নিজস্ব প্রতিবেদক »
বিদ্যুতের প্রিপেইড মিটার নিয়ে গ্রাহকের অভিযোগের শেষ নেই। কারও মিটার লক হচ্ছে, কারও নষ্ট হচ্ছে মিটারের ব্যাটারি আবার কারও মিটার বাণিজ্যিক হয়ে যায়। প্রতিটি সমস্যা সমাধানে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) গ্রাহক সেবা বিনামূল্যে থাকার পরও টাকা ছাড়া বিদ্যুৎহীন থাকছে গ্রাহকের ঘর। এ বিষয়গুলো সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জানা থাকলেও দায় এড়াচ্ছে তারা। এমনকি কোনো অভিযোগও খতিয়ে দেখছে না সংস্থাটি। ফলে গ্রাহকের ভোগান্তির শেষ নেই।
চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মাচ পর্যন্ত প্রতি মাসে বিদ্যুতের দাম বেড়েছে। ফলে প্রতি মাসে গ্রাহককে ২২০ সংখ্যা মিটারে ইনপুট করতে হচ্ছে। বিদ্যুতের বাড়তি দাম সম্বনয় করতে এ ২২০ সংখ্যার ডিজিট মিটারে ইনপুট দিতে হচ্ছে প্রতিমাসে। এতে সব-শ্রেণির মানুষ ভোগান্তিতে পড়েছে। কেউ ভুল করছেন, অনেক সময় সফটওয়্যারের সমস্যায় ইনপুট হচ্ছে না। সহজেই এ সমস্যার সমাধান মিলছে না। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ‘ফেসবুকে প্রিপেইড মিটার নামে একটি গ্রুপে’ প্রতিদিন অনেক মানুষ জানতে চাচ্ছেন কিভাবে এসব সমস্যার সমাধান পাবেন। কার ডিজিট ভুল দেখাচ্ছে, কারও আবার মিটার লক হয়ে যাচ্ছে। টাকা রিচার্জ করতে পারছেন না।
নগরজুড়ে প্রিপেইড মিটারের নানা সমস্যা খুঁজতে একে খান ও জিমেনেশিয়াম বিদ্যুৎ অফিসে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, মিটারের ভিন্ন সমস্যার জন্য রয়েছে ভিন্ন অলিখিত দর। সরাসরি বিদ্যুৎ অফিসে গিয়ে কেউ কেউ এ সেবা বিনামূল্যে পেলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে গ্রাহকদের গুনতে হচ্ছে বাড়তি টাকা। মিটারের লক খুলতে লাগে ৩০০ টাকা, মিটারের ব্যাটারি পাল্টাতে লাগে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা। তবে মিটার বাণিজ্যিক হলে সেক্ষত্রে সফটওয়ারে কোনো কিছু করার থাকে না। তাই নতুন মিটার লাগাতে বাধ্য হচ্ছেন গ্রাহকরা। এতে গ্রাহকদের গুণতে হচ্ছে সাড়ে সাত হাজার টাকা।
এ নিয়ে কথা হয় একে খান এলাকার দীপায়ন নামের এক ইলেকট্রিক মিস্ত্রীর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘প্রতিদিন কম করে হলেও চার-পাঁচজন আমাকে কল দিয়ে মিটার লক হওয়ার বিষয় জানান। আমি সমাধান করে দিয়ে আসি। এজন্য বিদ্যুৎ অফিসের স্টাফকে দেড়শ থেকে দুইশ টাকা দিই। বাকি টাকা আমরা নিই। ব্যাটারিগুলো মার্কেটে যদি বিক্রি হতো, আমরা সেখান থেকে কিনতে পারতাম।’
পাথরঘাটার এক গ্রাহক তার মিটার বাণিজ্যিক হওয়া নিয়ে যোগাযোগ করেন জিমেনেশিয়ামের বিদ্যুৎ অফিসে। সেখানে তিনি প্রিপেইড মিটারের সমস্যা নিয়ে কথা বলেন মো. আনোয়ারের সঙ্গে। মিটার ঠিক করতে তাকে দেওয়া হয় দুইটি অপশন। একটি হলো আবাসিক মিটার বাণিজ্যিকিকরণ করতে হবে এবং অন্যটি হলো মিটার পাল্টে ফেলা। মিটার পাল্টাতে হলে গ্রাহককে কিনতে হবে নতুন একটি মিটার। গ্রাহকটি এ মিটার সংগ্রহ করে খুলশির একটি অফিস থেকে। মিটারটি সংগ্রহ করতে তাকে গুনতে হয় ৭ হাজার ৫০০ টাকা।
এসব তথ্য জানিয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঐ গ্রাহক বলেন, ‘আমরা সাধারণ মানুষ। এতো কিছু বুঝি না। বিদ্যুতের দাম বাড়লে আমাদের থেকে বেশি টাকা কাটবে, কমলে কম টাকা কাটবে। কিন্তু মিটারে টাকা ঢুকাতে ২২০ সংখ্যার টোকেন দিয়েছে। পরপর তিনমাস এভাবে রিচার্জ করেছি। শেষে এসে কি ভুল হয়েছে তা বুঝতে পারছি না। এখন মিটার পাল্টাতে হচ্ছে। এজন্য আমাকে মিটার কিনতে হয়েছে ৭ হাজার ৫০০ টাকা দিয়ে। আবার মিটার যে বসাতে এসেছে, তাকে দিতে হয়েছে ৫০০ টাকা। এভাবে হলে আমরা কিভাবে কি করবো?’
এ সংকট ও সমস্যা নিয়ে কথা হয় পিডিবি চট্টগ্রামের প্রধান প্রকৌশলী মো. রেজাউল করিমের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘গ্রাহকরা প্রতিমাসের বিদ্যুৎ বিল রিচার্জের সময় মিটার রেন্ট দিয়ে থাকেন। এ মিটারের যত সমস্যা হয়, সব সমস্যার সমাধান বিনামূল্যে রাখা হয়েছে। গ্রাহকরা বিদ্যুৎ অফিসে গিয়ে একটি আবেদন করে তার সমস্যা সমাধান করতে পারে। বিদ্যুৎ অফিসের কেউ গ্রাহকদের হয়রানি করার কথা নয়।’
মিটার লক হওয়া নিয়ে জানুয়ারি থেকে কোনো ধরনের কমপ্লেইন পেয়েছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি তা স্বীকার করেন। তবে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা এখনো কোনো অভিযোগ ওভাবে খতিয়ে দেখিনি। তবে আমাদের নজরে আসলে অবশ্য তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবো।’