কক্সবাজারের পরিবেশ-প্রতিবেশ রক্ষা
প্রাণবৈচিত্র্য, সাগর, নদী, খাল, পাহাড়, বনসম্পদ সবকিছু মিলিয়ে বিশ্বের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অনন্য আধার কক্সবাজার। অপরিকল্পিত উন্নয়নের কারণে বিশ্বের দীর্ঘতম নিরবচ্ছিন্ন সমুদ্র সৈকতের জেলা কক্সবাজার আজ তার প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য ও চরিত্র হারাচ্ছে।
গত বৃহস্পতিবার কক্সবাজারে এক সেমিনারে বিষয়গুলো উঠে আসে। ‘বিপর্যস্ত কক্সবাজারের পরিবেশ ও প্রতিবেশ রক্ষায় করণীয় নির্ধারণ’ শীর্ষক সেমিনারটি যৌথভাবে আয়োজন করে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা), পরিবেশ অধিদপ্তর, দৈনিক সমকাল, নিজেরা করি, এএলআরডি, মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন ও ইয়েস।
সেমিনারে বক্তারা বলেন, অপরিকল্পিতভাবে অবকাঠামোর কারণে কক্সবাজার ক্রমশ তার রূপ-মাধুর্য হারাচ্ছে। কক্সবাজার এখন বিপর্যস্ত। কীভাবে বিপর্যয় থেকে কক্সবাজারকে রক্ষা করা যায়, সেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় এসেছে। সে ক্ষেত্রে সবাইকে এক জায়গায় এসে কাজ করতে হবে। কারা কক্সবাজারকে বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দিচ্ছে, তাদের চিহ্নিত করা না গেলে পাহাড়, নদী-খালবিল, প্যারাবন কিছুই রক্ষা করা যাবে না।
নানাভাবে কক্সবাজার ধ্বংস হচ্ছে। ভূগর্ভস্থ পানির স্তর দিন দিন নিচে নেমে যাচ্ছে। নলকূপে লোনাপানি আসছে। দুই হাজার অবৈধ ডাম্পারে পাহাড় কাটা হচ্ছে। খাল-নদীর বালু পাচার হচ্ছে। বাঁকখালী নদীর প্যারাবন উজাড় করে ঘরবাড়ি ও অবকাঠামো হচ্ছে। সেখানে ফেলা হচ্ছে শহরের বর্জ্য-ময়লা আবর্জনা। সৈকতের ওপর অপরিকল্পিতভাবে হোটেল-মোটেল হয়ে গেছে। কী করে হয়েছে, তার জবাবদিহি নেই। সমন্বয়ের বিরাট ঘাটতি রয়েছে।
বনভূমি ধ্বংস করে রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবির গড়ে তোলায় হাতির করিডর নষ্ট হয়েছে। শহরের ৫১ একরের পাহাড় দখল করে সরকারি কর্মচারীদের আবাসন প্রকল্প হয়। উচ্চ আদালতের রায় থাকা সত্ত্বেও এসব স্থাপনা উচ্ছেদ হয় না।
চকরিয়ার সুন্দরবন এখন নেই, চিংড়ি উৎপাদনেও ধস নেমেছে। নানাভাবে সেন্ট মার্টিনকে ধ্বংস করা হচ্ছে। তামাক চাষ করে ফসলি জমি নষ্ট করা হচ্ছে। সৈকতের ওপর অপরিকল্পিতভাবে হোটেল-মোটেল হয়ে গেছে। কী করে হয়েছে, তার জবাবদিহিতা নেই। সমন্বয়ের বিরাট ঘাটতি রয়েছে। প্রতিবেশ সংকটাপন্ন এলাকায় অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ এবং দখল বন্ধে সমন্বয়হীনতার অভাব রয়েছে।
কক্সবাজার একটি পরিবেশ সংবেদনশীল এলাকা। তাই এখানে উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে অতি সতর্কতার সঙ্গে। কক্সবাজারে কোনো উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণের আগে পরিবেশের কথা বিবেচনায় রাখতে হবে।
কক্সবাজার একটি অপরিকল্পিত শহর। কক্সবাজারকে রক্ষায় সবাইকে সম্মিলিতভাবে চেষ্টা করতে হবে, চিন্তা করতে হবে। এখানে সমন্বয়ের অভাব রয়েছে। পর্যটকদের জন্য গাইডলাইন তৈরি করতে হবে। সেন্টমার্টিন দ্বীপকে রক্ষা করতে হলে সেখানকার জমি বেচাকেনায় কঠিন শর্ত আরোপ করতে হবে।
কক্সবাজার ও সেন্টমার্টিন দ্বীপকে বর্তমান বিপন্ন অবস্থা থেকে রক্ষা করতে হলে সময়োপযোগী পরিবেশবান্ধব মহাপরিকল্পনা নেওয়া জরুরি এবং কক্সবাজারের পরিবেশ-প্রতিবেশ রক্ষার জন্য রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও অঙ্গীকার প্রয়োজন।