রাজিব শর্মা »
আমদানির পর সোমবার কাঁচা মরিচের দাম নেমেছিল কেজিতে ৩০০ টাকার ঘরে। এর দু’দিন পরেই গতকাল বুধবার থেকে আবারো অস্থির হয়ে উঠছে কাচাঁমরিচের বাজার। এতে আমদানি খরচ বাড়তি এবং বাজারে যোগান সংকটকে দায়ী করছেন আড়তদাররা। তবে তাদের কথা মানতে নারাজ খুচরা ব্যবসায়ীরা। তাদের দাবি, বাজারকে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে অসাধু পাইকার ও আড়তদাররা।
গতকাল বুধবার নগরীর রেয়াজউদ্দিন ও বকসিরহাট পাইকারি বাজারে আমদানির কাঁচা মরিচ বিক্রি হয়েছে কেজিপ্রতি ৪০০ টাকা থেকে ৪২০ টাকায়। আর খুচরা বাজারে তা বিক্রি হয়েছে ৫০০ টাকা থেকে ৫২০ টাকার উপরে। অথচ গত দুদিন ধরে আমদানির খবরে বাজারে মরিচ বিক্রি হয়েছিল কেজিতে ১৫০ টাকা থেকে ১৭০ টাকায়। যা দুইদনের ব্যবধানে বেড়েছে ৩০০ টাকা থেকে ৩৫০ টাকা।
এদিকে, মরিচের দাম অস্বাভাবিকভাবে দফায় দফায় বেড়ে যাওয়া নিয়ে ব্যবসায়ীদের রয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।
খুচরা ব্যবসায়ীদের দাবি, বাজারে পর্যাপ্ত আমদানি মরিচ রয়েছে। কিন্তু দেশীয় মরিচ সংকটের কারণে এতদিন পাইকারি বাজারগুলোতে চড়া ছিল। এর পেছনে মরিচ ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট জড়িত বলে মনে করছেন তারা।
বকসির হাটের খুচরা ব্যবসায়ী মো. রুবেল বলেন, ‘বাজারে পর্যাপ্ত আমদানির মরিচ রয়েছে। অসাধু পাইকারি আড়তদারেরা ব্যবসাকে নিয়ন্ত্রণ করছে। আমদানি মরিচ বাজারে আসার কথা শোনার সাথে সাথে বাজারে মরিচের দাম কমে গেল। আবার বাজারে আমদানির মরিচ আসলে তাও দখলে নিয়ে নতুন করে দর দিল আড়তদাররা। এতেই স্পষ্ট হচ্ছে যে কাঁচামরিচের বাজারে অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজি চলছে। এখন আমরা ৪০০ টাকায় কিনে এনে ৪৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি করলে প্রশাসন আমাদেরকে জরিমানা করবে। কিন্তু প্রশাসন আড়তদারদেরকে তদারকি করছে না। যার ফলে আড়তদারেরা তাদের ব্যবসাকে এক হাত করে নিয়েছেন।’
অন্যদিকে কাঁচামরিচের দাম বাড়ার কথা স্বীকার করছেন পাইকারি ব্যবসায়ীরাও। তারা বলেন, দেশে যে পরিমাণ কাঁচামরিচ আমদানি হয়েছে তা পর্যাপ্ত নয়। ভারতীয় বাজারে আমদানির মরিচ বেশ চড়া। এছাড়া অত্যধিক তাপমাত্রার কারণে দেশীয় ফলন তেমন ভালো না হওয়াতেই সরবরাহ কম থাকলেও আমদানি মরিচ দিয়ে লাগাম টানা যাচ্ছে না।
রেয়াজউদ্দিন বাজারের কাঁচামরিচ আড়তদার জাফর আহমদ বলেন, ‘বাজারের যোগান অনুযায়ে মরিচ সরবরাহ হয়নি। যার ফলে বাজারে সাময়িক সংকট সৃষ্টি হয়েছে। তাছাড়া দেশে অধিক তাপমাত্রায় মরিচের ফলন ভালো হয়নি। কয়েকটি জেলাতে মরিচ তুলতে আরো কিছু দিন সময় লাগবে। যা বলা যায় মরিচের বাজারের অস্থিরতা কাটতে সময় লাগেবে ১৫ থেকে ২০ দিন।’
বাজারে ভারতের আমদানি মরিচের দামবৃদ্ধির কারণ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘ভারতীয় বাজার থেকে যেসব মরিচ আমদানি করা হয়েছে তা ভারতীয় মুদ্রায় কেনা পড়েছে কেজিতে ১৮৫ রুপি। তার মধ্যে স্থলবন্দরের ট্যাক্স, পরিবহন খরচসহ বাজারে আসা পর্যন্ত আজকের (বুধবার) খরচ পড়েছে কেজিতে ৩৫০ টাকার উপরে। যার ফলে আমাদের পাইকারি বাজারে মরিচ বিক্রি করতে হয়েছে কেজিপ্রতি ৪০০ টাকা থেকে ৪২০ টাকায়।’
মো. শামীম নামের আরেক আড়তদারের ম্যানেজার বলেন, ‘আমদানির মরিচে কেনা খরচ বেশি পড়েছে। যার ফলে বেশি ধরে বিক্রি করতে হয়েছে। কিছু করার নেই। এখন দেশীয় মরিচ বের না হওয়া পর্যন্ত আমাদের অপেক্ষা করতে হবে।’
এদিকে দেশে কয়েক সপ্তাহ ধরে কাঁচা মরিচের দামে অস্থিরতা চলছে। ঈদের আগে হঠাৎ কাঁচা মরিচের অস্বাভাবিক দাম বেড়ে যাওয়ায় ২৫ জুন আমদানির অনুমতি দেয় সরকার। তখন দাম কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসে। এরপর ঈদের ছুটিতে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ থাকায় বাজার অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছিল। পরে গত রোববার থেকে আবারও মরিচ আমদানি শুরু হয়েছে। তাতে দাম কিছুটা কমলেও দুদিন পর বাজারে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা যায়।
অন্যদিকে মরিচের অস্বাভাবিক দাম বেড়ে যাওয়ার ফলে সোমবার সারাদেশে অভিযান চালিয়েছেন ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। সংস্থাটির তথ্যমতে ঐদিনে সারাদেশে ৫৩টি বাজারে ১৪৮টি প্রতিষ্ঠানকে ৩ লাখ ৩৯ হাজার ২০০ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এদিন রেয়াজউদ্দিন বাজারের তিনটি মরিচের আড়তে ২৪ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।