‘ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে স্বাধীনতা যুদ্ধ এবং প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রামে তরুণরাই অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। তারুণ্যের চোখে মুখে স্বাধীনতার স্বপ্ন ছিল বলেই পেয়েছি স্বাধীন বাংলাদেশ। এ প্রজন্মের তরুণরা ৭১এর মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেননি, তাই বলে দেশের প্রতি ভালোবাসা কোন অংশে কম নয়, দেশকে জানতে বুঝতে শিখেছেন প্রতিনিয়ত। তারাই আগামী দিনের উজ্জ্বল নক্ষত্র, তাদের নেতৃত্বে এগিয়ে যাবে আগামীর বাংলাদেশ।’
গতকাল চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে সৃজনশীল প্রকাশনা পরিষদ ও নাগরিক সমাজের সহযোগিতায় বঙ্গবন্ধুকে নিবেদিত অমর একুশে বই মেলার ষষ্ঠ দিনে তারুণ্যের উৎসবের আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রাবন্ধিক ও কথা সাহিত্যিক আনিসুল হক এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, তরুণদের মাঝে লুকিয়ে আছে অমিত সম্ভাবনা। স্বপ্নবাজ তরুণদের চোখে মুখে সব স্বপ্নের সূচনা ধরা দিয়েছে আলোর ঝলকানি হয়ে। তারা তাদের জ্ঞানকে শাণিত করে মেধা ও উদ্ভাবনী শক্তির স্ফুরণ ঘটিয়ে নতুন আবিষ্কারের মাধ্যমে দেশ ও মানবতার কল্যাণ সাধন করছেন। সৃজনশীল কর্মকাণ্ডে তাদের বেশি বেশি অংশগ্রহণের সুযোগ অবারিত করে দিতে হবে, তাহলে তারা যে কোন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার মাধ্যমে সামনে এগিয়ে যাওয়ার শক্তি ও সামর্থ্য অর্জন করবে। তারুণদের শৌর্য বীর্য সাহস ও উদ্দীপনায় পৃথিবীতে আসছে নিত্য পরিবর্তন। তাই তিনি তরুণদের জ্ঞান অর্জনের জন্য পড়ার সাথে সাথে চিন্তা ও লেখার চর্চা চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান।
দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান’র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বইমেলা কমিটির আহ্বায়ক ও কাউন্সিলর ড. নিছার উদ্দিন আহমেদ মঞ্জু। প্রধান বক্তা বীর মুক্তিযোদ্ধা ইন্দু নন্দন দত্ত, আলোচক চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী ফরিদ, ফিল্ড হাসপাতালের প্রতিষ্ঠাতা ডা. বিদ্যুৎ বড়ুয়া, সাংস্কৃতিক সংগঠক নজরুল করিম চৌধুরী। আরও উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. শিরিণ আকতার, সাংবাদিক শুকলাল দাশ, অধ্যাপক সামশুদ্দীন শিশির।
সভাপতির বক্তব্যে দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান বলেন, তরুণ প্রজন্ম আমাদের সম্পদ। এই তরুণ সমাজই উন্নত সমৃদ্ধ আধুনিকায়ন বাংলাদেশ গড়ে তুলবে। তাই তরুণ সমাজকে দেশ প্রেমে জাগ্রত হতে হবে। তিনি বলেন, আমরা বাঙালিরা উৎসবের জন্য অধীর হয়ে থাকি। তাই শোকের দিন একুশে ফেব্রুয়ারিকে একটা উদ্দীপনের দিন করে ফেলেছি। তরুণরা যেভাবে উৎসব আবিষ্কার বা পুনরাবিষ্কার করছেন তার মূলে হলো তারুণ্যের স্বাভাবিক প্রাণশক্তি ও উদ্ভাবনী ক্ষমতা। তারুণ্যের এই মেধাশক্তিকে মানুষের জন্য পরিবর্তন, সাম্য ও মানবিকতা প্রতিষ্ঠার জন্য যারা ব্যবহার করবেন তারা টিকে থাকবেন, তারা প্রতিবছর তারুণ্যের উৎসবে যোগ দিতে পারবেন।
তিনি আরো বলেন, বর্তমান ডিজিটাল যুগে তরুণরা বই পড়া থেকে অনেক দূরে চলে গেছেন তাই পড়ুয়াদের সংখ্যা বাড়লেই সমাজ থেকে অন্ধকার দূর হবে। তিনি বলেন, যেকোনো সংকট কালে তরুণরাই জাতিকে পথ দেখিয়েছে। তাদের সাহসী ও সময়োপযোগী কর্মকাণ্ডের ফলেই দেশের অগ্রগতি ত্বরান্বিত হচ্ছে। তিনি বইমেলায় আগত কিশোর-কিশোরী ও তরুণদের হাতে বই দিতে এবং বই পড়তে উৎসাহ প্রদানের জন্য অভিভাবকদের প্রতি আহ্বান জানান।
বইমেলা কমিটির আহ্বায়ক ও কাউন্সিলর ড. নিছার উদ্দিন আহমেদ মঞ্জু বলেন, এ ধরনের বই মেলা পাঠকদের শূন্যতা পূরুণ করে প্রাণের সঞ্চার ঘটিয়েছে তারুণ্যের উচ্ছ্বাস। বইয়ের প্রতি এই তরুণ সমাজ আগহী হলে তারাই আগামীর বাংলাদেশের নেতৃত্ব নিতে সামর্থ হবে। এই তরুণেরা পারবে বঙ্গবন্ধুর সোনার গড়তে। এখন আমাদের দায়িত্ব তরুণ সমাজকে নেতৃত্ব নিতে তৈরি করা।
অনুষ্ঠানে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে আবৃত্তি পরিবেশন করে বোধন আবৃত্তি পরিষদ, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশ নেয় সরকারী কমার্স কলেজ ও কলেজিয়েট স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীবৃন্দ। অনুষ্ঠান শেষে লেখক আড্ডায় অংশ নেন কথা সাহিত্যিক আনিসুল হক। আড্ডা সঞ্চালনায় ছিলেন ড. আদনান মান্নান। বিজ্ঞপ্তি