নিজস্ব প্রতিবেদক »
সারা দেশে বার্ন চিকিৎসা সম্প্রসারণে সমন্বয়কের দায়িত্বে থাকা ডা. সামন্ত লাল বলেন, ‘আমার চট্টগ্রামের প্রতি আমার একটা আলাদা সফট কর্নার রয়েছে। কারণ আমি এই মেডিক্যাল কলেজের ছাত্র। এখানে একটি বার্ন ইউনিট করতে প্রায় ১২ বছর ধরে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। অবশেষে স্বপ্ন সার্থক হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অগ্রাধিকার প্রকল্প এটি। তিনি কিছুদিন আগেও এই প্রকল্পের কাজ শুরু করার কথা বলেছেন।
প্রকল্পটি নিয়ে আগামী সপ্তাহে মন্ত্রণালয়ের সাথে একটি জরুরি সভা হবে। আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে কাঠামো নির্মাণের কাজ শুরু হওয়ার সম্ভাবনা বেশি রয়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার চমেক হাসপাতালের প্রস্তাবিত বার্ন ইউনিটের গোঁয়াছি বাগান এলাকা পরিদর্শনের সময় তিনি এসব কথা বলেন। এর আগে, সকাল ১১ টার দিকে হাসপাতালের কনফারেন্স রুমে একটি মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। যেখানে চীনা প্রতিনিধির ৫ সদস্য উপস্থিত ছিলেন।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নে তিনি আরও বলেন, আশা করি ২০২৫ সালের মধ্যে একটি ভালো কিছু পেতে চলেছি। এও আশা করি, আমার জীবদ্দশায় এই প্রকল্পটি দেখে যেতে পারবো। চট্টগ্রামের জন্য এটি একটি বিরাট স্বপ্ন। রোগীদের আর ঢাকামুখী হতে হবে না।
চীনা প্রতিনিধির পক্ষ থেকে লিউ বি বলেন, চট্টগ্রামে বার্ন ইউনিট হচ্ছে। প্রায় সকল আনুষ্ঠানিকতা সম্পূর্ণ। ডিজাইন, ইন্সট্রুমেন্ট, ইকুইপমেন্ট ও ফার্নিচার লিস্ট চূড়ান্ত পর্যায়ে। ডিপিপি অনুমোদন পেলেই চলতি মাসে ফার্নিচার ইকুইপমেন্ট যাবে।
চমেক হাসপাতালের পরিচালকের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তিনি আরো বলেন, খুব আন্তরিকতার সাথে তিনি (পরিচালক) বিষয়টি দেখছেন। প্রথম প্রথম এই জায়গায় অনেক স্থাপনা ছিলো। কিন্ত তা এখন নেই। সমস্ত কিছু পরিষ্কার করে অবকাঠামোর নির্মাণের জন্য তৈরি করে রেখেছেন তিনি। তার জন্য আমরা দ্রত কাজ শুরু করতে পারছি’ ।
চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহসান বলেন, বার্ন ইউনিট হচ্ছে চীনা অর্থায়নে। অর্থাৎ তারা হাসপাতালটির বিল্ডিং, মেশিনারি এবং ফার্নিচার দেবে। ওষুধ ও জনবল আমাদের দিতে হবে। তার জন্য ইতিমধ্যে জনবল কত লাগবে, ওষুধ কি লাগবে তার তালিকা উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) পাঠিয়েছি। আশা করছি এটা দ্রত এপ্রুভ হয়ে যাবে। তারপরই মূল অবকাঠামোর কাজ শুরু হবে। আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির মধ্যে হতে পারে।
তিনি আরও বলেন, এই প্রকল্পের জন্য চীন ১২০ কোটি টাকা অনুদান দিচ্ছেন। ডিপিপি অনুমোদন পেলেই তারা আগামী বছরের ফেব্রয়ারি নাগাদ কাজ শুরু করতে পারেন। আশা করি ২০২৫ সালের মধ্যে হাসপাতালটি পাবো।’
সামান্য পরিবর্তন এসেছে নকশার
চমেক হাসপাতালে পেছনে গোঁয়াছি বাগান এলাকায় প্রায় এক একর জায়গায় নির্মাণ হবে বার্ন ইউনিট। প্রকল্পটিতে থাকবে ১৫০ শয্যা। তার মধ্যে ২০টি আইসিইউ, শিশুদের জন্য ৫টি আইসিইউ, এইচডিইউ ২৫টি, অত্যাধুনিক অপারেশন থিয়েটার করা হবে ২টি। রোগী আনা নেয়ার সুবিধার জন্য তিনটি রাস্তা বানানো হবে। চট্টেশ^রী রোডের দিক থেকে একটি রাস্তা হবে। সেটি হবে বার্ন হাসপাতালের প্রধান রাস্তা। চমেক হাসপাতালের পেছনে ছাত্র হোস্টেলের দিক থেকে আসবে আরও একটি রাস্তা। সর্বশেষ রাস্তাটি হবে মিজান হোস্টেলের দিক দিয়ে। সেখানে মাঝখানে পাহাড় থাকায় তা ঘুরিয়ে ওয়ার সিমেট্রি হয়ে আনা হবে। তবে হাসপাতালের প্রধান ফটক আগে পশ্চিমমুখী করার কথা ছিলো, তা পরিবর্তন করে দক্ষিণমুখী করা হয়েছে। এছাড়া পুরো বিল্ডিংটি গতবার ছিলো ৯ হাজার স্কয়ার মিটার। বর্তমানে তা বাড়িয়ে ৯ হাজার ৩০০ স্কয়ার মিটার করা হয়েছে।
হাসপাতাল ৬তলা ভবন করা হবে। প্রথম তলায় থাকবে ইর্মাজেন্সি ওয়ার্ড এবং ওপিডি, দ্বিতীয় তলায় তিনটি ওটি (অপারেশন থিয়েটার) এবং তলায় নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ), তৃতীয় তলায় পুরোটা হাই ডিপেন্সি ইউনিট (এইচডিইউ), ৪র্থ এবং ৫ম ওয়ার্ড, ৬ষ্ঠ তলায় ওয়ার্ড এবং অফিস করার কথা রয়েছে।