয়েছে আমদানির এ পণ্য।
নগরীর খাতুনগঞ্জ ও রেয়াজউদ্দিন বাজারের মসলার পাইকারি ও খুচরা বাজারে সরেজমিনে দেখা যায়, বাজারে ভারত ও ইরানের আমদানির জিরা পাওয়া যাচ্ছে। গতকাল পাইকারি বাজারে ভারতীয় জিরা বিক্রি হয়েছে ৯৫০ থেকে ৯৯০ টাকা যা খুচরা বাজারে ১১০০ টাকা থেকে ১২০০ টাকা ছাড়িয়েছে। অন্যটি ইরানি (যাকে অনেকে ব্যবসায়ীরা আফগানি জিরা বলে বিক্রি করছে) যা পাইকারি বাজারে ১ হাজার ৫০ টাকা থেকে ১ হাজার ১৪০ টাকা দরে বিক্রি করছে। কোরবানির ঈদের পর এই দুই জিরার দাম বেড়েছে কেজিতে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা পর্যন্ত। তাছাড়া আমদানি করা জিরা গুঁড়া করে বিক্রি করে দেশের বেশকিছু শিল্প প্রতিষ্ঠানসহ মসলা দোকানদার। তাদের দরে গুঁড়া জিরার দাম এখন প্রতি কেজি ১ হাজার ৬০০ থেকে ২ হাজার টাকা পর্যন্ত। গতবছর এদিনে তাদের জিরা গুঁড়ার দাম ছিল কেজিতে ৫৫০ টাকা থেকে ৬৫০ টাকা। যা একবছরের ব্যবধানে তিনগুণ বেড়েছে।
সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) এর হিসাবে, গত বছরের এ সময়ে বাজারে প্রতি কেজি জিরার দাম ছিল ৪০০ টাকা থেকে ৪৫০ টাকা। সেই জিরা গতকাল (বুধবার) বিক্রি হয়েছে ১১০০ টাকা থেকে ১২০০ টাকা। যা একমাস আগেও বিক্রি হয়েছিল ৯০০ টাকা থেকে ১০০০ টাকা। প্রতিষ্ঠানটির মতে এক মাসের ব্যবধানে জিরার দাম বেড়েছে প্রায় ১৭ শতাংশের বেশি। আর এক বছরের ব্যবধানে বেড়েছে ১৭৩ শতাংশ ছাড়িয়েছে আমদানির এ পণ্য।
এদিকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) এর তথ্য অনুযায়ী জানা যায়, গত চার বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম জিরা আমদানি হয়েছে বিদায়ী অর্থবছর ২০২২-২৩ সালে। এবছর জিরা আমদানি হয়েছে ৩২ হাজার ৯৩ টন। আর আগের অর্থবছরে (২০২১-২২) আমদানি হয়েছিল ৪০ হাজার ১৯৯ টন; অর্থাৎ গত এক বছরের ব্যবধানে জিরার আমদানি কমেছে ৮ হাজার ১০৬ টন। এর আগে ২০২০-২১ অর্থবছরে দেশে জিরা আমদানি হয়েছিল ৪১ হাজার ৬৪৬ টন। আর ২০১৯-২০ অর্থবছরে আমদানি হয়েছিল ৩৬ হাজার ৬১৪ টন।
খাতুনগঞ্জের মসলা আমদানিকারকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গতবছর থেকে দেশীয় বাজারে ডলার সংকটের কারনে জিরা আমদানি তেমন হয়নি। আন্তর্জাতিক বাজারেও জিরার দাম বেড়েছে। তাছাড়া এলসি খরচ ও ডলারের মূল্যবৃদ্ধির কারনে আমদানি করা জিরার দামও বেড়েছে। তাই আন্তর্জাতিক বাজারের সাথে দেশীর বাজারের খরচাদি সমন্বয় করে জিরার বর্তমান দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। যা হাজার ছাড়িয়েছে।
তবে জিরার বাজারকে নিয়ন্ত্রণ করছে খাতুনগঞ্জের বেশ কিছু অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট বলে মনে করেন মসলার খুচরা ব্যবসায়ীরা।
বকসিরহাটের বাবু সাহা নামের এক দোকানদার বলেন, জিরার বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে মসলার ব্যবসায়ীদের শক্তিশালী সিন্ডিকেট। আমদানি তো আর প্রতিদিন করে না। অথচ খাতুনগঞ্জের বাজারে প্রতিদিনই জিরার বাজার উঠানামা করে। এর মূলত কারণ ব্যবসায়ীদের বাণিজ্যিক অপকৌশল।
খাতুনগঞ্জের আরেক মসলা ব্যবসায়ী বলেন, জিরার বাজার এখন যা এখন স্থলবন্দরকেন্দ্রিক ব্যবসায়ীদের দখলে। তারা যেভাবে নির্ধারণ করছে সেভাবে বাজার নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে।
বকসিরহাটের মো. শাহ আলম সওদাগর বলেন, ৩০ কেজি ওজনের ১ বস্তা জিরার দাম বেড়েছে ১৫ থেকে ১৬ হাজারের বেশি। সরকার আমাদের মতো ছোট দোকানগুলো তদারকি করলেও বড় ব্যবসায়ীদের ক্ষেত্রে তদারকিতে অনীহা রয়েছে প্রশাসনের।